চসিক নির্বাচন: ১৯ শতাংশ ভোটেই মেয়র!
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার ভোট পড়েছে মাত্র ২২ শতাংশ। এরমধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে মাত্র ১৯ শতাংশ ভোটেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এটা ছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এপর্যন্ত সর্বনিম্ম ভোটের রেকর্ড।
বিগত কয়েক দফা সিটি নির্বাচনের ভোট পর্যালোচনায় দেখা গেছে- আগের চেয়ে ভোটারদের ভোট প্রদানের হার আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।
গতকালের নির্বাচনের মোট ভোট পড়েছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯০টি। এরমধ্যে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন মাত্র ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। গতকাল বুধবার রাত দেড়টায় নগরীর মোট ৭৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩৩টি কেন্দ্রের ফল প্রকাশ করা হয়। সংঘর্ষের কারণে বাকি দুটি কেন্দ্রের ফল স্থগিত রয়েছে।
গতবার ২০১৫ সালের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪৭ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এরমধ্যে 'হাতি' প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ জ ম নাছির উদ্দিন পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট। ওই সময় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম কমলা 'লেবু' প্রতীকে পেয়েছিলেন ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট। ২০১৫ সালে চসিক নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৬০০ জন।
তার আগে, ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরো বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিল। সেবারের নির্বাচনে ভোট দেন ৫৫ শতাংশ ভোটার। তখন 'আনারস' প্রতীক নিয়ে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ১৪৫ ভোট পেয়ে মেয়র হয়েছিলেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম। 'জাহাজ' প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী পেয়েছিলেন ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬১৭ ভোট।
এবারে মেয়র পদ থাকা অন্য প্রার্থীদের মধ্যে 'আম' প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আবুল মনজুর পেয়েছেন ৪ হাজার ৬৫৩ ভোট, 'মোমবাতি' প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন পেয়েছেন ২ হাজার ১২৬ ভোট, 'হাতি' প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে খোকন চৌধুরী পেয়েছেন ৮৮৫ ভোট, 'চেয়ার' প্রতীক নিয়ে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ পেয়েছেন ১ হাজার ১০৯ ভোট, 'হাতপাখা' প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম ৪ হাজার ৯৮০ ভোট পেয়েছেন।
সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন এবং নারী ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন। মোট ভোটারের মধ্যে এবারে ভোট প্রয়োগ করেছেন মাত্র ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪১০ জন। এরমধ্যে বাতিল হয়েছে ১ হাজার ৫৩টি। প্রদানকৃত ভোটের হিসেব অনুযায়ী, এবারে ভোট পড়েছে মাত্র ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
২০১০ সালের চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে (চসিক) প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দেন ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের ভোটাররা। ২০১৫ সালেও ওই ওয়ার্ডে ইভিএম ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এবার সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হয়।
এবারের ৪১ টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৩২ কাউন্সিলর বিজয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ৭ জন। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরে আওয়ামী লীগের ১২ জন, বিদ্রোহী ১ জন এবং ১জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বিএনপি, জামায়াত কিংবা অন্য কোন দলের কোন কাউন্সিলর প্রার্থী জয়ী হয়নি এবারে।
গত বছর ২৯ মার্চ ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত করা হয়। সর্বশেষ ১৪ ডিসেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্থগিত হওয়া নির্বাচনে ভোট নেওয়ার নতুন তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
নগরীর ১৪টি সংরক্ষিত এবং ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ছোট দলগুলোর কোনো কাউন্সিলর প্রার্থী ছিল না। চসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীসহ ২৩৬ জন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এছাড়া, একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর মৃত্যুতে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোট স্থগিত রয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি এ ওয়ার্ডে ভোট হবে।