চীনা ভ্যাকসিন: প্রস্তাব পেয়েছিল ঢাকা, ব্যবহার করছে অন্য দেশ
সেরাম ইনস্টিটিউটের ওপর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন রপ্তানিতে কয়েক মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত সরকার। সেইসাথে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যাপারেও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যাপারে ভারত ও চীনের সাথে আলোচনা করেছিল বাংলাদেশ। তবে চীনের সাথে শেষ পর্যন্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।
২০২০ সালের আগস্টেই চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাক বায়োটেককে বাংলাদেশে হিউম্যান ট্রায়াল চালানোর অনুমতি দেয় বাংলাদেশ, তবে সরকার ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অর্থায়নে অসম্মতি জানানোয় চুক্তি বাতিল হয়।
বাংলাদেশে ট্রায়াল চালানোর জন্য অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চেয়েছিল চীন, এতে খরচ পড়তো প্রায় ৭০ লাখ ডলার।
সিনোভ্যাক জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনের বিলম্ব হওয়ায় অন্যান্য দেশগুলোকে এ সুযোগ দেয়া হয়।
সিনোভ্যাক ও সিনোফার্মের ভ্যাকসিন সহ বিশ্বে ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে চীন। সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের গবেষণার ফলাফল উন্মুক্ত থাকায় এ ভ্যাকসিনটি আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদন ও সরবরাহের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, ব্রাজিল ও চিলির মতো দেশগুলো সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন কিনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুতে, ইন্দোনেশিয়ায় সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের প্রথম চালান (১২ লাখ ডোজ) পাঠানো হয়। জানুয়ারির শুরুর দিকেই দ্বিতীয় চালান (১৮ লাখ ডোজ) পাঠানোর কথা রয়েছে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহরেত্তিন কোচা জানান, সিনোভ্যাকের সাথে ৫ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কিনে নেয়ার চুক্তি করেছে তুরস্ক।
এছাড়াও, সিনোভ্যাকের সাথে ফিলিপাইনের ভ্যাকসিন ক্রয়ের চুক্তির আলোচনা চলছে। সিঙ্গাপুর সিনোভ্যাকসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে আগাম ভ্যাকসিন ক্রয়ের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
ইউরোপীয় দেশ হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজার্তো এক ঘোষণায় জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউরোপিয়ান মেডিক্যাল অ্যাজেন্সির মূল্যায়নের অপেক্ষা না করেই চীনা ভ্যাকসিনের জরুরি ব্যবহার অনুমোদনের আবেদন করবে হাঙ্গেরি।
চীনে জরুরি ব্যবহার অনুমোদনের মাধ্যমে ১০ লাখ মানুষের টিকাদান কর্মসূচীর একটি হলো সিনোভ্যাকের করোনাভ্যাক ভ্যাকসিন।
তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের ফলাফল প্রকাশিত না হলে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে। গত বছরের জুলাই থেকেই চীনের সামনের সারির কর্মী ও অধিক ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে।
চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (সিএনবিজি) জানিয়েছিল, ২০২১ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারে সিনোভ্যাক।
সিনোভ্যাক একটি বিবৃতিতে জানায়, প্রতিষ্ঠানটি লক্ষ্যমাত্রা বার্ষিক ৩০ কোটি ডোজ উৎপাদন এবং ২০২০ সালের শেষ নাগাদ দ্বিতীয় চালানের উৎপাদন শুরু করা। বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬০ কোটিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে বলেও জানায় সংস্থাটি।
চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের তৈরি ভ্যাকসিন ইতমধ্যেই চীনে পূর্ণাঙ্গ অনুমদন পেয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনেও সিনোফার্মের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।