টিকাদানে দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ
দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন ২ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষ, যা মোট জনসংখ্যার ১২ দশমিক ০৫ শতাংশ। টিকাদানের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলোর অন্তত ২০ শতাংশের বেশি মানুষ দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন। তবে আগামী ২৮ অক্টোবর গণটিকাদান কর্মসূচির আওতায় দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হলে দেশে পূর্ণ দুই ডোজ পাওয়া মানুষের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে গত ২৮ সেপ্টেম্বর হওয়া গণটিকাদান ক্যাম্পেইনের দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম শুরু হবে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে।
২৮ অক্টোবর দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলায় বিশেষ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশনের এই ক্যাম্পেইনটি অনুষ্ঠিত হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে জানানো হয়েছে।
সেখানে বলা হয়, ২৮ সেপ্টেম্বর যারা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন, টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে শুধুমাত্র তাদেরকেই ২৮ অক্টোবর দ্বিতীয় ডোজ প্রদান করা হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাউথ ইস্ট এশিয়ান কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন ড্যাশবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভ্যাকসিন পেয়েছে ভুটানের জনগণ, যা মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এছাড়া মালদ্বীপের ৬৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ৫৯ দশমিক ৭০ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন। আফগানিস্তানের মাত্র ১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন।
২১ অক্টোবর ১০০ কোটি ডোজ করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাইলফলক স্পর্শ করেছে ভারত। দেশটিতে দুই ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন মোট জনসংখ্যার ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ মানুষ, পাকিস্তানে এ হার ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত অনেক মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে, তবে ভ্যাকসিন সংকটের কারণে অধিক মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার সক্ষমতা থাকলেও আমরা ভ্যাকসিনেশনে পিছিয়ে আছি। আমরা একসঙ্গে অনেক ভ্যাকসিন পাচ্ছি না তাই দ্রুত বেশি মানুষকে টিকা দিতে পারছি না। ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতার ওপর ভ্যাকসিনেশনের গতি উঠা-নামা করে। তাই ভ্যাকসিন আমদানির পাশাপাশি দেশে ভ্যাকসিন উ'পাদনের কাজ আরো দ্রুত করতে হবে।"
এখন পর্যন্ত কেনা ও উপহারের ভ্যাকসিন মিলিয়ে প্রায় সাড়ে সাত কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেশে এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এখন পর্যন্ত ৬ কোটি ৯০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত এক ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন চার কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ। আর সম্পূর্ণ দুই ডোজ দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষকে।
এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন পেতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৫ কোটি ৬৩ লাখ ১২ হাজার মানুষ। রেজিস্ট্রেশন করে টিকার অপেক্ষায় আছেন ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষ। অন্যদিকে প্রথম ডোজ নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন ১ কোটি ৯৬ লাখের বেশি মানুষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এখন দিনে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে ৬ লাখের বেশি ভ্যাকসিন দেয়া হয়। সেটি বাড়িয়ে দিনে ১০-১৫ লাখ ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা ভ্যাকসিনেশনের পরিধি বাড়াতে কাজ করছি। তবে সবকিছু নির্ভর করছে ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতার ওপর। ভ্যাকসিনের মজুদ সাপেক্ষে ভ্যাকসিন দেওয়ার হার আরও বাড়ানো হবে।"