ডাক্তার, পুষ্টিবিদরা খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন করতে পারবেন না
খাদ্যপণ্যের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য ডাক্তার, পুষ্টিবিদ বা বিশেষজ্ঞদের দিয়ে অহরহ বিজ্ঞাপন তৈরি করা হচ্ছে। আবার একটি পণ্যের গুরুত্ব বাড়াতে অন্য একটি পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে। তবে বিজ্ঞাপনে এই ধরনের বিশেষজ্ঞের উপস্থিতি কিংবা অন্য পণ্যকে হেয় করে এমন কোনো কথা প্রচার করা যাবে না।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি প্রবিধান তৈরি করছে। নিরাপদ খাদ্য (বিজ্ঞাপন) প্রবিধানমালা, ২০২১ নামের এই প্রবিধানের খসড়া থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিএফএসসের খসড়া প্রবিধানে ডাক্তার, পুষ্টিবিদ, বিশেষজ্ঞ দিয়ে কোনো খাদ্যের গুণাগুন ও স্বাস্থ্যের কী ধরনের উপকার হবে তা প্রচার বন্ধের কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতা বা দৈহিক আকার, বর্ণকে কেন্দ্র করে কোনো বিজ্ঞাপন তৈরি করা যাবে না।
তাছাড়া, বিজ্ঞাপনে চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সুপারিশকৃত- এই ধরনের কোনো অভিব্যক্তি প্রকাশ বা ঘোষণা করা যাবে না। একইসঙ্গে পণ্যের গুরুত্ব বাড়াতে রোগ নিরাময়কারী হিসেবে কোনো পণ্যের প্রচারণা করা যাবে না।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিজ্ঞাপন তৈরিতে অনেক কোম্পানিই এখন প্রতিযোগী পণ্যের সঙ্গে তুলনা করে নিজেদের পণ্যকে সেরা বলে দাবি করে। অন্য পণ্যগুলোকে নিম্নমানের বলে বোঝানো হয়।
এই অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে প্রবিধানে প্রতিযোগী পণ্যের সঙ্গে তুলনা করে শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে বিজ্ঞাপন প্রচার না করার বিধান রাখা হচ্ছে। কারণ এমন দাবি করার ফলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভোক্তার প্রতারণার শিকার হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
প্রবিধানের একটি ধারায় বিজ্ঞাপনে শিশুদের অংশগ্রহণ কেমন হতে পারে তার একটা গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নিন্দা, বিবাদ, কলহ এবং ঝুঁকিপূর্ণ কোনো দৃশ্যে শিশুদের ব্যবহার করা যাবে না। শিশুদের সামাজিক ও সাংষ্কৃতিক মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে এ ধরনের দৃশ্যে তাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে।
বিএফএসএ'র কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে প্রাকৃতিক, তাজা, খাঁটি, ঐতিহ্যবাহী, ঘরের তৈরি, জেনুইন সহ নানা ধরনের বিশেষণ যুক্ত করা হয় বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে। এইসব শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এবার অনেক সতর্ক হতে হবে।
কোনো খাদ্যপণ্য যদি সরাসরি প্রকৃতিকভাবে উৎপাদিত হয় এবং এতে যদি কোনো ধরনের মিশ্রণ, অন্য কোনো খাদ্যের সঙ্গে মিশ্রণ না হয় এবং এটি প্রক্রিয়াজাত করা না হয়, তবেই সেই পণ্যের বিজ্ঞাপনে 'প্রাকৃতিক' শব্দটি ব্যবহার করা যাবে। তবে এর পক্ষে যথেষ্ট পরিমাণে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে।
বিধিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএফএসএ'র সদস্য মন্জুর মোর্শেদ আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপনকে একটা নিয়মের মধ্যে আনার জন্যই এই বিধিমালা তৈরি করা হচ্ছে। বিজ্ঞাপনে অন্য পণ্যের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতামূলক কথাবার্তা, অন্যকে হেয় করা, গ্রাহক প্রতারিত হতে পারে- এমনসব কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে নিয়মকানুন থাকছে।'
বিধিমালাটিতে আমদানি করা খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপনের বিষয়েও নির্দেশনা থাকছে। আমদানি করা খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপনে এমন কোনো শব্দ বা অভিব্যক্তি প্রকাশ করা যাবে না, যাতে মনে হতে পারে পণ্যটির মান স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের চেয়ে উন্নতমানের। অর্থাৎ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে ভালো-মন্দ পার্থক্য করবে, এমন কোনো মতামত দেওয়া যাবে না।
এ ধরনের খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে প্রস্তুতকারকের নাম, পূর্ণ ঠিকানা ছাড়াও পুনঃমোড়কজাতকারীর ও বাজারজাতকারীর পূর্ণ নাম-ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
এছাড়া মাতৃদুগ্ধের বিকল্প শিশুখাদ্য, প্রক্রিয়াজাত করা দুধের বিজ্ঞাপন কেমন হবে, সে বিষয়েও প্রবিধানে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ থাকছে। সামগ্রিকভাবে মোড়কাবদ্ধ কোনো খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন, তার লেভেল, প্রচার, মেয়াদের তারিখ, খাদ্যোপকরণ, দাবি, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পুষ্টিকরসহ বিভিন্ন বিষয়গুলো কীভাবে উপস্থাপন করতে হবে, এর নিয়কানুন থাকছে এই বিধিমালায়।
বিধিমালাটির খসড়া কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে সেক্টর সংশ্লিষ্টদের মতামতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এই মতামতগুলো নিয়ে পরবর্তীকালে প্রয়োজনে সংযোজন বা বিয়োজনের পর চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
মন্জুর মোর্শেদ আহমেদ বলেন, 'মতামতগুলো এলে কিছু জায়গায় পরিবর্তন আসতে পারে। সেগুলো বিবেচনায় নিয়েই চূড়ান্ত করা হবে।'
এসব নিয়ম ভঙ্গ করলে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩-এর ৪১ ও ৪২ ধারা লঙ্ঘন বলে বিবেচনা করা হবে এবং সে অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে বিএফএসএ'র কনসালটেন্ট আইয়্যুব হোসাইন টিবিএসকে বলেন, 'আমরা খসড়ার ওপর মতামত চেয়েছি। মতামত পেলে সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বসে এটি চূড়ান্ত করা হবে।'
তিনি বলেন, 'মূলত ভোক্তাদেরকে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করতে, এবং তারা যেন প্রকৃত তথ্য জেনে পণ্য কিনতে পারেন, সেজন্যই বিজ্ঞাপনগুলোকে একটি নীতির মধ্যে আনার কাজ চলছে।'