বঙ্গবন্ধুর আত্মীয়, প্রধানমন্ত্রীর ‘নয়া চাচা’ও রাজাকারের তালিকায়, সারাদেশে প্রতিবাদ
সম্মুখ সমরের যোদ্ধা থেকে সংগঠক, এমনকি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নয়া চাচা’কেও বিতর্কিত রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভূক্তি করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আর এনিয়ে সারাদেশে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ। দাবি উঠেছে এ তালিকা প্রত্যাহারের। মঙ্গলবার এনিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করেছে স্বরাষ্ট্র ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, তালিকায় যাদের নাম এসেছে তাদের নামে দালাল আইনে মামলা রয়েছে। তবে সে কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তবে শেষ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যারা স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন না, এমন কারো নাম স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় এসে থাকলে তা বাদ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে।
প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর-
বরিশাল : বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকের হাতে নিহত শহীদ সেরনিয়াবাতের বাবা আব্দুল হাই সেরনিয়াবাতের নামও রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের রাজাকারের তালিকায়।
১৯৭১ সালে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন আব্দুল হাই সেরনিয়াবাত। তখন তার বয়স ষাটের ওপরে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র দেওয়া, খাদ্য সরবরাহ প্রভৃতি কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেন তিনি। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে দাফতরিক বিভিন্ন কাজেরও দায়িত্ব ছিল তার ওপর। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা এই মানুষটির নাম রাজাকারের তালিকায় থাকায় বিস্মিত তার সন্তান ও স্বজনরা। এ ঘটনায় তারা ও আগৈলঝাড়াবাসী ক্ষুব্ধ ও হতবাক।
আগৈলঝাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত জানান, আব্দুল হাই সেরনিয়াবাত সরকারি চাকরি করতেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের পর তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য তার উদ্যোগে গ্রামের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। এসব কারণে স্থানীয় রাজাকারদের নজরে পড়ে যান তিনি। ১৯৭১ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে একদিন তার গ্রামের বাড়িতে পাক সেনারা হানা দেয়। তাদের বাড়িসহ আরও কয়েকটি বাড়িতে আগুন দিয়ে জালিয়ে দেয়। ৮ ডিসেম্বর বরিশাল পাক হানাদার মুক্ত হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে ছিলেন তিনি।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'আমরা এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও হতবাক। অবিলম্বে এ তালিকা সংশোধন করে ওই পরিবারের সম্মান সুরক্ষা করা হোক। এই অসম্মানের জন্য তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা উচিত।
আব্দুল হাই সেরনিয়াবাতের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা আমান সেরনিয়াবাত জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে বাবা সরকারি চাকরি করতেন। কর্মস্থলে সেনাবাহিনীর প্রধান আইয়ুব খান নিয়ে নানা সমালোচনা করতেন। ধিক্কার জানাতেন। এ কারণে ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়তে হয়েছে বাবাকে। তার দোনালা বন্দুকটি যুদ্ধের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবা বাড়ি থাকতে পারেননি । মাঝে মধ্যে গোপনে এসে দেখা করে যেতেন।
তিনি জানান, ১৯৮৬ সালে তার বাবা মারা যান। তবে এখন তিনি বেঁছে বাবা লজ্জায় হয়ত মারা যেতেন। ৪৯ বছর পর আজ সেই ইতিহাস উল্টে গেছে। বাবার নাম রাজাকারের তালিকায় প্রকাশ করা হয়েছে। এ ঘটনার আমার নিন্দা জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এই চক্রান্তের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
প্রসঙ্গত আব্দুল হাই সেরনিয়াবাতের বাবার নাম আব্দুল খালেক সেরনিয়াবাত। আব্দুল হাই সেরনিয়াবাতের ছোট ভাই আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও ছেলে শহীদ সেরনিয়বাত পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকের হাতে শহীদ হন।
এদিকে, মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা ভাতাপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট তপন চক্রবর্তী বলেছেন, দালাল আইনে আমি ও আমার মা উষা চক্রবর্তীর নামে কখনোই কোনো মামলা হয়নি। এ ধরনের কোনো কাগজ কেউ দেখাতে পারবে না। আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ কেউ কখনও তোলেনি। কোন তদন্তকারী সংস্থাও এ বিষয়ে এ পর্যন্ত কিছু জানতে চাননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলছেন তা অসত্য এবং হাস্যকর। আমি তার বক্তব্যের প্রতিবাদ করছি।
তপন কুমার চক্রবর্তীর মেয়ে বাসদ নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী বলেন, এখন কেউ দোষ নিতে চাচ্ছে না। পরস্পরের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা চলছে। তালিকা যে মন্ত্রণালয় থেকেই তৈরি করা হোক না কেন, তা বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি এর সঙ্গে যে চক্র জড়িত তাদের সনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। অবিলম্বে এ তালিকা সংশোধন করে তার পরিবারের সম্মান সুরক্ষা করার দাবি জানান তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী এবং তার মা ও শহীদ জায়া উষা রানী চক্রবর্তীর নাম স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় আসায় আলোচনা শুরু হয়। এরপর একে একে অন্যদের নাম আসা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল সদর রোড অশ্বিনী কুমার হলের সামনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত তালিকায় আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ। এ সময় তারা পুনরায় তালিকা প্রকাশের দাবি জানান। সকালে নগরীর ফকিরবাড়ি রোড বাসদ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। এ সময় ডা. মনীষা চক্রবর্তী ও তার বাবা তপন কুমার চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, “একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা দুঃখজনক। এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য আছে। তালিকা সংশোধনের পাশাপাশি জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।”
তালিকা দ্রুত সংশোধন চান গোলাম আরিফ টিপু : রাজাকারের তালিকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর নাম থাকায় বিষ্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। জেষ্ঠ্য এ আইনজ্ঞ বলেছেন, এ তালিকা কোনোভাবেই মানা যায় না। এই তালিকা সংশোধনে দ্রুত উদ্যোগ না নিলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গে গোলাম আরিফ টিপু বলেন, আমার নামে দালাল আইনে মামলা করার কোনো প্রশ্নই আসে না। কারণ আমি ১৯৭২ সালে গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা। সে সনদও রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি শুধু মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেইনি। এর আগে ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালে নির্বাচন, ৬২, ৬৬, ৬৯ ও ৭০ এর সকল ঐতিহাসিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় আমার নাম অগ্রভাগে ছিল। একাত্তরের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর আমি আমার সকল বন্ধু ও সহযোদ্ধাদের একত্রিত করি। আমরা পরবর্তী সময়ে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেই। রাজশাহীর অনেক জায়গায় বিজয়ের আগের মাসে কয়েকটি অভিযানে হানাদার বাহীনলিু প্রায় শ’খানেক সদস্যকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করি আমরা। অনেকগুলো গেরিলা অভিযানে অংশ নিয়েছি।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, একাত্তরের ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন, বিশেষ গেরিলা বাহিনীর সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকার ২০১৩ সালে যে গেজেট জারি করেছে, সেখানে ৩৩ নম্বরে আমার নাম রয়েছে। আমি একজন ভাতা ও সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্ত গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি রয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাকে রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পেছনে অনেক বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে। জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এরকম একটি বিষয় শুনতে হবে ভাবতেও পারিনি।
বরগুনা : মো. মজিবুল হক- মৃত্যুর পরেও তিনি স্থানীয়দের কাছে ‘নয়া ভাই’ নামে পরিচিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তিনি। দীর্ঘ ৪০ বছর ছিলেন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ছিলেন মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতিও। সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় নাম এসেছে তার। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
এদিকে, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় পাথরঘাটা প্রেস ক্লাবে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল সংবাদ সম্মেলনে মজিবুল হকের নাম রাজাকারদের তালিকায় প্রকাশ হওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে নিন্দা জানিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান। এরপর উপজলা আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযাদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের উদ্যোগে একটি বিক্ষাভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে।
পারিবারিক সূত্র ও প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধারা জানান, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়াশুনা করার পাশাপাশি বেকার হোস্টেলেও বঙ্গবন্ধু ও তিনি একসঙ্গে থেকেছেন। মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ গঠন থেকে শুরু করে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পাথরঘাটার এ সংগঠনের সভাপতি ছিলেন নয়া ভাই। তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধাভাজন। তাকে তিনি নয়া চাচা নামে ডাকতেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পাথরঘাটার প্রত্যন্ত গ্রামের তার বাড়িতে আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। এ বিষয়ে মজিবুল হক নয়া ভাইর স্ত্রীর মোসা. নুরজাহান বেগম (৮৭) বলেন, "আমার স্বামী ২০০৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর মারা গেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। সংগ্রাম পরিষদ পরিচালনা করেছেন। যুদ্ধের সময় আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী মানুষ এবং হিন্দু থেকে মুসলমান হওয়া মানুষদের ভরণ-পোষণ করেছেন। সেই মানুষটা কি করে রাজাকার হয়? এর বিচার হবে। এর বিচার শেখ হাসিনা করবে।"
তিনি আরও বলেন, "বঙ্গবন্ধু আমার স্বামীর কাঁধে হাত দিয়ে হাঁটতেন। শেখ হাসিনা আমার স্বামীর পায় হাত দিয়ে সালাম করতো। শেখ হাসিনার থেকে দূরে বসলে তাকে কাছে টেনে বসাতো। সেই মানুষটা কি করে রাজাকার হলো, তা আমি জানতে চাই। আমি এর বিচার চাই।"
বরগুনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সেক্টর কমান্ডার ফোরাম ৭১ এর বরগুনার সভাপতি আনোয়ার হোসেন মনোয়ার বলেন, "মারা যাওয়ার পরপরও মজিবুল হক নয়া ভাই ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি কখনোই রাজাকার ছিলেন না। তিনি ছিলেন স্বাধীনতার স্বপক্ষের সংগঠক। রাজাকারের তালিকা থেকে তার নাম বাদ দিতে হবে। নয়তো আমরা আন্দোলনে নামবো।"
দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া মো. আবদুল হালিম ওরফে কমরেড হালিম বলেন, "মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর নয়া ভাই তার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছেন। "
রাজশাহী : প্রয়াত অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আওয়ামী লীগের সংগঠক। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে আব্দুস সালামের দুই সন্তান সেলিম ও ওয়াসিম, ছোট ভাই হাসানুজ্জামান খোকা, ছোট ভগ্নীপতি সাইদুর রহমান মিনা এবং ভাগ্নী জামাই তৎকালীন এম.এন.এ নজমুল হক সরকার শহীদ হয়েছেন।
অথচ তার নামই এসেছে রাজাকারে তালিকায়। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজাকারের তালিকায় নাম আসা শহিদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধারা।
অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের জামাই কবি ও লেখক আরিফুল হক কুমার বলেন, এই তালিকা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। একজন ব্যক্তি যিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আওয়ামী লীগের সংগঠক, যার নিজের দুই সন্তানসহ পরিবারের মোট পাঁচজন যুদ্ধে শহিদ হয়েছেন, তার নাম রাজাকারের তালিকায় আসা সত্যিই ভীষণ দুঃখের। আমার এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। এর সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি করছি।
এদিকে শহিদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে বিকেলে সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট মানববন্ধন করেছে সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন।
বগুড়া : “আলহাজ কছিম উদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি ভাতা পাচ্ছেন” বলে জানালেন বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন। তিনি দাবি করেন, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যে তালিকা রয়েছে তাতে আদমদীঘিসহ আশেপাশের আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে যারা নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন তার মতোই।
আদমদিঘী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ সিরাজুল ইসলাম খান রাজু জানান, প্রায় ৬০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ কছিম উদ্দিন আহমেদ। বঙ্গবন্ধুর সময় তিনি দায়িত্ব পান জয়পুরহাটের গভর্নর হিসেবে। অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন ১৯৭০ সালে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে ৪৪ বছর দায়িত্ব পালন করেন। কিছু দিন তিনি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান।
আদমদিঘী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক সচিব মো. জায়েদুল ইসলাম জানান, কছিম উদ্দিন আহমেদ ভারতের কামারপাড়া ক্যাম্পে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
অন্যদিকে, মুনসুর আলী নামে আরেক মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধের সময় আদমদিঘী উপজেলার নশরৎপুর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধে অংশ নেয়। পরে তিনি আদমদিঘী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি একই সংগঠনের ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত আদমদিঘী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তার দাবি, তিনি ৬৯ এর অসহযোগ আন্দোলনের সংগ্রাম পরিষদের আদমদিঘী থানা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অন্যান্যদের মতো তার নামও রাজারদের তালিকায় দেয়া হয়েছে।