নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই, হিমশিম খাচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষ
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে সারা দেশজুড়ে বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। গত এক সপ্তাহ ধরে বৃদ্ধি পেতে থাকা এই দামের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন সীমিত আয়ের মানুষজন; ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে তাদের।
খাতুনগঞ্জে ডালের পাইকারি দাম গত সপ্তাহে মণ প্রতি (৩৭.৩২ কেজি) বেড়েছে ১১০ থেকে ২০০ টাকা। ফলে খুচরা বাজারে প্রতি কেজির দাম বাড়ে ৫ টাকা।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, ডালের চাহিদা স্থিতিশীল থাকলেও আমদানিকারকদের কারসাজির কারণে দাম বাড়ছে।
এছাড়া তেল, আটা, চিনি ও ডালের মতো অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম গত সপ্তাহে প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। যা সীমিত আয়ের মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে।
খাতুনগঞ্জে বৃহস্পতিবার প্রতি মণ কানাডিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ান মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ১০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২ হাজার ৯৮৫ টাকা। এছাড়া সাদা মটরের দাম ১৫০ টাকা ও আমদানিকৃত ছোলার দাম ২০০ টাকা বেড়ে যথাক্রমে ১ হাজার ৫৩০ ও ২ হাজার ৪০০ টাকা হয়েছে।
পাইকারি ডাল ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে ডালের চাহিদা স্বাভাবিক ও পণ্যেরও যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে। এরপরও কিছু আমদানিকারক আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
পাইকারি ব্যবসায়ী আজিজুল হক বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গত সপ্তাহে মসুর ডালের বুকিং দাম বাড়লেও অন্যান্য ডালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এছাড়া বাজারে যেসব মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে তা অন্তত এক থেকে দুই মাস আগে কেনা হয়েছে। বেশি টাকায় বুকিং দিয়ে আনা মসুর ডাল বাজারে পৌঁছাবে আরও দেড় মাস পরে।
তবে ডাল আমদানিকারক আশুতোষ মহাজন দাবি করেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সব ডালের বুকিং দাম বেড়েছে; সেইসঙ্গে বেড়েছে ডলারের মূল্য ও জাহাজ ভাড়া।
চট্টগ্রাম ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম মহিউদ্দিন বলেন, "বাজার কিছু আমদানিকারকের কাছে জিম্মি; তারা যখন খুশি দাম বাড়ায় বা কমায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন।"
কমছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম
রাজধানীর মগবাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটার ভোজ্যতেলের কন্টেইনার বিক্রি হচ্ছে ৭৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭১০ টাকায়। এছাড়া ২ কেজির প্যাকেট আটার দাম ৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ৭৫ টাকা, প্যাকেটজাত চিনিও কেজি প্রতি ৫ টাকা বেড়ে ৭৫ টাকা ও ছোট দানার মসুর ডালের দাম ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা।
বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন গত সেপ্টেম্বরে চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ৭৫ টাকা নির্ধারণ করলেও তা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ১১০ টাকায়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়াও আমিষের সবচেয়ে সহজলভ্য উৎস মুরগি ও মুরগির ডিমের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০ টাকা থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা। সেপ্টেম্বরেও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ৫ টাকা বেড়ে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর কবির নামে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, "যেভাবে দাম বাড়ছে সেভাবে বেতন বাড়ছে না। আমি আমার সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ ও পরিবারের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি। সরকারকে অবিলম্বে বাজার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে।"
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক ক্রেতা মোঃ খোরশেদ আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমি প্রতি কেজি গাজর কিনেছি ১০০ টাকায়। নয় দিন আগে যে কুমড়া ছিল ৪০ টাকা, তা এখন ৭০ টাকা। এর বাইরে খোলা ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে ১৫২ টাকায়, যা দুই মাস আগেও ছিল ৭০ টাকা।"
তিনি আরো বলেন, "আমার ১০ সদস্যের সংসার চালাতে ২৫ হাজার টাকা প্রয়োজন কিন্তু বর্তমানে আমার খরচ হচ্ছে ৩৫ হাজার টাকা। আমার বেতন বাড়েনি, তাই সংসার চালানোর জন্য টাকা ধার করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।"
শুক্রবার ঢাকার কাঁঠালবাগান, কারওয়ান বাজার, নয়াটোলা বউবাজারে প্রতি কেজি শিম ৮০ টাকায়, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকায়, লম্বা বেগুন ৬০ টাকায়, গোল বেগুন ৭০ টাকায়, টমেটো ১৪০ টাকায়, ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় ও আলু কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকায়।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে শীতের সবজি পুরোপুরি না ওঠা পর্যন্ত হয়তো স্বস্তি নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে বাজারে সাপ্লাই চেইন উন্নত আরও করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে সরকারি পর্যায়ে ট্যাক্স সমন্বয় বা আমদানির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এ বিষয়ে আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানালেও সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।