৯০ দিনেও দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাননি চট্টগ্রামের ১ লাখ মানুষ
প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর ৯০ দিন পার হলেও চট্টগ্রামে ১ লাখ মানুষ দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাননি। টিকা পাবেন কিনা বা পেলেও ১২ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ কার্যকর হবে কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।
সারাদেশের মত ৭ ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী প্রথম ডোজের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। ২৬ এপ্রিল বন্ধ ঘোষণার আগ পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬০ জন। দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছেন ৩ লাখ ৪১ হাজার ৪৫ জন। বাকি ১ লাখ ১২ হাজার ৭১৫ জন প্রথম ডোজ গ্রহীতা এ যাত্রায় দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাচ্ছেন না।
১৯ মে প্রথম ডোজ নেওয়ার পর তিন মাস (১২ সপ্তাহ) অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে এমন ব্যক্তিদের বিশেষ ব্যবস্থায় দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়ার ঘোষণা দেয় সিভিল সার্জন। কিন্তু চারদিন পরেই ২৩ মে চট্টগ্রামের ভ্যাকসিন কার্যক্রম পুরোপুরি স্থগিত করা হয়।
সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, 'চট্টগ্রামে ভ্যাকসিনের মজুত এখন শূন্য। তাই নতুন করে আমাদের পক্ষে কাউকে টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রথম ডোজ নেওয়ার পর তিন মাস (১২ সপ্তাহ) অতিক্রম হয়েছে এমন ব্যক্তিদের প্রায় ৩০ শতাংশ (১ লাখ ৩ হাজার ৬৬২ জন) দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাননি।'
এদিকে তিন মাস পরেও দ্বিতীয় ডোজের টিকা না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের মানুষ। অধিকাংশের প্রশ্ন দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে দেরি হলে প্রথম ডোজ টিকার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে কি না বা দেরি করে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিলে একই ধরনের সুফল পাওয়া যাবে কি না?
অভিজিত চক্রবর্তী নামে একজন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমার বাবার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়ার তারিখ ছিল ৮ এপ্রিল। করোনা পজিটিভ থাকার কারণে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে পারেনি, এরই মধ্যে প্রথম ডোজ নেওয়ার পর চার মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। বুঝতে পারছিনা দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে দেরি হলে কি সমস্যা হবে।"
টিকার দ্বিতীয় ডোজ তিন মাস পরে নিলেও চলবে ?
দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে দেরি হলে প্রথম ডোজ টিকার কার্যকারিতা নষ্ট হবে কিনা- দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এ বিষয়ে তা জানতে চেয়েছিল দেশসেরা মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. মুশতাক আহমেদের কাছে।
তিনি বলেন, 'প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পরে তিনমাস হয়ে গেলেও টিকা গ্রহীতাদের নতুন করে টিকা গ্রহণ করতে হবে না। যত দেরিই হোক তারা দ্বিতীয় ডোজই নেবেন।
প্রথমবার টিকা নেওয়ার পরপরই টিকা গ্রহীতার শরীরে মেমোরী সেল গঠিত হয়ে গেছে। তাই যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিশ্চিত করতে হবে।'
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনের (নিপসম) ভাইরোলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, "প্রথম টিকাটি হলো বুস্টার ডোজ। যাতে ৫৫ শতাংশ সুরক্ষা তৈরী হয়। দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারলে বুস্টিংটা অনেক বেশি হবে (৮৩ শতাংশ)। তবে সময় বেশি চলে গেলে এন্টিবডি নষ্ট হয়ে যাবে তা কিন্তু না।"
দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অন্য টিকা নেওয়া যাবে ?
অধ্যাপক ডা. মুশতাক আহমেদ বলেন, ''স্পেনে ৫০০ জনের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় প্রথম টিকা ছিলো অ্যাস্ট্রাজেনেকা, পরেরটা দিয়েছে ফাইজার। সেই পরীক্ষায় টিকা গ্রহীতারা ভালো ইমিউনিটি (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) অর্জন করেছে। মোটামুটি ৮ সপ্তাহ বিরতি দিয়ে ভিন্ন কোম্পানীর টিকা নিলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না।"
"ভারতের উত্তর প্রদেশে নার্সরা ভুলক্রমে দুইবারে দুই ধরনের টিকা ব্যবহার করেন। তবে এ কারণে টিকা গ্রহীতার কোনো সমস্যা হয় নাই। আমাদের দেশে অনেকেরই প্রথম টিকা নেওয়ার পর তিনমাস পার হয়ে গেছে, তাই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ট্রায়াল ভিত্তিতে চীন বা ফাইজারের টিকা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ব্যবহার করে দেখতে পারে।
জরুরী প্রয়োজনে অন্য কোম্পানীর টিকা ব্যবহার করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে ব্রিটেন।" বলেন ডা. মুশতাক।