এবার চিনির দাম বাড়ানোর দাবি জানালো পরিশোধনকারীরা
ডলারের দাম বাড়ায় জরুরিভাবে চিনির দাম বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি শুল্ক মওকুফ করা এবং আমদানি ব্যয় পরিশোধের জন্য ব্যাংক রেটে ডলার চেয়েছে বেসরকারি সুগার রিফাইনারিগুলো।
এসব পদক্ষেপ না নেওয়া হলে লোকসান বেড়ে কারখানায়গুলো দেউলিয়া হয়ে যাবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশন।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমলেও ডলারের দাম বাড়ার কারণে দেশের ভোক্তারা এর সুবিধা পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ডলার রেটের কারণে ভোজ্যতেল মিলগুলো লিটারে দাম ২০ টাকা বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছে, সে বিষয়ে আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ডলারের দাম বাড়ার কারণে চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে ১০ আগস্ট বাণিজ্য সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশন মহাসচিব গোলাম রহমান।
চিঠিতে সংগঠনটি বলেছে, চিনির রিফাইনারিগুলো বিলম্বে মূল্য পরিশোধের সুবিধা নিয়ে ঋণপত্র খোলার পর মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের বিপরীতে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে কোম্পানিগুলোর বিপুল লোকসান হচ্ছে।
চিঠিতে লেখা, 'র সুগার (অপরিশোধিত চিনি) আমদানির জন্য যখন ঋণপত্র খোলা হয়, তখন ডলারের দাম ছিল ৮৩-৮৫ টাকা। কিন্তু এখন ওইসব এলসির মূল্য পরিশোধের সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমাদের কাছ থেকে প্রতি ডলার ১১৫ টাকা হারে বিনিময়মূল্য আদায় করছে। এতে চিনি আমদানিতে বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে।'
গোলাম রহমান লিখেছেন, আগে প্রতিটন চিনি আমদানিতে শুল্ক দিতে হতো ২২,০০০-২৩,০০০ টাকা; ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ায় এখন শুল্ক দিতে হচ্ছে টনপ্রতি ২৮,০০০-২৯,০০০ টাকা।
এতে পরিশোধন শেষে প্রতিমণ চিনির মিল গেইট মূল্য দাঁড়াচ্ছে ৩,৭০৩-৩,৮৮৮ টাকা। কিন্তু তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে ২,৯০০-২৯২০ টাকায়।
'এ পরিস্থিতিতে আমাদের কস্টিং মূল্যে দেশের অভ্যন্তরে চিনির দাম বৃদ্ধি করে বিক্রি করতে না পারলে লোকসান বৃদ্ধি পেয়ে কারখানাগুলো দেউলিয়ায় পরিণত হবে'- যোগ করেছেন গোলাম রহমান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ায় চিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয় বাড়ছে। আমদানি মূল্যের উপর নির্ধারিত হারে শুল্ক আরোপ থাকায় চিনি আমদানিতে আগের চেয়ে বেশি শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে চিনির দাম আরও বেড়ে যাচ্ছে।
দেশের বাজারে চিনির দামে লাগাম টানতে গত মার্চে আমদানিতে সংরক্ষণমূলক শুল্ক ৩০ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। রমজান মাসে চিনির চাহিদা বৃদ্ধি এবং জাহাজ ভাড়া বাড়ার কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার।
আমদানি পর্যায়ে সংরক্ষণমুলক শুল্ক ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ে শুল্ক-কর ও ভ্যাট মিলিয়ে চিনির উপর ৫১ শতাংশ কর আরোপিত আছে বলে জানান বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের একজন কর্মকর্তা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৮ লাখ টন। এর মধ্যে সরকারি চিনিকলগুলোতে উৎপাদন হয় প্রায় ৪৫০০০ টন।
চাহিদার বাকি অংশ মেটাতে র' সুগার আমদানির পর রিফাইন করে বাজারজাত করে রিফাইনারিগুলো।