মঙ্গলবার আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’
আগামী মঙ্গলবার ঘণ্টায় প্রায় ৯৩ কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড় 'সিত্রাং' পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে, জলোচ্ছ্বাসে ভাসতে পারে উপকূলীয় এলাকা- এমন শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে বাংলাদেশে ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের (আইএমডি) পূর্বাভাসে।
আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়াসহ দেশে বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আইএমডি ঘূর্ণিঝড়ের একটি সম্ভাব্য গতিপথ (ট্র্যাক চিত্র) প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের ওপর অবস্থিত নিম্নচাপটি আগামী রোববার গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে উত্তর দিকে ফিরে আসতে পারে এবং ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। আগামী সোমবার এটি পশ্চিম, মধ্য ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরের ওপরে অবস্থান করবে। সর্বশেষ মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলীয় অঞ্চলের কাছে আঘাত হানতে পারে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবারের পূর্বাভাসে বলেছে, নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হতে পারে এবং আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আবহাওয়া পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। লঘুচাপের জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে পরবর্তী নির্দেশনা পর্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
জাপানের হিমাওয়ারি স্যাটেলাইট ইমেজ পর্যালোচনা করে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, "গত ১৬ দিন আগে থেকেই এই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের লঘুচাপটি গত চব্বিশ ঘণ্টায় শক্তিশালী হয়েছে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি সোমবার সন্ধ্যা থেকে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় আছড়ে পড়তে পারে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। নিম্নচাপের প্রভাবে রোববার থেকে বৃষ্টি শুরু হবে, যা বুধবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। রোববার থেকে সাগর অত্যন্ত উত্তাল হবে।"
তাই জেলেদের ওইদিন সকালের মধ্যে তীরে ফিরে আসার পরামর্শ দেন মোস্তফা কামাল পলাশ।
মোস্তফা কামাল পলাশ আরও বলেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের পুরোটা খুলনা ও বরিশাল বিভাগের সব উপকূলীয় জেলা ও চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালীর ওপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানার প্রবল আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার মিলিত প্রভাবে সোম ও মঙ্গলবার খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলো ৫ থেকে ৮ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের 'ল্যান্ডফল' প্রক্রিয়া নিয়ে ভারতীয় আবহাওয়া ভবনের ঘূর্ণিঝড় নজরদারি বিভাগের প্রধান আনন্দকুমার দাস বলেছেন, "আপাতত বিভিন্ন মডেল থেকে ইঙ্গিত মিলছে যে বাংলাদেশ উপকূলে ল্যান্ডফল হবে ঘূর্ণিঝড়ের। তবে পশ্চিমবঙ্গে নিশ্চিতভাবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়বে। মূলত দুই ২৪ পরগনায় (প্রভাব পড়বে ঘূর্ণিঝড়ের)।"
তিনি আরও বলেছেন, "দীপাবলি থেকে (২৪ অক্টোবর) ভারী বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়া বইবে উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে। স্থানীয় মানুষকে প্রস্তুত থাকতে হবে।'