কম গবেষণার মধ্যেই বাড়ছে জিঙ্ক ফর্টিফায়েড ধানের চাষ
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বিনা) সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ১০টি জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ধাবন করেছে, এগুলোর চাষও হচ্ছে। তবে জিঙ্কসমৃদ্ধ চাল রান্না করার পর তাতে ফর্টিফায়েড জিঙ্ক থাকছে কিনা এবং খাওয়ার পর তার প্রভাব কতটুকু পড়ছে শরীরে- তা নিয়ে কোনো গবেষণা ছাড়াই জাতগুলোর চাষাবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে 'বায়োফর্টিফাইড জিঙ্ক রাইস সম্প্রসারণের মাধ্যমে অপুষ্টি দূরীকরণে সম্ভাবতা ও করণীয়' শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা জানান। গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইম্প্রুভড নিউট্রিশন (গেইন) বাংলাদেশ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো আব্দুর রাজ্জাক।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. সাবুক্তাগিন রহমান বলেন, 'জিঙ্ক বায়ো-ফর্টিফায়েড রাইসে জিঙ্কের পুষ্টির কোন ভূমিকা আছে কিনা তা নিয়ে মাত্র একটা স্টাডি রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত সেটায় আমরা কোন ফলাফল দেখতে পাই নি। এটা পরিমাপে বৈশ্বিকভাবেই এখনো কোনো গ্রহণযোগ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নেই।'
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, 'চাল বেশি জাল করলে, মাড় ফেলে দিলে, জিঙ্ক কি চলে যায় না থাকে সেটার জন্য স্টাডি দরকার। কিন্তু সেটা নেই।'
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, 'খাওয়ার পর আসলে কতটুকু শরীতে আসছে সেটা দেখতে হবে। কোনো স্তরে গিয়ে এটা হারিয়ে যাচ্ছে কি না তার গবেষণা থাকা দরকার।'
অথচ এসব গবেষণা ছাড়াই বাড়ছে জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের চাষ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, গত বছর যেখানে ২.১০ হাজার হেক্টর জমিতে জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের চাষ হয়েছে, সেখানে এবার ১.২৬ লাখ হেক্টর জমিচাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যেটা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৭২,৬৩৮ হেক্টর।
বাংলাদেশে শিশু ও নারীদের মধ্যে জিঙ্কের ঘাটতি প্রকট হচ্ছে। দেশের প্রায় ৩২.৫ শতাংশ শিশুর এবং ৪৫.৪০ শতাংশ নারীর মধ্যে জিঙ্কের ঘাটতি রয়েছে। বেশি ঘাটতি নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে, যারা মূলত প্রাণিজ খাদ্য থেকে জিঙ্ক গ্রহণে পিছিয়ে। অথচ জিঙ্কের অভাবেই শিশুরা খাটো এবং অপুষ্টিতে ভুগছে।
তবে গবেষকরা বলছেন, চালের মাধ্যমে এই অপুষ্টি দূর করা সম্ভব। জিঙ্ক বায়ো-ফর্টিফায়েড রাইসের মাধ্যমে এই অপুষ্টি অনেকটাই দূর করা সম্ভব বলে মনে করা হয়; যে কারণে বাংলাদেশে জিঙ্ক ফর্টিফায়েড চালের ভ্যারাইটি উদ্ভাবন করা হচ্ছে।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো আব্দুর রাজ্জাক মনে করেন, জিঙ্কের ঘাটতি পূরণে শুধু জিঙ্কসমৃদ্ধ চাল নয়, অন্যান্য খাবারের মধ্যেও এর উপস্থিতি থাকতে হবে। জিঙ্কের ঘাটতি পূরণে মূলত দরকার হলো ব্যালান্সড টিউট্রিশন, যেটা সব মানুষের খাবার মেনুতে একরকম থাকে না। এ কারণে এককভাবে শুধু জিঙ্ক নয়, অন্যান্য নিউট্রিয়েন্ট বা খাদ্য উপাদান নিয়েও কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির জানান, মানুষের শরীরে জিংকের যে চাহিদা, তার প্রায় ৭০ শতাংশ চালের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। আমাদের চালগুলোর গড় জিংকের পরিমাণ শতকরা ২৪ পিপিএম। শরীরের জন্য দৈনিক জিংকের চাহিদা ১১ মিলিগ্রাম।