মূল্যসীমা, অভিযানের হুমকি আলু, পেঁয়াজ, ডিমের দাম কমাতে সামান্যই ভূমিকা রাখছে
ডিম ভুনার সাথে আলু ভর্তার মতো সাধারণ পদ– দুপুরের খাবারের মেন্যুতে রাখার আগে একবার ভেবে নিন। কারণ ডিম, আলু, পেঁয়াজের মতো নিত্যপণ্য কিনতে এখন আপনার পকেট হালকা হয়ে যাবে।
এমনকী এ তিন পণ্যের ওপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মূল্যসীমা আরোপের দুদিন পরেও – দামের উত্তাপ কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
শনিবার ঢাকার কাঁচাবাজারগুলোয় আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকায়, পেঁয়াজ ৯০ টাকায় এবং ডিম প্রতি ডজন ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা দরে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে যা অনেকটাই বেশি।
অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৪৪ টাকা, আলুর দাম প্রতি কেজি ৩৫-৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। তারপরও এই চড়া মূল্যে ক্ষোভ বাড়ছে ভোক্তাদের মধ্যে।
সরকার-নির্ধারিত দরের চেয়ে ১৫ থেকে ২৫ টাকা বেশি চাওয়ায় বিক্রেতাদের সাথে ক্রেতাদের তর্ক-বিতর্কের চিত্র চোখে পড়েছে ঢাকার বাজারগুলো ঘুরে।
বাসাবো আহমেদবাগ প্রথম লেনের সবজি বিক্রেতা তরিকুলের কাছে আলু কিনতে এসে এক ক্রেতা জানতে চান- সরকার আলুর দাম দেওয়ার পরও কেন ৫০ টাকা দাম চাচ্ছেন? বিক্রেতা উত্তরে বলেন, 'সকাল বেলায় ৪২ টাকা কেজি দরে আলু পাইকারি বাজার থেকে কিনেছি। এখন ৩৫-৩৬ টাকায় বিক্রি করতে পারব না।'
বাড্ডার মিজান স্টোরে পেঁয়াজ কিনতে আসা ক্রেতা ফজলুর রহমানকেও দেখা গেল কিছুটা বিতর্ক করতে। তিনি দোকানিকে বলেন, সরকার বললো পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা, আপনার চাচ্ছেন ৯০ টাকা। এত বেশি কেন চাচ্ছেন? দোকানি জানালেন, 'পাইকারি বিক্রেতারা যখন দাম কমাবে, তখন খুচরাতে এমনিতেই দাম কমবে, তার আগে এই দামে বিক্রি করা ছাড়া উপায় নেই। হয় বেশি দামে বিক্রি করতে হবে, নাহলে পণ্যটি বিক্রি বন্ধ করে দিতে হবে।'
এদিকে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে উচ্চমূল্যে যারা এসব নিত্যপণ্য বিক্রি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে জেলায় জেলায় অভিযান চালাচ্ছে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
বাগেরহাট জেলায় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল ইমরান এক অভিযান চলাকালীন চার ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।
ইমরান বলেন, 'কোনো মূল্য তালিকা না রাখা, এবং সরকার-নির্দেশিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রির জন্য তাদের জরিমানা করা হয়।'
তিনি জানান, ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করতে, বিক্রয় রশিদ রাখতে, জাল বা নকল পণ্য বিক্রি থেকে বিরত থাকতে এবং দোকানে এসে সহজে চোখে পড়বে এমন স্থানে মূল্যতালিকা টাঙ্গাতে ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাজারে আলুর কোনো ঘাটতি নেই
ভোক্তা-পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দরে আলু বিক্রি বাস্তবায়ন করতে আজ শনিবার মুন্সিগঞ্জে গেছেন ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। এসময় তিনি বলেছেন, চলতি বছর যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছে তাতে দেশে আলুর কোনো ঘাটতি নেই। একটি 'অদৃশ্য হাত' আলুর বাজারকে অস্থির করেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আলুর বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
সফিকুজ্জামান বলেন, আলুর বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতার পাকা রশিদ ব্যবহার করতে হবে। কোনো বিক্রেতার কাছে রশিদ না থাকলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শনিবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে রিভারভিউ কোল্ড স্টোরেজ পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় তিনি হিমাগারে থাকা ১০ হাজার বস্তা আলু জব্দ করেন, এবং পাকা রশিদ না রাখায় ওই ব্যাবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ ওই ব্যবসায়ীর কথায় অসঙ্গতী থাকায় এবং পাকা রশিদ ছাড়া আলু বিক্রি করায় ২৭ টাকা মূল্যে সেই আলু বিক্রি করে দাম বুঝিয়ে দেয়ার জন্য তিনি স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেন।
এদিকে কুমিল্লা, সাভার, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, সিলেট, বগুড়া, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রামের টিবিএস প্রতিনিধিরা তাদের জেলায় সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি মূল্যে আলু, পেঁয়াজ ও ডিম বিক্রির কথা জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি আলুর সর্বোচ্চ খুচরা দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা এবং প্রতি পিস ফার্মের ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। উর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে এসব পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন দাম ১৬৯ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা হবে এবং পাম তেলের দাম ১২৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের মতো নিত্যপণ্যের দাম কমাতে সরকারের এই পদক্ষেপ সত্ত্বেও – দৃশ্যত বাজারে কোনো প্রভাব না পড়ায় ক্ষুদ্ধ, অসন্তুষ্ট ভোক্তারা। সারাদেশের দোকানি ও বিক্রেতারা প্রকাশ্যেই সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম মানছেন না।