ভৈরব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বজনদের আহাজারি
বাইরে অ্যাম্বুলেন্সের সারি। ভেতরে আর্তচিৎকার। হাহাকারে ছেয়ে গেছে চারপাশের পরিবেশ। ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন পরিবেশ আগে দেখেননি কেউ। বাইরে থেকেই আর্তচিৎকার শোনা যাচ্ছিল। ভেতরে আসার পর আরও জোরে শোনা যায় বহু মানুষের আহাজারি।
এভাবেই ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও আশপাশের পরিবেশ। কেউ হারিয়েছেন বাবা, কেউ ভাই, কেউবা স্ত্রী-সন্তান।
মেয়ে শম্পা বিশ্বাসকে দেখতে বিকেলে ভৈরব রেলস্টেশন থেকে এগারোসিন্ধু ট্রেনে করে নরসিংদী যাচ্ছিলেন সবুজ শীল। তবে মেয়ের বাড়ির পথে যাত্রা শেষ করতে পারেননি তিনি। স্টেশনের পাশেই দুর্ঘটনায় কবলে পড়ে ট্রেনটি। যাতে মৃত্যু হয় সবুজের। স্বামীকে হারিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী শান্তি রানী শিল।
সবুজ শীলের স্বজন হৃদয় শীল জানান, ভৈরব বাজারে একটি সেলুনে কাজ করে সংসার চালাতেন সবুজ শীল (৪৮)। স্ত্রীকে নিয়ে ভৈরব উপজেলা সদরের রানিবাজারে ভাড়া বাসায় থাকতেন সবুজ।
হৃদয় আরও জানান, মেয়ে শম্পা বিশ্বাসকে দেখতে এগারোসিন্ধু ট্রেনে করে নরসিংদী যাচ্ছিলেন সবুজ। স্বামী এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিতে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শান্তি রানী শীল। এখন মরদেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করছেন।
এর আগে সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে ঢাকাগামী এগারোসিন্ধু ট্রেনের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা চট্টগ্রামগামী আরেকটি কনটেইনার ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এতে এগারোসিন্ধু ট্রেনের দুটি বগি উল্টে যায়। এ ঘটনায় রাত ১০টা পর্যন্ত ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আহত শতাধিক যাত্রীকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি আলীম হোসেন সিকদার জানান, বিকেলে ঢাকা অভিমুখী এগারোসিন্ধু এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভৈরব স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। এরপর লাইন পরিবর্তন করে আরেক লাইনে প্রবেশ করছিল। তবে সম্পূর্ণ ট্রেনটি আরেক লাইনে প্রবেশের আগেই ওই লাইনে আরেকটি কনটেইনার ট্রেন ঢুকে পড়ে। এতে ট্রেনটির পেছনের দিকে সংঘর্ষ হলে দুটি বগি উল্টে যায়।