সরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাবেন গ্রাজুয়েটরা
দেশের গ্রাজুয়েটদের জন্য সুখবর। এখন থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ বা শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবেন বাংলাদেশের গ্রাজুয়েটরা। এই ইন্টার্নশিপের সময় মিলবে কিছু ভাতাও। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গত ২২ অক্টোবর প্রকাশ করা 'ইন্টার্নশিপ নীতিমালা-২০২৩' এ এমনই বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরন সম্পর্কে ভবিষ্যত কর্মীদের ধারণা দিতেই এই নীতিমালা করা হয়েছে। ইন্টার্নরা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মী হিসেবে যুক্ত না হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে কাজ করে সে বিষয়ে অবহিত থাকবেন। এতে সরকারি-বেসরকারি খাতের মধ্যে সমন্বয় সহজ হবে। এজন্য সরকারের নীতি উদ্যোগ ও উন্নয়ন কর্মসূচি সংক্রান্ত কর্মকান্ডে ইন্টার্নদের বেশি বেশি সুযোগ দেওয়া হবে।"
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান যোগ্য গ্রাজুয়েটদের ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ দিতে বাধ্য থাকবে। তবে একটি প্রতিষ্ঠান বছরে কতজনকে ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেবে তা ওই প্রতিষ্ঠান কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী নির্ধারণ করবে। আর ভাতার পরিমাণ কত হবে সেটি ঠিক করবে সরকার। কিছুদিনের মধ্যে ইন্টার্নদের ভাতা বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে পরিপত্র জারি করা হবে।
এতদিন দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রার্থীদের ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ ছিলো না। বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিয়ে থাকে। তবে সেটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী দিয়ে থাকে। কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা নেই।
ইন্টার্নশিপ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বা খন্ডকালীন একটি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত থেকে সেই প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্পর্কে ধারণা বা অভিজ্ঞতা অর্জন করা।
ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ বা হাতেকলমে কাজের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার এই নীতিমালা করেছে। পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানের সাথে কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটানো এবং সরকারি দপ্তরের কাজের সাথে পরিচিত হয়ে ভবিষ্যতে প্রজাতন্ত্রের সেবায় নিয়োজিত হতে উৎসাহ প্রদান করাও এ নীতিমালার লক্ষ্য।
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি মোঃ ফজলুল হক টিবিএসকে বলেন, "উদ্যোগটি অবশ্যই ভালো। কারণ মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন এই সময়ে সবচেয়ে জরুরি। তবে মনে রাখতে হবে গ্রাজুয়েটদের ইন্টার্নশিপে অন্তর্ভুক্তি প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। এমন কোনো নিয়ম যেনো করা না হয় যে, ইন্টার্নশিপ পলিসি কাগজে কলমে আছে কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজ হচ্ছে না।"
তিনি বলেন, দেশের বেসরকারি খাতের শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিয়ে থাকে। কিন্তু সেটা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী গ্রাজুয়েটদের সুযোগ দেয়। সরকার এখন নীতিমালা করেছে। বেসরকারি খাত নিশ্চয় আরও কাঠামোগতভাবে এগিয়ে আসবে। তবে এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে সাথে নিয়ে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
যেভাবে সম্পন্ন হবে
এখন থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টার্ন নিয়োগ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। বিজ্ঞপ্তিতে ইন্টার্নশিপের স্থান, সংখ্যা, মেয়াদকাল, ভাতা, বাছাই প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হবে। মেধার ভিত্তিতে ইন্টার্ন বাছাই করা হবে। তবে নারী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
কমপক্ষে স্নাতক পাশ বাংলাদেশি নাগরিকরা আবেদন করতে পারবেন। স্নাতক, স্নাতকোত্তর অথবা সমমানের ডিগ্রি অর্জনের ২ বছরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। একজন প্রার্থী একবারই সরকারি অফিসে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাবেন। ইন্টার্নশিপের মেয়াদ হবে কমপক্ষে ৩ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত। বিশেষ পরিস্থিতিতে (অসুস্থতা, ব্যক্তিগত সমস্যা) ইন্টার্নশিপ শেষ করতে না পারলে প্রমাণসাপেক্ষে ইন্টার্নশিপ কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ দুই মাসের ছুটি দিতে পারবে। তবে ছুটিকালীন কোনো ভাতা দেওয়া হবে না।
তবে সামরিক, বেসামরিক, আধাসামরিকসহ সকল প্রকার আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, সরকার ঘোষিত কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন (কেপিআই) স্থাপনা এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কাজে ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেওয়া যাবে না।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বছরে ৪ থেকে ৫ লাখ শিক্ষার্থী গ্রাজুয়েট হয়ে বের হচ্ছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপে বলা হয়েছে উচ্চশিক্ষিতদের ১২% বেকার। গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর চাকরিপ্রার্থীরা ইন্টার্নশিপ করতে চান। কিন্তু সবাই সে সুযোগ পান না।
বেসরকারি শিল্প-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য
এই নীতিমালা বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে উপযুক্ত ইন্টার্নশিপ নীতিমালা তৈরি করবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব নীতিমালার মাধ্যমে ইন্টার্নদের ভাতা, ইন্টার্নশিপের মেয়াদ ও অন্যান্য বিষয় নির্ধারণ করবে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও অন্যান্য খাতভিত্তিক শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়িক সংগঠন ইন্টার্নশিপের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
বর্তমানেও দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিয়ে থাকে। তবে সেটি চাহিদার তুলনায় কম। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের ওয়েবসাইটে ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এর বাইরে জব ফেয়ার, অনলাইন জব পোর্টালেও কোম্পানিগুলোর ইন্টার্নশিপ দেওয়ার তথ্য থাকে। তবে বেশিরভাগ ইন্টার্নই নিযুক্ত হন পরিচিতদের মাধ্যমে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ইন্টার্নদের ভাতা দেয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ভাতা দেয় না।