নারায়ণগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ ৩৬ ভবন
আজ শনিবার সকালে কিছুটা জোরালো ভূকম্পন অনুভূত হওয়ায় দেশব্যাপী আলোচনা হয়েছে ভূমিকম্প নিয়ে। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে মাঝারি ধরণের এই ভূমিকম্পনে হতাহতের ঘটনার না ঘটলেও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গাছের টব, পুরোনো ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এমন অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো অপসারণ ও ভূমিকম্প সহনীয় ইমারত তৈরির কথা বলছেন প্রকৌশলীরা।
রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী ঘনবসতি ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর নারায়ণঞ্জ। কাজের সূত্রে এই শহরে স্থানীয়দের চেয়ে অন্যান্য জেলার বাসিন্দাদের সংখ্যা অনেক, যাদের আবাসনের চাহিদা মেটাতে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। গত ২০/২৫ বছর পূর্বে নির্মিত এসব ইমারত নীতিমালা অনুসরণ করলেও– তার আগের অনেক ভবন নির্মাণকালে মানা হয়নি সেসব নীতিমালা। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ শহরেই অন্তত ৩৬টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা রয়েছে সিটি করপোরেশনের কাছে। যেগুলো মাঝারি ভুমিকম্পেই ধ্বসে পড়তে পারে।
সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড সদর থানাধীন বা শহর এলাকা হিসেবে পরিচিত। এই ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে অন্তত ৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রস্তুত করেছিলো নাসিক। চলতি বছরের ১৮ মার্চ একটি ভবনের ভেতর গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটে, এতে ভবনটি ধ্বসে পরে। নিহত হন– একজন দোকান মালিক ও দুজন কর্মচারী। বর্তমানে তালিকা অনুযায়ী ৩৬টি ভবন রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। তবে অপসারণের ক্ষেত্রে ভবন মালিকদের গাফলতি, মামলা জটিলতাকে দায়ী করছে নাসিক। তাই ঝুঁকির মধ্যে রয়ে গেছে এসব ভবনসহ আশেপাশের বাসিন্দাদের জীবন।
২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪১টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রকাশ করে। এরপর দফায় দফায় চিঠি দিয়ে পাঁচটি ভবন অপসারণে সক্ষম হয়। বিস্ফোরণে ধসে পড়ে আরও একটি। সেই হিসাবে, ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত ৩৬ভবন এখনও অপসারণ করতে পারেনি। অন্যদিকে সিটির অন্তর্গত সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রস্তত করতে পারেননি নাসিক কর্তৃপক্ষ।
তালিকায় উল্লেখিত ভবনগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, টানবাজার এলাকার ৪৭ মহিম গাঙ্গুলি সড়কের সাইদুর রহমান ইদুর ভবন; ২১ এম মালেহ রোডের এমদাদুল হক ভুঁইয়ার ভবন; টানবাজার ৩ নং মথুয়া রায় রোডের দস্তগীর আহমেদের ভবন; এসএম মালেহ রোডের অতিঃ জেলা প্রশাসকের ভবন; নিতাইগঞ্জ এলাকার ২৬৩ বিকে রোডের রহিম ভুঁইয়ার ভবন; ৩০ বিকে রোডের আবুল কাইয়ুম গং এর ভবন; শাহসুজা রোডের একেএম লুৎফরের ভবন এবং ওল্ড ব্যাংক রোডের মাইনুদ্দিনের ভবন।
ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য ভবনের মধ্যে– দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকার ৩৬৭/২ ফরিদ আহম্মেদের ভবন; ২৫৮/১ সামসুজ্জোহার ভবন; ২৬৮/১ এ তাহমিনা খাতুনের ভবন; বঙ্গবন্ধু সড়কের ১০৮ জিয়াউল হকের ভবন; ১০৪ খাজা নাজমুল হুদা খন্দকারের ভবন; তামাকপট্টি এলাকার শহীদ নগরের মহিউদ্দিন বেপারী গং এর ভবন; সুলতান গিয়াস উদ্দিনের রোডের অজিত রায়ের ভবন; নিউ চাষাঢ়া এলাকার আলী ইমামের ভবন এবং গলাচিপা মোড়ের স্কাউট ভবন উল্লেখযোগ্য।
এতগুলো ভবন দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকার বিষয়ে নাসিকের নগর পরিকল্পনাবিদ মঈনুল ইসলাম বলেন, "আমরা ধারাবাহিকভাবে ভবন মালিকদের চিঠি দিয়েছি। মামলা ও উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা, আইনি জটিলতা এবং মালিকানা সম্পর্কিত জটিলতার কারণে এসব ভবন অপসারণ করতে সমস্যা হচ্ছে। তবে এসব স্থানে যেন কেউ বসবাস করতে না পারে সেজন্য পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। তারপরেও অনেকে চোরাই লাইন ব্যবহার করে। আমরা চেষ্টা করছি ভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলার জন্য।"
সিটি করপোরেশনের অবকাঠমো বিষয়ক একজন কর্মকর্তা বলেন, 'রাজউক দায়িত্ব নেয়ার পর ভবনগুলো অপসারণের দায়িত্ব আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। অথচ তারা ঠিকই ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয় ও পরিদর্শন করে। শুধু অপসারণের দায়িত্ব চাপায় আমাদের ওপর। আমরা মাঝে মাঝেই অভিযান চালাই। ভবনগুলো পুরোনো এবং কয়েক দশক আগে নির্মিত হওয়ায় কিছু ভবনের মালিক ওয়ারিশসূত্রে অনেকজন। অনেক মালিকের সন্ধান মেলে না। অভিযান চলাকালে তিতাস, ডিপিডিসির সহায়তা কম পাওয়া যায়।"
তালিকার বাইরেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে এর সত্যতা স্বীকার করে নগর পরিকল্পনাবিদ মঈনুল ইসলাম বলেন, "প্রাথমিকভাবে ভবন মালিক তার নিজ নিরাপত্তার স্বার্থে বুয়েট থেকে টেস্ট করাতে পারেন। এরপর তার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ভবন সংস্কার করতে পারেন। এতে বাড়ির বাসিন্দারা অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত থাকবেন। তবে ভবন সংস্কারের উপযোগী না হলে– তা ভেঙ্গে ফেলা ছাড়া উপায় নেই। ভেঙ্গে ফেলার মত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন তালিকার বাইরে নেই। কিন্তু, মাঝারি মানের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থাকতেই পারে।'