আতঙ্কে দিন কাটছে রুমায়, ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা
পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) হামলা চালিয়ে সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্র লুট এবং ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের করে নিয়ে যাওয়ার পর পাঁচ দিন কেটে গেলেও আতঙ্ক কাটেনি বান্দরবানের রুমা উপজেলার বাসিন্দাদের। দিনের বেলা উপজেলা সদরের বাজারে কিছুটা লোকসমাগম হলেও, সন্ধ্যা নামতেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে এলাকাগুলো। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছেন ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়রা জানায়, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। তাই এসব এলাকায় পণ্য বিনিময় ও ব্যবসা বাণিজ্যে সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে আজ শনিবার (৬ এপ্রিল) ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের এখন আর বসে থাকার সময় নেই। আমরা এখন কঠোর অবস্থানে যাব।'
তিনি বলেন, 'বান্দরবানে সব সময় শান্তির সুবাতাস বইতো। এখানে কাদের ইন্ধনে বা সহযোগিতায় এমন ঘটনা ঘটল, তা খুঁজে বের করা হবে।'
এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা গোয়েন্দা সংস্থা কারো ব্যর্থতা আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, 'অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো কাজ শুরু করে দিয়েছে।'
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এসব তৎপরতা সত্ত্বেও আতঙ্ক কাটেনি স্থানীয় বাসিন্দারা।
রুমা বাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি অঞ্জন বড়ুয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বলেন, দুর্ধর্ষ ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার পর থেকে মানুষ ভয়ে ভয়ে দিন পার করছে। এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য ও পণ্য বিনিময়ে কমে গেছে। এতে ব্যবাসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
রুমা উপজেলা পরিষদের অদূরে প্রায় ১০ বছর ধরে একটি চায়ের দোকান পরিচালনা করে আসা মোহাম্মদ আলমগির জানান, এরকম পরিস্থিতি তিনি আগে কখনো দেখেন নি। সবার মাঝে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তার দোকানে কাস্টমার নেই বললেই চলে।
ওই এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আবু ছিদ্দিক জানান, রুমা একটি পর্যটননির্ভর এলাকা। পর্যটক না এলে এই এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামে। চারিদিকে যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, তাতে আগামী ঈদে পর্যটক সমাগম নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাতে রাত ৮টা ১৫ মিনিটে কেএনএফের ১০০ জনের সশস্ত্র দল বান্দরবানের রুমার সোনালী ব্যাংক শাখায় ডাকাতি করে, ব্যাংকের অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায় এবং ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে।
পরদিন বুধবার বেলা ১টার দিকে থানচি উপজেলার বাজারে কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের দুটি শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার সঙ্গেও কেএনএফ জড়িত বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুক্তিপণ দেওয়ার পর নেজাম উদ্দিনকে ছেড়ে দেয় কেএনএফ সদস্যরা। পরে তাকে উদ্ধার করে বান্দরবানে র্যাবের সদর দপ্তরে নেওয়া হয়। শুক্রবার সকালে নেজাম উদ্দিনকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।