কিরগিজস্তানে চাকরির কথা বলে ইউটিউবে বিজ্ঞাপন; টাকা নিয়ে দেওয়া হতো ভুয়া কাগজপত্র
কিরগিজস্তানে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া কাগজপত্র দেওয়ার অভিযোগে মানবপাচারকারী চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন জান্নাত ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি ট্রাভেল এজেন্সির সত্ত্বাধিকারী ইব্রাহীম মল্লিক নাহিদ (৩৫), এবং শারমিন হোসেন লাবনী (৩৬) ও আরিফুর রহমান সাদী (২৪)।
সিআইডি বলছে, তারা কিরগিজস্তানে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে শতাধিক ভুক্তভোগীর কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এ চক্রের পাল্লায় পড়া ভুক্তভোগী একজন রিকশাচালকের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (৬ মে) তাদেরকে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের নলিয়াপাড়ার রিকশাচালক সোনা মিয়া ইউটিউবে মোটা অঙ্কের বেতনে কিরগিজস্তানে যাওয়া নিয়ে ট্রাভেল এজেন্সিটির একটি ভিডিও দেখেতে পান।
এরপর বাড়িঘর বিক্রি করে টাকা জমা দিয়ে এজেন্সিটি থেকে ভিসা ও বিমানের টিকিট পান তিনি। তবে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ ভিসার তথ্য না পেয়ে সোনা মিয়াসহ তিনজনের যাত্রা স্থগিত করে।
এ ঘটনায় গত ২৪ এপ্রিল পল্টন থানায় একটি মানবপাচার মামলা দায়ের করেন সোনা মিয়াসহ আরও দুই ভুক্তভোগী।
সিআইডি'র কর্মকর্তা আজাদ রহমান বলেন, ইউটিউবে জান্নাত ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল-এর বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে সোনা মিয়া পাঁচ লাখ টাকা জমা দেন। তার সঙ্গে আকাশ ও আকতার নামক আরও দুই ব্যক্তি একই পরিমাণ অর্থ জমা দিয়েছিলেন।
বিজ্ঞাপনে গাড়ি ধোয়ার ওয়ার্কিং ভিসায় কিরগিজস্তানে গিয়ে মাসে ৬০–৬৫ হাজার টাকা বেতনের লোভ দেখানো হয় বলে জানান সিআইডি'র এ কর্মকর্তা।
'এজেন্সি থেকে তাদের ভিসা ও বিমান টিকিট দেওয়া হয়। কিন্তু গত ৭ এপ্রিল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন পুলিশ অনলাইনে তাদের ভিসার তথ্য না পেয়ে যাত্রা স্থগিত করে,' বলেন আজাদ রহমান।
পরে ভুক্তভোগী তিনজন এজেন্সিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো সদুত্তর না পেয়ে ২৪ এপ্রিল পল্টন থানায় মামলা দায়ের করেন।
মঙ্গলবার (৭ মে) সন্ধ্যায় মুঠোফোনে সোনা মিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আর্থিক স্বচ্ছলতার আশায় বাড়িঘর, গরু বিক্রি করে ও ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ওই এজেন্সিতে জমা দিই। বিমানবন্দরে গিয়ে জানতে পারি ওরা জাল কাগজপত্র দিয়েছে।'
এখন তাকে মাসে ৩০ হাজার টাকার কিস্তি দিতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, 'অন্যের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে গিয়ে আমি আজ একেবারে রাস্তার ফকির।'
সিআইডি জানিয়েছে, অভিযুক্তরা এর আগে যাদের অভিবাসীকর্মী হিসেবে কিরগিজস্তানে পাঠিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই সেখানে মানবপাচারের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।