তিন দিন বন্ধ থাকার পর চালু হলো এনভয় গ্রুপের কারখানা, ২ শতাধিক শ্রমিক চাকরিচ্যুত
শ্রমিকদের জেনারেল ডিউটি নিয়ে অসন্তোষের জেরে তিন দিন বন্ধ থাকার পর আজ বুধবার সকাল থেকে এনভয় গ্রুপের তিনটি তৈরি পোশাক কারখানা চালু হয়েছে।
এদিকে আন্দোলনের ঘটনায় মোট ২০৩ জন শ্রমিককে চাকুরিচ্যুত করেছে কারাখান কর্তৃপক্ষ। শ্রমিক নেতারা বলছেন, ঈদের আগে চাকরিচ্যুত হওয়ায় শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়বেন।
গ্রুপটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারায় অনুযায়ী গত রবিবার (২৬ মে) কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
ওই আইনে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে বেআইনি ধর্মঘটের কারণে মালিক আংশিক বা সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে পারবেন এবং এ ধরনের বন্ধের ক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকরা কোনো মজুরি পাবেন না।
চাকুরিচ্যুত হওয়া এক শ্রমিক জানান, গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সন্ধ্যায় কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দিয়ে শুক্রবার জেনারেল ডিউটি করানোর ঘোষণা দিলে ঝামেলা শুরু হয়। শ্রমিকরা বিষয়টি মেনে নেননি।
শ্রমিকদের এ বিরোধিতার কারণ হিসেবে তিনি জানান, ঈদুল ফিতরের সময় ১১ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছিল। আর সরকারি ছুটির বাইরের অতিরিক্ত ছুটির জন্য পরবর্তী সময়ে শুক্রবারগুলোতে তাদের দিয়ে অতিরিক্ত ডিউটি (জেনারেল ডিউটি) করানো হয়। কিন্তু কাজ করার পরও কর্মীদের ওভারটাইম সুবিধা দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, 'মূলত আসন্ন ঈদে নির্ধারিত ছুটির বাইরে শ্রমিকরা যে অতিরিক্ত ছুটি নেবেন, সেটি সমন্বয়ের জন্য মালিকপক্ষ শ্রমিকদের জেনারেল ডিউটি করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু শ্রমিকরা সেটি মেনে নেননি।
গ্রুপটির ওই কর্মকর্তা আরও জানান, গত শনিবার (২৫ মে) সকালে কারখানায় কাজে যোগ দেওয়ার আধা ঘণ্টা পর জেনারেল ডিউটির প্রতিবাদ, হাজিরা বোনাস প্রদান ও প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার অব্যাহতিসহ কয়েকটি দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। এরই জেরে পরদিন রবিবার (২৬ মে) থেকে শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী এক নোটিশে তিনটি কারখানা- এনভয় ফ্যাশনস লিমিটেড, এনভয় ডিজাইন লিমিটেড ও মানতা অ্যাপারেলস লিমিটেড অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
গতকাল মঙ্গলবার পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমই কার্যালয়ে সব পক্ষের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে আজ থেকে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি শ্রম আইনের ২০ ধারার অধীনে মোট ২০৩ জন শ্রমিককে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তও নেয় মালিকপক্ষ।
গ্রুপটির ওই কর্মকর্তা জানান, ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকরা আইন অনুযায়ী তাদের যাবতীয় সুবিধাসহ একটি ঈদ বোনাস পাবেন।
শিল্প পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আজ থেকে ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়ায় অবস্থিত গ্রুপের তিনটি কারখানাই চালু হয়েছে। শ্রমিকরাও কাজে যোগ দিয়েছেন।
জানতে চাইলে এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম মুর্শেদী এ বিষয়ে বিজিএমইএর কর্মকর্তা মনসুর খালেদের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে মনসুর খালেদ কারখানা মালিকদের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।