কোরবানির আগে চড়া মশলার বাজার
ঈদুল আজহার আগে দেশের বাজারে মসলা জাতীয় পণ্যের দাম তুঙ্গে রয়েছে। ডলার সংকট, ডলারের তুলনায় বিনিময় হার বৃদ্ধিসহ নানান কারণে এক বছরের ব্যবধানে মসলা পণ্যের দাম কয়েকগুণ পর্যন্ত বেড়েছে।
এলাচ, জিরা, লবঙ্গ, গোলমরিচ, দারুচিনি, তেজপাতার মতো শুকনা পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। আর কাঁচা মসলার মধ্যে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দামও ৫০-১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে সাধারণ মানুষকে আগের তুলনায় অনেক বেশি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।
শুক্রবার (১৪ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি বাজারে ঈদুল আজহার জন্য মসলা জাতীয় পণ্য কিনছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আমান উল্লাহ।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বলেন, 'বাসায় বলে দিয়েছি খুব প্রয়োজন ছাড়া তরকারিতে মসলা না ব্যবহার করতে। এক বছর আগেও খুচরায় ১০-২০ টাকার মসলা কেনা যেত। এখন ২০ টাকায়ও মসলা কেনা যায় না।'
দেশের অন্যতম ভোগপণ্যের পাইকারি আড়ত খাতুনগঞ্জে মসলা জাতীয় পণ্যের বাজারের অস্থিরতা বিরাজ করছে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত একমাস ধরে মসলা জাতীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী তিন মাস আগে বেশিরভাগ মসলা জাতীয় পণ্য আমদানি করা হলেও, নানান অযুহাতে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের তৎপরতার অভাবে অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে মসলার বাজার।
গত মাসের শেষ সপ্তাহে রাজশাহীতে এক কর্মশালা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছিলেন, 'কোরবানির ঈদের মসলা তিন মাস আগেই আমদানি করা হয়ে গেছে। ডলার সংকটের কথা বলে এলসি খুলতে না পারার অজুহাতে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এলসি খুলতে কোনো সমস্যাও নেই।'
এক বছর আগেও এলাচের কেজি ছিল দেড় হাজার টাকা। গত দুই মাসে পণ্যটির দাম বেড়ে চার হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।
বর্তমানে খুচরা বাজারে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৩৩০০-৩৮০০ টাকা। একমাস আগেও যা ছিল ৩০০০ টাকা।
শুকনা মসলার মধ্যে জিরা পাইকারিতে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৭০ টাকায়। দেড় বছর আগে এর দাম ছিল ৩৫০ টাকা। বর্তমানে বর্তমানে খুচরায় প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। একমাস আগেও ছিল ৬০০ টাকা।
গোলমরিচের কেজি দুই দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে ১০০-১৫০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ টাকা। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১২০০ টাকা। গোলমরিচ একমাস আগে ছিল ৮০০ টাকা কেজি এবং এক বছর আগে ছিল ৬৫০-৬৭০ টাকা।
গত বছর প্রতি কেজি লবঙ্গ খুচরায় বিক্রি হয়েছিল ১৫০০ টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া এক বছর আগে খুচরায় ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া দারুচিনি বর্তমানে ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একমাস আগে এর দাম ছিল ৪৮০-৫০০ টাকা। পণ্যটি বর্তমানে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা (ভাঙা) ও ৪৮০ (স্টিক)।
এক বছরের ব্যবধানে তেজপাতার দামও দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে খুচরায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। তবে তিন মাসের বেশি সময় ধরে পণ্যটির দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
বাংলাদেশ পাইকারি গরম-মসলা ব্যবসায়ী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অমর কান্তি দাশ টিবিএসকে বলেন, 'ডলার সংকটের কারণে মসলা জাতীয় পণ্যের দাম আগেই বেড়েছে। ঈদের আগেও কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া ভারতের দাম বাড়লে, এখানেও দাম বাড়ানো হয়। এলাচের ডিও বিক্রির কারণে অনেক টাকা উধাও হয়ে গেছে। এ কারণে পণ্যটি বিক্রি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এসব অস্থিরতার কারণে দাম বেড়েছে। আশা করছি, দুই-তিন দিনের মধ্যে দাম কমবে।'
অন্যদিকে, কাঁচা মসলার মধ্যে সবচেয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে আদার বাজারে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে খুচরায় প্রতি কেজি আদা ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। পণ্যটির দাম প্রতিদিনই বাড়ছে।
পেঁয়াজের সরবরাহ ঠিক থাকার পরও পণ্যটি খুচরায় কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮৮-৯০ টাকায়। একমাসে আগেও ৭০ টাকা ছিল। খুচরায় প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। একমাস আগে ছিল ১৫০ টাকা।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স নাজিম অ্যান্ড বাদার্সের ব্যবস্থাপক অমল সাহা টিবিএসকে বলেন, 'এলাচ বিক্রি হয়েছে জুয়ার মতো। ইতোমধ্যে বাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে। শুধু কাগজ বিক্রি হয়েছে। পণ্য কেউ দেখেনি। ৭-৮ জন ছোট ব্যবসায়ী উধাও হয়ে গেছে। ঈদের পর আরও কয়জন উধাও হয়, বলা যায় না। এসব প্রভাব বাজারে পড়ছে। সিন্ডিকেট যেভাবে চায়, বাজার সেভাবে চলে। কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।'
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ টিবিএসকে বলেন, 'পাইকারি পর্যায় থেকে খুচরা পণ্য ইতোমধ্যে বের হয়ে গিয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি দামে কেনায়, বেশি দামে বিক্রি করছে। তবে বাজারে অভিযান ও নজরদারি অব্যাহত রাখা হয়েছে।'