হেফাজতে থাকা সমন্বয়কদের নিয়ে পরিবারকে দুশ্চিন্তা না করার অনুরোধ ডিবির
'নিরাপত্তার স্বার্থে' কোটা আন্দোলনের যে পাঁচ সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে– তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে পরিবারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
আজ রোববার (২৮ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
গত শুক্রবার নিরাপত্তাজনিত সমস্যা দেখিয়ে নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত সন্ধ্যাতে আরো দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম এবং হাসনাত আবদুল্লাহকে নিয়ে আসা হয় ডিবি কার্যালয়ে।
এবিষয়ে ডিএমপির এই অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন লাগিয়েছে, সেই দুর্বৃত্তদের, জামায়াত-শিবির চক্রদের ধরার দায়িত্ব আমাদের কাছে। কেউ যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে, এবং বিভিন্ন জায়গায় বলে, তাদের সঙ্গে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে– এটা জানার পর আমাদের নৈতিক দায়িত্ব তাদের নিরাপত্তা দেওয়া। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঘিরেই কিন্তু একটি অসাধু চক্র বা জামায়াত-বিএনপি এই সুযোগে (কোটা আন্দোলনে) অনুপ্রবেশ করে– একটি গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিল। 'সেই কারণে আমি মনে করি, এই চক্র আবারো শিক্ষার্থীদের কোনোকিছু করে আন্দোলনে কিছু করতে চাইবে। সেজন্যই নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে নিয়েছি।'
তিনি বলেন, 'নিরাপত্তার স্বার্থে যাদেরকে আমরা নিয়ে এসেছি, তাদের পরিবারের কাছে অনুরোধ করব দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। আমরা মনে করি, তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা দেখছি। পরিবার যেন নিশ্চিন্ত থাকে সেই বিষয়ে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই।'
কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে কত দিন রাখা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা সমন্বয়কদের সঙ্গে এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলব।
নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি সমন্বয়কদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, যেহেতু তারা নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের কাছে রয়েছেন, তারপরেও তাদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সুন্দর একটা আন্দোলন ছিল, এই আন্দোলনের সময় তাদের সঙ্গে কারা যোগাযোগের চেষ্টা করেছে, বা কারা তাদের উস্কানি দিয়েছিল– এসব বিষয়ে আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি। তারা কিছু নাম ও নম্বর আমাদের দিয়েছে।
অনেকে বলছেন ডিবি কার্যালয়ে এনে সমন্বয়কদের মারধর করা হচ্ছে, এমন প্রশ্ন করা হলে হারুন বলেন, যারা ফেসবুকে লেখালিখি করে তারা অনেকের নাম ধরে বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে। আমি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছি, এই গুজবও ছড়িয়েছে। রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নামেও কিন্তু অনেক গুজব ছড়িয়েছে। তাহলে এটাও বিশ্বাস করার কোনো কারণ নাই।'
বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন আসছে যে আন্দোলনকারীদের পুলিশ ভয়ভীতি দেখাচ্ছে যাতে করে তারা আর একত্রিত হতে না পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব গুজবে আপনারা বিশ্বাস করবেন না। আইনের স্বার্থে আমরা অনেককে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করেছি।
এদিকে সমন্বয়কদের পরিবার ও তাদের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা দিতে হলে যেন তাদের পরিবারের কাছে রেখে নিরাপত্তা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, 'কারা কী বলেছে, এবিষয়ে আমরা কোনো কিছু জানি না। আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো আবেদন আসে নাই। আমাদের কাছে এ বিষয়ে কেউ কিছু বলে নাই। আমরা জাস্ট নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নিয়ে এসেছি। তাদেরকে আন্দোলন সম্পর্কে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি।'