মুনিয়া হত্যার পুনঃতদন্ত ও আনভীরের শাস্তি দাবি পরিবারের
মোশারাত জাহান মুনিয়ার হত্যার পুনঃতদন্ত ও আনভীরের শাস্তি দাবি করেছে মুনিয়ার পরিবারের সদস্যরা।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে মোসারাত জাহান মুনিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রধান আসামী সায়েম সোবহান আনভীরসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগীর পরিবার।
মুনিয়া হত্যা মামলার আইনজীবী ব্যারিষ্টার এম সারওয়ার বলেন, মুনিয়া হত্যায় ন্যায়বিচার নিশ্চিতে তিন পক্ষের ব্যর্থতা ছিলো।
তিনি বলেন, "রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেছে তাদেরকে এই মামলা তত্ত্বাবধায়ন করতে হতো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটা সেল আছে গুরুত্বপূর্ণ মামলা তদারকির বিষয়ে। কিন্তু তারা সহজে ম্যানেজ হয়ে যায়।"
এম সারওয়ার আরো বলেন, "অন্যদিকে যারা তদন্ত রিপোর্ট দেয় তারা এবং কোর্ট ব্যবস্থাও ম্যানেজ হয়ে গেছে। কে ম্যানেজ করেছে, আপনারা জানেন। তিনি হলেন, কুখ্যাত আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তার চেম্বার বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, বড় বড় আসামিদের জামিন দেওয়া হয়েছে।"
সংবাদ সম্মেলনে মুনিয়ার পরিবারের সদস্যরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে মামলা পুনঃতদন্তের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া বলেন, "আমি যখন গুলশান থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম, তখন থেকেই বসুন্ধরা গ্রুপ এই হত্যা ও ধর্ষণ মামলার ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে তৎকালীন আইজিপি বেনজির এবং গুলশান থানার ডিসি সুদীপ কুমার, এডিসি নাজমুল, ওসি আবুল হোসেন, এসআই আলী আশরাফ (পিবিআই) সহ সায়েম সোবহান আনভীরকে বাঁচিয়ে দেয়ার জন্য নির্লজ্জ ভূমিকা রেখেছিলো। পরবর্তীতে গুলশান থানা আনভীরকে অব্যাহতি দিয়েই তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।"
তিনি আরো বলেন, "আমি এসব ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য একাধিকবার আবেদন করার পর এবং প্রায় ২৬ পৃষ্ঠার একটি চিঠি দেওয়ার পরেও তিনি আমার সাথে সাক্ষাৎ করেননি। আমি বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনার প্রশ্রয় না পেলে আনভীররা এতটা বেপরোয়া হয়ে ওঠার সাহস পেতো না।"
নুসরাত জানান, পিবিআই তাদের তদন্তে মুনিয়ার সন্তানকে আনভীরের সন্তান বলে চিহ্নিত করলেও তারা আনভীরের ডিএনএ পরীক্ষা করতে বলেনি। তারা মামলার অন্যান্য আসামি সাইফা মিম ও পিয়াসাকে গ্রেপ্তার করলেও আনভীরকে একটিবারের জন্যও জিজ্ঞাসাবাদ বা গ্রেপ্তার করে নি।
তিনি বলেন, "আমি এখন আইন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন আমার বোনের ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। আমার বোন কিছু ভুল করলেও, তার সাথে চরম অন্যায় করা হয়েছে। সেটার দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে।"
২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাতে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ২১ বছর বয়সী মোশারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই রাতেই 'আত্মহত্যার প্ররোচনা'র অভিযোগ এনে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া।
মামলার এজাহারে বলা হয়, 'বিয়ের প্রলোভন' দেখিয়ে সায়েম সোবহান আনভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন মুনিয়ার সঙ্গে। ওই বাসায় তার যাতায়াত ছিল। কিন্তু বিয়ে না করে তিনি উল্টো 'হুমকি' দিয়েছিলেন মুনিয়াকে।