চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে পরীক্ষামূলক যান চলাচল শুরু
চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে 'মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে'-এর পরীক্ষামূলক যান চলাচল শুরু হয়েছে।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সাড়ে ৯ মাস পর গত শনিবার থেকে প্রাথমিকভাবে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস চলছে। তবে টোল আদায় ও পুরোদমে চালুর বিষয়ে এখনও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া যায়নি।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বলেন, 'এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামোর কাজ সম্পন্ন। পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চালানো হচ্ছে। গাড়ি চলাচলে কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে কি না- পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যদি কোনো সমস্যা পাওয়া যায়, তাহলে বিশেষজ্ঞ পরামর্শকদের কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা নিয়ে কাজ করা হবে।'
তিনি বলেন, 'টোলের হার চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রণালয়। গাড়ি চলাচলের বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বিষয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে পুরোদমে গাড়ি চলাচল শুরু হবে।'
সিডিএ'র তথ্যমতে, গত বছরের ১৪ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি চট্টগ্রাম নগরের ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ 'মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে'-উদ্বোধন করেছিলেন। ওই দিন সারা দেশে ১৫৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছিল।
সাময়িকভাবে যান চলাচল শুরু হলেও আপাতত বাস, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার।
এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্পের (মূল উড়ালসড়ক থেকে ওঠানামার পথ) কাজ শেষ না হওয়ায় গাড়িগুলো নগরের লালখান বাজার থেকে সরাসরি পতেঙ্গা পর্যন্ত যাতায়াত করছে। নগরীর লালখান বাজার থেকে গাড়ি ওঠার সুযোগ রাখা হয়েছে। আর এই প্রান্তে গাড়ি নামছে টাইগারপাসে। আর পতেঙ্গা প্রান্তে গাড়ি ওঠানামা করছে।
এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে গত এপ্রিলে। তখন থেকে যান চলাচলের উপযোগী হয়ে যায় এক্সপ্রেসওয়ে; কিন্তু সড়কবাতি, ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপনের কাজ বাকি থাকায় গাড়ি চলাচল শুরু হয়নি।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও চীনের র্যাঙ্কিন।
এই এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন অংশে ১৫টি র্যাম্প (গাড়ি ওঠা-নামার পথ) রয়েছে। মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনও র্যাম্পের কাজ সম্পন্ন হয়নি, তাই গাড়ি চলাচল শুরু হয়নি।
তবে চলাচল শুরুর আগেই এই প্রকল্পের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় অভিযোগ তদন্ত এবং নির্মাণকাজের গুণগত মান যাচাইয়ে গত ১০ জুন একটি উপকমিটি গঠন করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।
এতে চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফকে আহ্বায়ক, বগুড়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. মজিবুর রহমান এবং সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্য পারভীন জামানকে সদস্য করা হয়। উপকমিটির গত ৪ জুলাই থেকে তিন দিনের সফরেও ছিলেন।
তাদের সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। তবে সরকার পতনের পর তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। এখন ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। খরচ বেড়েছে ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা।
২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সংশোধিত প্রকল্প একনেকের সভায় অনুমোদিত হয়। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ
২০২০ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজই শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। পরে দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন প্রান্ত দিয়ে যাতায়াতে কারের জন্য ৫০ থেকে ৮০ টাকা প্রস্তাব করেছিল সিডিএ;তবে মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করেছে ১০০ টাকা। বাসের ক্ষেত্রে সিডিএর প্রস্তাব ছিল ওঠা–নামার স্থানভেদে ২৫০ ও ২৮০ টাকা; মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত করেছে ৩০০ টাকা। কাভার্ড ভ্যানের জন্য সিডিএর প্রস্তাব ছিল ৪৫০ টাকা আর মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করেছে ৫০০ টাকা।