গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ
গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া ও কোনাবাড়ী এলাকায় দুটি কারখানার শ্রমিকেরা আজ মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকাল থেকে বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।
এসময় তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও যানবাহনের চালকেরা ভোগান্তিতে পড়েন।
পুলিশ ও শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর মোগরখাল এলাকায় এপিএল কারখানার শ্রমিকরা গত মাসের শুরুতে এই কারখানার বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। তখন মালিকপক্ষ বেতন দিতে অপারগতার কথা জানিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার বেতন পরিশোধ করার দিন নির্ধারণ করে। পরে শ্রমিকেরা মালিকপক্ষের কথা মেনে নিয়ে আর আন্দোলন করেননি। তবে গতকালও কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন দেয়নি।
একারণে শ্রমিকরা সোমবার রাতেই বিক্ষোভ করে মহাসড়ক অবরোধ করেন। কিন্তু মালিকপক্ষের সাড়া না পেয়ে তারা রাত ৯টার দিকে বাড়ি ফিরে যান। পরে আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আবার শ্রমিকরা গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া মোড়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন। এসময়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভোগড়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় দিকে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া, গাজীপুরের ভোগড়া থেকে টাঙ্গাইলের দিকে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন এ দুই মহাসড়কে চলাচলকারী হাজার হাজার মানুষ।
কারখানার শ্রমিক হামিদুল ইসলাম বলেন, 'কয়েক মাস ধরে কারখানা বন্ধ। কিন্তু বন্ধ হওয়ার আগে আমরা যে কাজ করেছি, সেই বেতন এখনও পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। ৩০ সেপ্টেম্বর বেতন দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে সড়কে নামতে হয়েছে।'
অন্যদিকে, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকার এম এম নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা টিফিন বিল, নাইট বিল ও হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে কাজ বন্ধ করে কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করছেন। গতকাল সোমবারও বিক্ষোভ করেছেন তারা।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের তথ্যমতে, পুরো জেলায় সব মিলিয়ে নিবন্ধিত কারখানা আছে ২ হাজার ৬৩৩টি। এর বাইরে অনিবন্ধিত কারখানা আছে ৪০০ থেকে ৫০০টি। এসব কারখানায় প্রায় ২২ লাখ শ্রমিক কাজ করেন।
সূত্র আরও জানায়, বিচ্ছিন্নভাবে ৯টি কারখানা ছাড়া, গাজীপুরের ৯৮ শতাংশ পোশাক কারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক আছে। পোশাক কারখানাগুলোয় কর্মীরা সকালে কাজে যোগ দিয়েছেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, 'এপিএল অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার মালিকের গতকাল শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার কথা ছিল। বেতন না দেওয়ায় শ্রমিকেরা সকাল থেকে বিক্ষোভ করছেন। তারা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'মঙ্গলবার জেলার ৯টি কারখানা বন্ধ আছে। এর মধ্যে ৪টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ১টি কারখানা লে-অফ, ১টি অস্থায়ী বন্ধ এবং ৩টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।'