ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’: আজ রাতেই আছড়ে পড়তে পারে ভারতীয় উপকূলে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'দানা' একটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে এবং এটি আজ (২৪ অক্টোবর) রাতেই ভারতীয় উপকূলে আছড়ে পড়তে পরে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ইতোমধ্যেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টি সরসরি বাংলাদেশে আঘাত করার সম্ভাবনা না থাকলেও উপকূলীয় এলাকাগুলোতে টানা তিনদিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া, ঘূর্ণিঝড়ের একটি প্রভাব পড়তে পরে বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে। সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৩–৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশের সমুদ্র বন্দরসমূহ— চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রাকে ৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো ওমর ফারুক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টির যে গতিপ্রকৃতি তাতে বাংলাদেশে ল্যান্ডফল হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই। তবে ডান দিকের ঘূর্ণনের ফলে বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে এর প্রভাব পড়তে পারে।"
এদিকে, বুধবার দিবাগত রাতে আবহাওয়ার সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর ৮) অধিদপ্তর জানায়, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় 'দানা' আরও উত্তর- উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় (১৮.১° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.২° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।
এটি বুধবার (২৩ অক্টোবর, ২০২৪) দিবাগত রাত ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৫১০ কি.মি. দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরো উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
বিশেষ বুলেটিনে আরও জানানো হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কি.মি. এরমধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কি.মি.— যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১১০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
ফলে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক ও আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ টিবিএসকে বলেন, "আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় দানা ওড়িশা রাজ্যের পুরী ও পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের মধ্যবর্তী উপকূলের উপর দিয়ে ২৪ অক্টোবর (আজ) তারিখ সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ২৫ অক্টোবর সকাল ৬টার মধ্যে সিভিয়ার সাইক্লোন স্টর্ম বা তীব্র ঘূর্ণিঝড় (৮৯–১১৭ কিমি/ঘণ্টা) রূপে স্থলভাগে আঘাত করার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে।"
ঘূর্ণিঝড় 'দানা'র প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে জেলা সদরসহ সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
বুধবারের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৫১টি স্টেশনের মধ্যে ৪৪টি স্টেশনেই বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিাপাত রেকর্ড করা হয় ঢাকা বিভাগের আরিচায় ৫৩ মিলিমিটার। এছাড়া, সাতক্ষীরায় ৩৪ মিলিমিটার, সীতাকুণ্ডে ২৩ মিলিমিটার, ফেনীতে ২৪ মিলিমিটার, নারায়ণগঞ্জে ২৩ মিলিমিটার, টাঙ্গাইলে ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বাংলাদেশে কেমন প্রভাব পড়বে?
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পুরী ও দিঘা অঞ্চলের মাঝামাঝি এলাকায় ল্যান্ডফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরফলে ঘূর্ণিবায়ুর বাহিরের অংশের বাতাস সুন্দরবন এলাকায় আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ টিবিএসকে বলেন, "ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসে সরাসরি ক্ষতি না হলেও বাংলাদেশ টানা তিনদিন বৃষ্টি ও খুলনার উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সম্মুখীন হতে পারে। জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড়টি ল্যান্ডফল হলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে খুলনার উপকূলীয় জেলাগুলোতে।"
"ইতোমধ্যে খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশালের বেশ কয়েকটি এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আর এ বৃষ্টিপাতের মাত্রা আজ বৃহস্পতিবার আরও বৃদ্ধি পাবে এবং ২৬ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি হবে। এতে শীতকালীন সবজিসহ কৃষির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে," বলেন এই আবহাওয়াবিদ।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, "ঘূর্ণিঝড়টির অতিক্রম করার যে এলাকা, সেখান থেকে বাংলাদেশের উপকূল ডান দিকে। আর ডান দিকে থাকার কারণে বাংলাদেশের উপকূলে এর প্রভাব থাকবে অপেক্ষাকৃত বেশি। বাঁ দিকে থাকলে সাধারণত কম থাকে।"