অবৈধ দখলদাররা যত প্রভাবশালীই হোক, ব্যবস্থা নেওয়া হবে: রিজওয়ানা হাসান
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, 'অবৈধ দখলদাররা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বনভূমি ও পরিবেশ সুরক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বৃক্ষনিধন ও শিল্পকারখানার দূষণ বন্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
আজ শনিবার সকালে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পরে দুপুরে রিজওয়ানা হাসান গাজীপুর মহানগরীর পিটিআই অডিটোরিয়ামে তরুণদের নদী ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নিয়ে সচেতন করা 'নদী রক্ষায় যুব সম্মেলন' শীর্ষক এক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে গাজীপুরে অবৈধভাবে দখল হওয়া ৯০ একর বনভূমির মধ্যে ১৬ একর ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, জেলা প্রশাসকদের বনের সীমানা নির্ধারণের কাজ দ্রুত শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বন দখলকারীদের প্রতিরোধ করতে কীভাবে কাজ করতে হয় তা আমরা জানি। আগামী তিন মাসের মধ্যে দখল হওয়া জমি উদ্ধারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে সব দিক পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নবায়নের সময় জনগণের মতামত নিতে হবে।
নদী দূষণের কারণের কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, আমরা নদীকে অনেকগুলো কারণে দূষণ করি। তার মধ্য তিনটি বড় কারণে বেশি দূষণ হয়। একটি হচ্ছে শিল্প দূষণ, সিটি কর্পোরেশন-পৌরসভার বর্জ্য ও কারখানার পয়োবর্জ্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্লাস্টিক দূষণ।
তিনি বলেন, এখনো মরে যাওয়া, দখল হওয়া নদীগুলো আমাদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের কারণে জলবায়ুর মতো ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মুখে তরুণ প্রজন্ম। পরিবেশের যে বিরূপ প্রভাব সেটির কবলে পড়বে। আগামী প্রজন্মকে যদি একটি দূষণমুক্ত নদী না দিতে পারি তাহলে ওরা পানি পাবে কোথায়, মাছ পাবে কোথায়?
তিনি আরও বলেন, প্লাস্টিক নদীতে পড়ে কোনো কোনো নদীতে তিন থেকে ছয় মিটার পর্যন্ত প্লাস্টিকের আস্তরণ পড়ে যায়। যেগুলো আর পরিস্কার করা সম্ভব হয় না। একটি প্লাস্টিকে যে পরিমাণ কেমিক্যাল দেওয়া হয়, কিন্তু রিসাইকেল করার সময় কেউ চিন্তা করে না যে, এই কেমিক্যালগুলো কী হবে। এই প্লাস্টিকগুলো নদীতে গিয়ে ভেঙে ভেঙে মাইক্রোপ্লাস্টিক হয়। এই প্লাস্টিকগুলো মাছ খায়। পরে এসব আমাদের রক্তে ও মায়ের দুধে মিশে যায়। এগুলোকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
পলিথিনের ব্যাগের বিষয়ে বলেন, আমাকে অনেকেই বলে প্লাস্টিকের ব্যাগ তো এখনও বন্ধ হয়নি। আমি বলি, আপনি যখন বাজারে যান দোকানদার যখন আপনাকে পলিথিন ব্যাগ দেয়, আপনি ওটা নেন৷ আপনি ক্রেতা হিসেবে বলেন, এটা নেব না। আপনার বাবা-দাদারা চটের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতেন। আপনি কেন বাসায় থেকে একটি চটের ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছেন না? সরকার এই পলিথিন সরানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এখন কথা হচ্ছে ক্রেতাদেরকেও সচেতন হতে হবে। তরুণ প্রজন্ম হিসেবে আপনি প্লাস্টিকে বর্জন করুন, এটি ব্যবহার বন্ধ করে দিন। পরিবর্তন চাইলে আগে আমাদের সবাইকে পরিবর্তন হতে হবে।
নদী দখলের বিষয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, নদীকে একটি সুন্দর প্রাণব্যবস্থা হিসেবে দেখতে হবে। আমরা কি নদীর সৃষ্টি করতে পারি? যদি সৃষ্টি করতে না পারি, তাহলে কেন ধ্বংস করি? নদীগুলোকে শিল্প কারখানার ভাগাড়ে পরিণত করার কোনো অধিকার শিল্প মালিকদের দেওয়া হয়নি। নদী বাঁচাতে প্রয়োজনে আমরা দু-চারটে শিল্প কারখানা বন্ধ করে দেব।
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবুর সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেনের সঞ্চালনায় সম্মেলনের শুরুতেই ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেন গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট সেন্টার মালেশিয়ার ম্যানেজার ড. কালিদাসান কালিসাম।
বিশেষ অতিথি ছিলেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান, গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন, গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিচার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ প্রমুখ।