জুলাই ঘোষণাপত্র: ১৫ জানুয়ারি না-ও হতে পারে; আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক দল, অন্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে সরকার
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানিয়েছেন, বৃহত্তর ঐকমত্য অর্জনের জন্য অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হওয়ায় জুলাই ঘোষণাপত্র পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারি না-ও প্রকাশিত হতে পারে।
তিনি আরও জানান, এ ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে সরকার।
আগামী সপ্তাহে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ফরেইন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি।
মাহফুজ আলম বলেন, 'আমরা এটিকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ঐক্যবদ্ধ দলিল হিসেবে তৈরি করতে চাই।'
তিনি বলেন, ছাত্রদের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা এসেছে। সরকার একটি ঘোষণাপত্র দেবে, তবে তা হবে সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে। আমরা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছি।
'আগামী সপ্তাহে আলোচনা শুরু করে তা শেষ করব। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের সঙ্গেও আলোচনা হবে,' বলেন তিনি।
তবে মাহফুজ বলেন, ঘোষণাপত্র প্রকাশে খুব বেশি দেরি হবে না।
'শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১৫ জানুয়ারি এটি ঘোষণা করার দাবি করা হয়েছে। যেহেতু সরকার সকলের [অংশীদারদের] সঙ্গে কথা বলতে চায়, তাই এটি [সময়সীমা] কিছু সময়ের জন্য বাড়ানো হতে পারে। তবে খুব বেশি দেরি হবে না,' বলেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম বলেন, এটি সংস্কারের ওপর নির্ভর করবে। এ মাসের মধ্যেই সরকার কয়েকটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পাবে।
'প্রতিবেদন পাওয়ার পর রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের [অংশীজন] সঙ্গে আমরা আলোচনা করব। রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবে কতটুকু সংস্কার আমরা করতে চাই,' বলেন তিনি।
নির্বাচনের সময় নির্ধারণ সম্পর্কে মাহফুজ আলম বলেন, সংস্কারের মেয়াদই নির্ধারণ করবে নির্বাচন কখন হবে। 'এটি দীর্ঘমেয়াদি, স্বল্পমেয়াদি বা মধ্যমেয়াদি হবে কি না, তা রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।'
স্থানীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ নাগরিকসেবা সঠিকভাবে পাচ্ছে না।
'এমন পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে বিষয়টি রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতেই হবে,' বলেন এ উপদেষ্টা।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও জানিয়েছিলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বতী সরকার আলোচনা করবে।
৫ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে, এটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করা হবে।'
কিছুদিনের মধ্যে ঘোষণাপত্র জারি করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা [সরকার] সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।'
৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে 'প্রক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন' বা 'জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র' কর্মসূচি পালন করা হবে বলে ৩০ ডিসেম্বর ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসুদ বলেন, 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা জুলাই প্রক্লেমেশন ঘোষণা করব। সেটি সংবিধানে যুক্ত করে সেকেন্ড রিপাবলিক করার দায়িত্ব সরকার নেবে।'
তবে একইদিন (৩০ ডিসেম্বর) অন্তবর্তী সরকার জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করার ঘোষণা দিলে নিজেদের কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে আসে আন্দোলনে নেতৃত্বে দেওয়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে ৩০ ডিসেম্বর রাতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান শফিকুল আলম।
যদিও তার আগের দিন রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জুলাই বিপ্লবের যে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে, তার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্রের কথা জানানোর পর ৩১ ডিসেম্বর পূর্বঘোষিত কর্মসূচির বদলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শহীদ মিনারে 'মার্চ ফর ইউনিটি' শীর্ষক সমাবেশের আয়োজন করে।
সে সমাবেশ থেকে তারা আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই প্রক্লেমেশন ঘোষণার দাবি জানায়।
সমাবেশে নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, 'আগামী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে জুলাই প্রক্লেমেশন ঘোষণা করতে হবে। আগামী নির্বাচিত সরকার নতুন সংবিধান রচনা করবে। আর সেই সংসদ হবে গণপরিষদ। তারাই সংবিধান রচনার পর চূড়ান্ত অনুমোদন করবে।'
সর্বশেষ শনিবার (৪ জানুয়ারি) জুলাই ঘোষণাপত্রের পক্ষে সারাদেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের গণসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
ওইদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, 'সরকার থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণার উদ্যোগ নেওয়ার পরে এখন পর্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ দেখিনি। তাই আগামী ৬ জানুয়ারি থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপি গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করা হবে।'
'আমাদের কাছে জুলাই ঘোষণাপত্রের ড্রাফট [খসড়া] রেডি আছে। সরকার চাইলে আমরা তাদের সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত,' তিনি আরও বলেন।
জুলাই ঘোষণাপত্রে ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতা পরিষ্কার করাসহ ৭টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।