আমদানির প্রভাবে মোটা চালের দাম কমলেও সরু চাল অপরিবর্তিত
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/01/25/rice-saturday-analysis.jpg)
চাল আমদানি এবং দেশের ৬৪ জেলায় ওএমএসের (খোলাবাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয়) মাধ্যমে সুলভ মূল্যে চাল বিক্রির ঘোষণার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। গত মাসের শেষ দিকে হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া চালের দাম পাইকারি পর্যায়ে এখন নিম্নমুখী।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে বেশিরভাগ মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা কমেছে। আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে সব ধরনের চালের দাম আরও কমবে। যদিও খুচরা পর্যায়ে বেশিরভাগ জায়গায় আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল। আর মিনিকেট, জিরাশাইল ও কাটারিভোগসহ অন্যান্য সরু চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের চালের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, পাইকারিতে গুটিস্বর্ণা প্রতিকেজি ৪৯-৫০ টাকা, ব্রি-২৮ ৫৮-৬০ টাকা, ব্রি-২৯ ৬০-৬১ টাকা এবং পাইজাম ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় এসব চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা কমেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এছাড়া মিনিকেট ৮০-৮২ টাকা, নাজিরশাইল ৭৮-৮২ টাকা এবং কাটারিভোগ ৯০–৯৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যদিও খুচরা পর্যায়ে এখনও স্বর্ণা ৫৪-৫৮ টাকা, ব্রি-২৮ ৬২-৬৪ টাকা এবং ব্রি-২৯ ৬৪-৬৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছু দোকানে প্রতিকেজি ২-১ টাকা কমেও বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ানবাজারের চাল বিক্রেতা মো. শাওন টিবিএসকে বলেন, "গত ৫-৭ দিনে মোটা চাল বস্তায় (৫০ কেজি) ৫০-১৫০ টাকা কমেছে। তবে চিকন চালের দাম অপরিবর্তিত আছে।"
এদিকে, চট্টগ্রামেও পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা কমেছে। চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি, বহদ্দার হাট, চকবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে খুচরায় মোটা ও মাঝারি মানের চালের মধ্যে প্রতিকেজি স্বর্ণা ৫৫-৫৬ টাকা, পাইজাম ৫৭-৬০ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৫৮-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক সপ্তাহ আগে স্বর্ণা ৫৮-৬০ টাকা, পাইজাম ৬০-৬২ টাকা, বিআর-২৮ ৬২-৬৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে মিনিকেট, জিরাশাইল চালের দাম গত সপ্তাহের মতোই ৭৫-৮০ টাকা রয়েছে। এছাড়া কাটারি নাজির বিক্রি হচ্ছে আগের দাম ৭৬-৮০ টাকা কেজি ও বাসমতী ৯২-৯৫ টাকা কেজি।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবেও, গত এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা কমে ৫৪-৫৬ টাকায় নেমেছে, মাঝারি মানের চালের দাম কমেছে ২ টাকা (৫৮-৬৫ টাকা), তবে সরু চালের দাম ৭০-৭৫ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানবাজারের চাল ব্যবসায়ী মো. ইদ্রিচ জানান, "চালের দাম কমার দিকে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে মিল থেকে বিআর-২৮, পাইজামসহ কিছু মোটা চাল যে দামে এসেছিল, এই সপ্তাহে প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ১৮০-২০০ টাকা কমেছে। এর ফলে পাইকারির পাশাপাশি খুচরা বাজারেও দাম কমছে। তবে কিছু চালের দাম এখনও স্থিতিশীল।"
আমনের ভালো ফলন সত্ত্বেও গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চালের দাম কেজিতে ৪-১০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার চাল আমদানির ওপর জোর দেয়।
চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকার পাইকারি চাল ব্যবসায়ী ও আর এম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শেখ সেলিম বলেন, ২০২০ সাল, অর্থাৎ করোনার পর থেকে চালের বাজারে দাম কমানোর রেকর্ড নেই। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন সময় আমদানির উদ্যোগ নিলেও আমদানি হয়েছে কম। যার ফলে বাজারেও তেমন প্রভাব পড়েনি।
তবে এইবারে চাল আমদানির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। আমদানি অব্যাহত থাকলে নিত্য এই খাদ্য পণ্যের দাম আরও কমতে পারে বলে মনে করছেন এই ব্যবসায়ী।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার চলতি অর্থবছরে ১০ লাখ টন চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসব চাল কেনা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ৩.০৫ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। সর্বশেষ শনিবার ভারত থেকে ১৬,৪০০ টন চাল নিয়ে মোংলা বন্দরে নোঙর করেছে দুটি জাহাজ।
মোংলার সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুস সোবাহান বলেন, "শনিবার ভারতের ধামরা বন্দর থেকে ১৬ হাজার ৪০০ কেজি চাল নিয়ে নোঙর করেছে পানামা পতাকাবাহী 'বিএমসি আলফা' ও থাইল্যান্ডের পতাকাবাহী 'এমভি সি ফরেস্ট'। চালের নমুনা সংগ্রহ করে ভৌত পরীক্ষা শেষে আগামীকাল সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) খালাস প্রক্রিয়া শুরু হবে।"
চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, "বিগত বছরগুলোতে ব্যবসায়ীরা আমদানির অনমুতি নিলেও চাতাল মালিক কিংবা বড় ব্যবসায়ীদের ভয়ে চাল আমদানি করতো না। তবে এবারে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে পর্যাপ্ত চাল আমদানি হচ্ছে। আমদানির এই ধারা অব্যাহত থাকলে চালের দাম আরও কমে আসবে।"
দেশের ধান-চালের চাহিদার বড় অংশ মেটায় উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ থেকে আসা চালে। জেলাটির মিলগুলোতে বর্তমানে স্বর্ণা, কাটারি, মিনিকেটের সরবরাহ বেশি। এসব চাল গত কয়েকদিনে কেজিতে ১-৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে বলে জানিয়েছেন মিল মালিকরা।
নওগাঁর চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার টিবিএসকে বলেন, "আমদানি বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম কমছে। আমনের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে চালের দাম বেড়ে গিয়েছিল। তবে এখন যেহেতু আমদানি বেড়েছে চালের দাম কমতির দিকে। সামনে আরও কমতে পারে।"
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন টিবিএসের বগুড়া প্রতিনিধি