যে কারণে বরিশালের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে আইনি নোটিশ পাঠালেন কাউন্সিলররা
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ তিনজনকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ৭ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
আইনি নোটিশ পাওয়া বাকী দুজন হলেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও সচিব। ১৫ দিনের মধ্যে তাদের নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
কাউন্সিলরদের পক্ষে এই নোটিশ পাঠান অ্যাডভোকেট আজাদ রহমান। রোববার রাতে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, নোটিশ দাতারা সিটি করপোরেশন থেকে মাসিক সম্মানী ৫০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা ৪৩ হাজার টাকা পাচ্ছেন। কিন্তু অন্যসকল কাউন্সিলরদের ৫০ হাজার টাকা করেই মাসিক সম্মানী দিয়ে যাচ্ছে সিটি করপোরেশন। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া হোল্ডিং ট্যাক্স ১ হাজার শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে নোটিশদাতাদের জনগণের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এছাড়াও নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, সরকারি আদেশ-নির্দেশ অনুযায়ী সিটি করপোরেশন পরিচালনার নিয়ম থাকলেও তা মেয়রসহ নোটিশ পাওয়া তিনজন খামখেয়ালিভাবে কাজ চালাচ্ছেন।
বরিশাল মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই সাত কাউন্সিলরই আওয়ামী লীগের সমর্থক। তবে গত বছরের আগস্টে মেয়রের সঙ্গে প্রশাসনের দ্বন্দ্ব হয়। এই দ্বন্দ্বের সময় এই সাতজন কাউন্সিলর বরিশাল সদর আসনের সাংসদ ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের পক্ষে অবস্থান নেন। প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করে আসছেন তারা। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
গত ১৮ আগস্ট রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে মধ্যে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে বিভিন্ন শুভেচ্ছা ব্যানার সরাতে যান সিটি করপোরেশনের লোকজন। তখন বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসারদের সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সেখানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় করপোরেশনের কর্মীদের।
ঘটনার পরপর বরিশাল সিটি মেয়র কে প্রধান আসামি করে তৎকালীন ইউএনও মুহিবুর রহমান ও তৎকালীন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। ঘটনার তিন দিন পর বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবনে বিষয়টি সমঝোতা হয়।
সেই ঘটনার পর পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সাতজন কাউন্সিলর তাঁর পক্ষে অবস্থান নেন। এরা হলেন ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের হুমায়ুন কবির, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৌহিদুল ইসলাম, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদ আহমেদ, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়াউর রহমান, ১ নম্বর ওয়ার্ডের আমির হোসেন বিশ্বাস, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের শরীফ মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের এনামুল হক।
নোটিশের বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, এই সাতজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মহানগর আওয়ামী লীগের কিংবা জেলা আওয়ামী লীগের কোন কমিটির সদস্য নন, এটা সিটি কর্পোরেশনের বিষয় এখানে দলীয় কোন মন্তব্য করার সুযোগ নেই।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেন বলেন, "নোটিশের বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই তবে গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে জানতে পারলাম আমাদেরকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশ হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।"
নোটিশ প্রদানকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজাদ রহমান বলেন, "নোটিশ গ্রহীতাদের নোটিশ গ্রহণের ১৫ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। জবাব না পেলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
বরিশালের মহানগর পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কোতোয়ালি মডেল থানার ওসির করা দুটি মামলায় গত সপ্তাহে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ। তবে সেখানে কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি।