হাসিনার ঘনিষ্ঠের দেওয়া লন্ডনে টিউলিপের আরেকটি 'ফ্রি' ফ্ল্যাট: সানডে টাইমস
শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক সহযোগী কর্তৃক যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে উপহার দেয়া আরও একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে। ফিনান্সিয়াল টাইমসের পর এবার এনিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমস।
সানডে টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সালে বাংলাদেশি আইনজীবী মঈন গণি—ফ্ল্যাটটি টিউলিপের বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে হস্তান্তর করেন। পরে আজমিনা বিনামূল্যে এই ফ্ল্যাটটি টিউলিপকে ব্যবহার করতে দেন।
২০০৪ সালেও লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় একটি দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট টিউলিপ উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন বলে গত ৩ জানুয়ারি এক প্রতিবেদনে জানায় ফিনান্সিয়াল টাইমস। ফ্ল্যাটটি উপহার দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আবাসন ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালিফ।
যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথি অনুযায়ী, ওই ফ্ল্যাটের জন্যও কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হয়নি টিউলিপকে।
ফ্ল্যাটটি ২০০১ সালে ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড দিয়ে কেনা হয়। বর্তমান দাম নথিতে উল্লেখ না থাকলেও একই ভবনের আরেকটি ফ্ল্যাট গত আগস্টে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে।
ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথি অনুযায়ী, মঈন গণির ফ্ল্যাটটি টিউলিপ সিদ্দিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল 'কোনো অর্থ বা আর্থিক মূল্য ছাড়াই'। ১৮ বছর বয়সে আজমিনা ফ্ল্যাটটি উপহার হিসেবে পান। তখন সবেমাত্র অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করতে যাচ্ছিলেন আজমিনা, এরপর সেখানে থাকতে শুরু করেন বড় বোন টিউলিপ সিদ্দিক।
তবে ঠিক কবে টিউলিপ ওই ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেন তা স্পষ্ট নয়, তবে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ওয়ার্কিং মেনস কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি কোম্পানির নথিতে তার ঠিকানা হিসেবে ফ্ল্যাটটি তালিকাভুক্ত করেন।
২০১৪ সালে ক্যামডেন আর্টস সেন্টারের ট্রাস্টি হওয়ার পর এবং ২০১৪ সালের মার্চে হ্যাম্পস্টেড ওয়েলস অ্যান্ড ক্যাম্পডেন ট্রাস্টের ট্রাস্টি হওয়ার পরও তিনি একই ঠিকানাটি ব্যবহার করেছিলেন।
তার স্বামী, ক্রিশ্চিয়ান পার্সি, ২০১৬ সালের মে মাস পর্যন্ত এই ঠিকানা তার হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিলেন, তখন পর্যন্ত সিদ্দিক হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্নের লেবার এমপি ছিলেন।
আজমিনা ২০২১ সালে হ্যাম্পস্টেডের ফ্ল্যাটটি ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি করেন। আর আগের মালিক মইন গণি বহু বছর ধরে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। ২০২১ সালে তাকে বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্যানেলে যোগ দেওয়ার জন্য হাসিনার সরকার মনোনীত করে।
টিউলিপ প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন। তবে তার এক ঘনিষ্ঠ সূত্র সানডে টাইমসকে জানিয়েছে যে, তিনি কিছু সময় তার বোনের ফ্ল্যাটে বাস করেছেন, যা অনেক পরিবারের জন্য সাধারণ একটি বিষয়।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, অন্য পরিবারের সদস্যদের বাসস্থান সংক্রান্ত বিষয় তাদের নিজস্ব ব্যাপার, এবং অন্যদের রাজনৈতিক সংযোগ টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখে না—এমনটাই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।