‘স্ট্যাম্প দিয়ে আজ স্যারের সাথে খেলব’ শিক্ষককে আক্রমণ করার আগে বলেছিল জিতু
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর স্ট্যাম্পের আঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কলেজ শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের মৃত্যু হয় গত সোমবার ভোরে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী শরাফুল ইসলাম জিতু (১৬) ও তার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে ক্রীড়া টুর্নামেন্ট চলাকালে জিতু শিক্ষক উৎপলের ওপর হামলা করে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল সাইফুল হাসান।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন শনিবার (২৭ জুন) মেয়েদের ক্রিকেট ম্যাচ চলছিল। সবাই খেলা দেখছিল। এ সময় বেলা অনুমান ২টার দিকে মাঠের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা উৎপলের মাথায় ক্রিকেট ষ্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করে একজন ছাত্র। সঙ্গে সঙ্গে আহত উৎপলকে উদ্ধার করে স্থানীয় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবীর বলে, 'জিতু সেদিন একটি স্ট্যাম্প নিয়ে আসলে মনির স্যার তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন এটা দিয়ে কি করবে? উত্তরে জিতু বলেছিল, এই স্ট্যাম্প দিয়েই আজ স্যারের সাথে খেলব। এর কিছুক্ষণ পরই শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের উপর অতর্কিত হামলা চালায় জিতু।'
শিশু মনে শিক্ষক হত্যার নির্মম এই ঘটনার পুরোটাই যেন দাগ কেটে রয়েছে আবীরের।
যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখার প্রভাষক মো. মনির হোসাইন টিবিএস'কে বলেন, 'জিতুকে হাতে একটি স্টাম্প নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে সে একটি স্ট্যাম্প দিয়ে কি করবে? এটা জিজ্ঞাসা করেই আমি সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে যাই, আমার কথার উত্তরে জিতু ঠিক কি বলেছিল- তা আমি খেয়াল করতে পারিনি, এর কিছুক্ষণ পরই ঘটে ঘটনাটি'।
সাভারের আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় অবস্থিত হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার দিন প্রতিষ্ঠানটিতে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলাকালীন একটি কাঠের ক্রিকেট স্ট্যাম্প নিয়ে কলেজ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে জিতু।
প্রথমে কলেজ ভবনের দ্বিতীয় তলায় দাঁড়িয়ে খেলা দেখলেও, এক পর্যায়ে নিচে নেমে মাঠের এক পাশে দাড়িয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখার শিক্ষক ও শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি উৎপল কুমারের দিকে এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে তার মাথায় এলোপাতাড়ি আঘাত করা শুরু করে। মারধরের এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য শিক্ষকরা এগিয়ে গেলে কলেজ মাঠেই স্ট্যাম্প ফেলে বের হয়ে যায় জিতু।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই অনেকটা বেপরোয়া প্রকৃতির ছেলে জিতু। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড় সে। জিতুর পরিবার স্থানীয়ভাবে আর্থিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণত কাউকেই খুব একটা পরোয়া করতো না সে। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর জিতুর পরিবার তাকে হাজী ইউনুস আলী কলেজের স্কুল শাখায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি করে।