'ঘৃণ্য কর্মে'র জন্য জন লেননের খুনির দুঃখপ্রকাশ, নিজের মৃত্যুদণ্ড দাবি
কিংবদন্তি রকস্টার জন লেননকে খুনের ৪০ বছর পর তার বিধবা স্ত্রী ইয়োকো ওনোর প্রতি দুঃখপ্রকাশ করেছেন খুনি মার্ক ডেভিড চ্যাপম্যান।
১৯৮০ সালে ওনোর চোখের সামনে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে লেনন নিজ অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে চ্যাপম্যানের গুলিতে নিহত হন।
গত মাসে এক শুনানিতে প্যারোলে তার মুক্তির আবেদন একাদশতম বারের মতো খারিজ করে দেন নিউইয়র্কের প্যারোল বোর্ড।
ওই শুনানিতে চ্যাপম্যান বলেন, ৪০ বছর বয়সী রকস্টারের 'খ্যাতি'তে বিমোহিত হয়ে তাকে মেরেছিলেন তিনি এবং এজন্য নিজের মৃত্যুদণ্ড কামনা করেন।
তিনি আরও বলেন, তার কাজটি চিরকালই 'ঘৃণ্য' হিসেবে বিবেচিত হবে এবং আমৃত্যু কারাবন্দি থাকার শাস্তি তিনি মাথা পেতে নিয়েছেন।
'তিনি ছিলেন আইকন'
'স্রেফ পুনরাবৃত্তি করে বলতে চাই, আমার অপরাধের জন্য আমি দুঃখিত,' নিউইয়র্কের ওয়েন্ডে কারেকশন ফ্যাসিলিটিতে প্যারোল বোর্ডের সামনে বলেন চ্যাপম্যান।
'আমার কাছে কোনো অজুহাত নেই। ঘটনাটি আমার আত্ম-গরিমার কারণেই ঘটেছে। ওই ঘটনাকে আমি নিষ্পাপ কারও প্রতি কোনো অপরাধীর করা সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ হিসেবেই গণ্য করি।'
'তিনি ভীষণ রকমের বিখ্যাত ছিলেন। তার চরিত্র কেমন বা তিনি কী ধরনের মানুষ ছিলেন- এসব কারণে কিন্তু তাকে খুন করিনি। সাংসারিক এক মানুষ ছিলেন তিনি। ছিলেন আইকন। তিনি এমনই মানুষ ছিলেন, যাকে নিয়ে চিরকালই কথা বলা যায়,' জন লেনন প্রসঙ্গে বলেন চ্যাপম্যান।
'বিটলস' গায়ক সম্পর্কে আরও বলেন, 'তিনি ভীষণ-ভীষণ-ভীষণ রকমের বিখ্যাত ছিলেন- শুধু এই একটা কারণেই তাকে খুন করেছি। আমি ভীষণ-ভীষণ-ভীষণ রকমের আত্ম-গরিমা, ভীষণ রকমের স্বার্থপরতায় ভুগে এ কাণ্ড ঘটিয়েছিলাম।'
'আমার কারণে ওই নারী যে যন্ত্রণা পেয়েছেন, সেজন্য তার কাছে দুঃখপ্রকাশ করছি,' ওনো প্রসঙ্গে বলেন চ্যাপম্যান।
এর আগে, ২০১৫ সালে এই খুনির প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার এক প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন জাপানি চিত্রশিল্পী ও জন লেননের দ্বিতীয় স্ত্রী ইয়োকো ওনো। সে সময়ে তিনি বলেছিলেন, 'তিনি (চ্যাপম্যান) যে কাজ একবার করেছেন, ভবিষ্যতে অন্য কারও সঙ্গেও করতে পারেন। এবার হয়তো আমি, হয়তো শন (জন-ওনো দম্পতির পুত্র), হয়তো অন্য কেউ তার শিকার হব। তাই বিষয়টি খেয়াল রাখা দরকার।'
অপরাধটি করার সময় চ্যাপম্যানের বয়স ছিল ২৫। এখন তিনি ৬৫ বছরের বৃদ্ধ। বিবাহিত। গত আট বছর ধরে যে ফ্যাসিলিটিতে থাকেন, এর কাছেই বসবাস তার স্ত্রীর।
প্যারোল বোর্ডের কাছে নিজেকে ভীষণ 'ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান' হিসেবে পরিচয় দেন চ্যাপম্যান।
তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাকে যে কারাগারে রাখা হয়েছে, সেখানে একজন কেরানি ও দ্বাররক্ষী হিসেবেও দায়িত্বপালন করেন তিনি।
'একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা'
লেননকে খুন করার সময় খুনির হাতে ছিল জে. ডি. স্যালিঞ্জারের উপন্যাস 'ক্যাচার ইন দ্য রাই'।
বইটির প্রতি নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে প্যারোল বোর্ডকে চ্যাপম্যান বলেন, নিজেকে এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রের মতোই 'একাকী' ও 'নিঃসঙ্গ' অনুভব করেন।
তিনি নিজের মৃত্যুদণ্ড দাবি করলেও ২০০৭ সালে নিউইয়র্কে এ ধরনের শাস্তি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়; অবশ্য, ১৯৬৩ সালের পর থেকে ওখানে কারওই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি।
'কেউ যখন জেনে-শুনে কারও খুনের নীলনকশা করে এবং তার কাজটি ঠিক নয়- বোঝা স্বত্ত্বেও নিজের স্বার্থে তা চরিতার্থ করে, এমন মানুষের আসলে মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য বলে আমি মনে করি,' জানান চ্যাপম্যান।
তিনি প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার যোগ্য কি না, সেটি আরও দুই বছর পর আরেকবার যাচাই করা হবে।
- সূত্র: বিবিসি