২৪ বছর পর কোথায় আছেন টাইটানিকের কুশীলবেরা
পর্দায় তারা জাহাজডুবির শিকার। তবে বাস্তবে হলিউডের মতো কঠিন ঠাঁইয়ে তাদের ভাসিয়েও ছিল সেই জাহাজ। টাইটানিক- জেমস ক্যামেরন পরিচালিত ১৯৯৭ সালের এই ছবিতে অভিনয় করার পর বহু অনামী, স্বল্পনামী, খ্যাতনামী অভিনেতা নিমেষে 'তারকা' হয়ে উঠেছিলেন।
২১ বছরের অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট তখন হলিউডে নতুন। ২২ বছরের লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও-ও কিছু দিন হলো অভিনয় জগতে পা রেখেছেন। পরিচিতি পাননি।টাইটানিক ছবির সৌজন্যে বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত হয়ে যান কেট-লিওরা।
এই ডিসেম্বরে ২৪ পূর্ণ করে ২৫-এ পা দেবে টাইটানিক। ২৫ বছর আগে বিখ্যাত হওয়া তারকারা এখন কে কোথায়, কীভাবেই বা তাদের দিন কাটছে? তারা কি এখনও ততটাই বিখ্যাত, না কি খ্যাতির শিখরে উঠে আবার নেমে গেছেন?
রেকর্ড বলছে, একদা ডুবন্ত জাহাজের সওয়ারিদের বেশিরভাগের জীবন উত্তাল হয়েছে গত ২৩ বছরে।
চরিত্র: রোজ ডিউইট বুকাতার
অভিনেত্রী: কেট উইন্সলেট। টাইটানিকে অভিনয়ের পর ১২ বছরে ছ'টি অ্যাকাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন কেট। হলিউডে তিনিই কনিষ্ঠতম অভিনেত্রী, যিনি ৩৩ বছর বয়সে ছ'টি অস্কার মনোনয়ন পান। এমনকি আন্তর্জাতিক সিনেমায় চারটি বিখ্যাত পুরস্কার এমি, গ্র্যামি, অস্কার এবং টনি জেতার রেকর্ড রয়েছে কেটের।
তবে ব্যক্তিগত জীবনে অশান্তিতে ছিলেন দীর্ঘদিন। ২০০৮-এ থিতু হন। এখন প্রিয় মানুষকে বিয়ে করে সন্তানদের নিয়ে সাসেক্সের এক বাংলোয় থাকেন কেট। সুখী জীবন।
চরিত্র: জ্যাক ডসন
অভিনেতা: লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। কেটের মতো লিওনার্দোরও উত্থান টাইটানিক থেকে। টাইটানিকে তার চরিত্রটি মুহূর্তে দর্শকদের মন কেড়ে নেয়। আবার জ্যাককে তলিয়ে যেতে দেখে বুকে কাঁটা বিঁধে ওঠে দর্শকদের।
টাইটানিকে জনপ্রিয়তা পেলেও সেরা অভিনেতার পুরস্কার পাননি এটা যেমন ঠিক, তেমন এটাও ঠিক যে টাইটানিকের পর অজস্র ভাল সিনেমায় অভিনয় করেছেন লিও। তার অধিকাংশ হিট। একই সঙ্গে সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত। তবে অস্কারের খরা কাটছিল না। শেষে ২০১৬ সালে টাইটানিকে অভিনয়ের ১৯ বছর পর 'দ্য রেভেন্যান্ট' ছবির জন্য অস্কার আসে লিওর হাতে।
বিয়ে করেননি। ২০১৭ সাল থেকে তার সঙ্গিনী এক আর্জেন্টিনা-আমেরিকান মডেল। নাম ক্যামিলা মোরোন। দু'জনেই লস অ্যাঞ্জেলেসের পার্ক সিটিতে একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন।
চরিত্র: মলি ব্রাউন
অভিনেত্রী: ক্যাথি বেটস। টাইটানিকে যখন তিনি অভিনয় করছেন, তার আগে বেশ কিছু টিভি সিরিজে অভিনয় করে ফেলেছেন ক্যাথি। তবে টাইটানিক তাকে জনপ্রিয়তা দিয়েছিল। কুলীন, নাক উঁচু ধনীদের ভিড়ে হঠাৎ বড়লোক হওয়া এবং কোনও কিছুর পরোয়া না করা চরিত্রটি দর্শক পছন্দ করেছিলেন। একটি দৃশ্যে জ্যাকের মায়ের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাকে। দর্শকদের মন জিতেছিলেন ক্যাথি। তবে জনপ্রিয়তা বেশিদিন উপভোগ করতে পারেননি।
প্রথমে জরায়ুর ক্যান্সার, পরে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। ৯ বছরের মাথায় দু'বার ক্যান্সারের চিকিৎসা হয় তার। দু'টি স্তনই বাদ দিতে হয়। চিকিৎসার ধকল তার শরীর নিতে পারেনি; দু'টি হাত অকেজো হয়ে যায় ক্যাথির।
চরিত্র: ক্যাল হকলি
অভিনেতা: বিলি জেন। টাইটানিকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ক্যাল। খলনায়ক। তবে চেহারাটি নায়ককে টেক্কা দেওয়ার মতো। টাইটানিকে অভিনয়ের পর বেশ কিছু ভাল ছবিতে অভিনয় করেছিলেন বিলি জেন। তবে ব্যক্তিগত জীবনে দীর্ঘদিন থিতু হতে পারেননি।
একের পর এক সুন্দরী অভিনেত্রী তার প্রেমে পড়েছেন। তবে সেই প্রেম টেকেনি। ২০১৪ সালে ক্যান্ডিস নেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। বিয়ে করেননি। বিলি এবং ক্যান্ডিস এখন দুই কন্যার বাবা-মা।
চরিত্র: রুথ ডিউইট বুকাতার
অভিনেত্রী: ফ্রান্সেস ফিশার। টাইটানিকের নায়িকা রোজের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ফ্রান্সেস। চরিত্রটি দর্শকদের অপছন্দের। তবে ফ্রান্সেসের অভিনয় দর্শকের মনে দাগ কেটেছিল। তার প্রমাণ টাইটানিকের পর ফ্রান্সেসের হাতে একের পর এক ছবি আসা।
হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা এবং পরিচালক ক্লিন্ট ইস্টউডের প্রেমিকা। আবার হলিউডের অন্যতম সুদর্শন অভিনেতা জর্জ ক্লুনির সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়েছেন।
চরিত্র: ক্যাপ্টেন
অভিনেতা: বার্নার্ড হিল। জাহাজের সঙ্গে নিজেকে সলিল সমাধি দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড জেমস স্মিথ। চরিত্রাভিনেতা বার্নার্ড হিল টাইটানিকের পর 'লর্ড অফ দ্য রিংস' সিরিজের তিনটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। পরে অবশ্য টিভিতে ফিরে আসেন।
চরিত্র: থমাস অ্যান্ড্রু
অভিনেতা: ভিক্টর গারবের। টাইটানিকের নকশাকারের চরিত্র। সুদর্শন, বিনয়ী, ধোপদুরস্ত। ভিক্টরের চরিত্র নজর কেড়েছিল। বহু নারী ভক্তও তৈরি হয়েছিল তার। তবে ২০১২ সালে তারা কিছুটা আশাহত হন। নিজেকে প্রকাশ্যে সমকামী বলে ঘোষণা করেন গারবার।
চরিত্র: বৃদ্ধা রোজ
অভিনেত্রী: গ্লোরিয়া স্টুয়ার্ট। টাইটানিকে যখন অভিনয় করেছিলেন, তখন বয়স ৮৭। ওই বছরেই অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন গ্লোরিয়া। তিনিই অস্কার মনোনীত প্রবীণতম অভিনেতা। ২০০৪ সালে শেষ ছবি করেন। তার ছ'বছর পর ১০০ বছর বয়সে মৃত্যু হয় গ্লোরিয়ার।
- সূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকা