নিউইয়র্কের বাফালোতে তুষারঝড়ে আক্রান্ত শত শত মানুষকে উদ্ধার করলো বাংলাদেশি কমিউনিটির স্বেচ্ছাসেবীরা
নিউইয়র্কের বাফালো শহরে তীব্র শীতের পাশাপাশি চলছে তুষারঝড়। এ অবস্থায় বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটির উদ্ধারকারী দল শহরের বাসিন্দাদের সাহায্যার্থে যা করেছে তা এবারই প্রথম নয়। আগেপরে একই রকম মানবসেবামূলক উদ্যোগের কারণেই বাফালো পরিচিত হয়েছে 'সিটি অব গুড নাইবোরস' নামে।
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এবারই প্রথম যে সহায়তা কাজ চালানোর সময় তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে।
৩০-৪০ জন স্বেচ্ছাসেবী তুষারঝড়ের সময় শত শত মানুষকে দুর্যোগ থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে গেছেন, তাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু তাদের ওপর জারি করা হয়েছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং টিকেটিং এর শিকার হয়েছেন, অর্থাৎ গাড়ি চালানোর জন্য নামতে পারবেন না।
নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন রাস্তায় গাড়ি বের করেই বিপদে পড়েছে বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটির উদ্ধারকারী দল। কিন্তু এই দলের একজন সদস্য মোহাম্মদ ওসমান শিমুল বলেন, "আমরা জানতাম এসময় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা চলছে, কিন্তু আমরা আমাদের মানুষদের সাহায্য করতে চেয়েছিলাম, তাই অন্য কোনোকিছুকে পাত্তা দেইনি।" তিনি নিজেদের দলটিকে 'বাংলাদেশি গ্রুপ' নামে অভিহিত করেন।
আর এখানে 'আমাদের মানুষ' বলতে কিন্তু তিনি সেখানে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কথা বোঝাননি। তিনি বাফালো শহরের বাসিন্দাদেরই বুঝিয়েছেন।
দুর্যোগকালে তারা শহরের প্রতিটি বাড়ির দ্বারে দ্বারে গিয়ে সবার অবস্থা দেখেছেন এবং স্পট চেক ও হাউজ কলের ব্যবস্থা করেছেন। সাতটি ভ্যান নিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ রাস্তায়ই ছিলেন এই স্বেচ্ছাসেবীরা। এরি কাউন্টি মেডিকেল সেন্টারের কাছে ছিল তাদের মূল কাজের জায়গা, তবে ওয়েস্টসাইড ও চিকটোয়াগাতেও সহায়তা কার্যক্রম চালিয়েছেন তারা।
শিমুল বলেন, "যেখানেই মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছে, আমরা গিয়েছি।"
তিনি জানান, এই এক সপ্তাহে সব মিলিয়ে তারা প্রায় ৫০০ মানুষকে তাদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে ওয়ার্মিং সেন্টারগুলোতে নিয়ে এসেছেন। প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মালিকানাধীন কিছু ভবনে বাড়িতে এসব ওয়ার্মিং সেন্টার বানিয়েছিলেন তারা। এর মধ্যে ছিল বেইলি এভিনিউর বাংলাদেশি প্লাজা, ফুগেরন স্ট্রিটের দেশি সেন্টার ও ফিলমোর এভিনিউর আল আকসা সুপারমার্কেট।
"আমাদের অবশ্যই একে অপরকে সাহায্য করতে হবে", বলেন শিমুল।
তিনি আরও জানান, বিদ্যুৎ প্রবাহ ও তাপমাত্রা স্বাভাবিক হওয়ার পর তারা স্থানীয়দের নিজ নিজ বাড়িতে পাঠাতে শুরু করেন- কিন্তু খালি হাতে নয়। যাদেরকে উদ্ধার করা হয়েছিল তাদের সবাইকে গরম খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, এমনকি পকেটমানিও সাথে দিয়ে দেওয়া হয়।
"আমাদের স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে যা কিছু টাকাপয়সা ছিল তা একসাথে করেই আমরা সবাইকে সাহায্য করেছি। তুষারের কারণে মানুষ কাজে যেতে পারেনি, তাই অনেকের হাতেই টাকা নেই।"
এমনকি এখনো এই বাংলাদেশি গ্রুপটি গরম খাবার সরবরাহ করে যাচ্ছে এবং গ্রাইডার স্ট্রিটে অবস্থিত লাভবার্ডস রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার পিক-আপ করে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে।
তরুণদের নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন, মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্যারেন্টস-এর মুখপাত্র ও শান্তিস্থাপক কারলান্ডা মিডোরস এই ব্ল্যাক কমিউনিটি ও বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে এই বাংলাদেশি গ্রুপটির সাথে কাজ করেন।
তিনি বলেন, "তারা খুবই সমঝদার এবং মানুষের জন্য এগিয়ে আসতে তাদের কোনো আপত্তিই নেই। তারা যা করছে সেটা আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় এবং সে কারণেই আমি তাদেরকে ভালোবাসি।"
কারলান্ডার সারা শরীর তুষারে আবৃত, সে অবস্থায়ই বিভিন্ন দরকারি কল রিসিভ করছিলেন তিনি এবং কোথায় কোথায় সাহায্য পাঠানো হবে তা সমন্বয় করছিলেন। "বাঙালি কমিউনিটির অনেক রেস্টুরেন্ট রয়েছে, তাই তারা নিজেরাই খাবার রান্না করে বিনামূল্যে সেগুলো বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন তারা আমাদের কাছে জানতে চায় কাদের আসলে খাবার প্রয়োজন এখন", বলেন কারলান্ডা।
কিন্তু তবুও কাজ এখনো শেষ হয়নি। বাংলাদেশি গ্রুপের খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির সাথে বৃহস্পতিবার মিডোরস জিওয়াইসি মন্ত্রণাকয়ের একদল স্বেচ্ছাসেবককে যুক্ত করে দিয়েছেন যারা ইস্ট সাইডে বরফ সরানোর কাজ করছে।
"যখন বরফ সরানোর জন্য মানুষ অপেক্ষা করছেন এবং অবশেষে বাইরে বেরিয়ে আসবে তখন যেন ভালো কিছু খেতে পারে সেই ব্যবস্থা করেছি আমরা। সবাই ভাবছে যে সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে, কিন্তু তা নয়। এখনো অনেক মানুষ আছে যাদের কোথাও যাওয়ার নেই।"
এদিকে শিমুল জানিয়েছেন, তিনি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য আপিল করবেন।
কিন্তু ভালো কাজ করতে গেলে কিছুটা ক্ষতির শিকার হতেই হয়, তাই বিষয়টি সহজভাবেই নিয়েছেন শিমুল। তার অকপট স্বীকারোক্তি- "আমরা এখানকার মানুষদের ভালোবাসি।"
সূত্র: দ্য বাফালো নিউজ