গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে উদ্ধার শিশুটিও মারা গেছে
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় মুমূর্ষু মায়ের গর্ভ থেকে উদ্ধার করা সেই শিশুটি মারা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
গত রবিবার মধ্যরাতের কিছু পরে রাফাহ হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে বেবি সাবরিন আল-সাকানির জন্ম হয়। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) শিশুটি মারা যায়। তার মায়ের পাশে তাকে দাফন করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে রাফায় দুটি বিমান হামলায় বেবি সাবরিনসহ ১৬টি শিশু নিহত হয়। তারা যে হাউজিং কমপ্লেক্সে থাকতেন, বোমা হামলায় সেখানকার সবাই নিহত হন।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা হামাস যোদ্ধা ও তাদের অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
বেবি সাবরিনের মায়ের নাম ছিল সাবরিন।
গত শনিবার মধ্যরাতের ঠিক আগে আল-সাকানি পরিবারের বাস করা বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলার সময় সাড়ে সাত মাসের গর্ভবতী ছিলেন সাবরিন। সেখানে তিনি, তার স্বামী শুকরি এবং তাদের তিন বছর বয়সী মেয়ে মালাক ঘুমিয়ে ছিলেন।
হামলায় সাবরিন মারাত্মক আহত হয়েছিলেন এবং তার স্বামী ও শিশু মালাক ঘটনাস্থলেই মারা যান।
তবে উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পরে জানতে পারেন, শিশুটি তার মায়ের গর্ভে জীবিত আছে। তারা সাবরিনকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জরুরি সিজারিয়ান সেকশন করে শিশুটিকে উদ্ধার করেন।
চিকিৎসকরা জানায়, বেবি সাবরিনের শারিরীক অবস্থা অস্থিতিশীল ছিল এবং তাকে একটি ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছিল।
চিকিৎসকরা জানায়, জন্মের সময় তার ওজন ছিল মাত্র ১.৪ কেজি (৩.১ পাউন্ড) এবং সে তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছিল।কারণ নির্ধারিত সময়ের আগেই শিশুটির জন্ম হয়।
রাফাহ'র আমিরাতি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি নিও-ন্যাটাল ইউনিটের প্রধান ড. মোহাম্মদ সালামা বলেন, 'এই শিশুটির এ সময় মায়ের গর্ভে থাকার কথা ছিল, কিন্তু সে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।'
বেবি সাবরিনের নানী মিরভাত আল-সাকানি বিবিসিকে বলেন, তার পরিবার শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় নিহত ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষের মধ্যে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু।
ইসরায়েলি হিসাব অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিক নিহত হয় এবং ২৫৩ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বর্তমানে আনুমানিক ১.৪ মিলিয়ন মানুষ রাফায় বাস করছে। আইডিএফ যুদ্ধের শুরুতে দক্ষিণে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।
তবে ইসরায়েল বলেছে, তারা রাফায় স্থল হামলার পরিকল্পনা করছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, তারা শেষ পর্যন্ত হামাসকে পরাজিত করার এবং জিম্মিদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়ে যাবে।
স্যাটেলাইট চিত্রে দক্ষিণ গাজায় দুটি নতুন তাঁবু শিবির দেখা গেছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাফাহ থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে রাফায় পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন চালানোর পরিবর্তে একটি লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ পদ্ধতি অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছে, যা আরও বড় মানবিক সংকটের সূচনা করতে পারে।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি