ইনস্টাগ্রামে ভাসছে ‘অল আইজ অন রাফাহ’, কী বার্তা দিচ্ছে এ ছবি?
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি ভাসছে। সেই ছবিতে লেখা রয়েছে- 'অল আইজ অন রাফাহ'। আর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ছবিটি ট্রেন্ডিংয়ে উঠে এসেছে। এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ছবিটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার হয়েছে ৩৭ মিলিয়ন বার। মূলত এই শব্দগুচ্ছ দিয়ে গাজায় চলমান গণহত্যা বোঝানো হচ্ছে।
কেন এ ছবি?
ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার শিকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানাতে ব্যবহারকারীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ছবি পোস্ট করেছেন। মূলত এটি একটি ক্যাম্পেইন। বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী ও কর্মীদের নেতৃত্বে ক্যাম্পেইনটি পরিচালিত হচ্ছে।
পাশাপাশি এটি গাজার দক্ষিণাঞ্চলে শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করা ফিলিস্তিনিদের প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করারও একটি প্রচেষ্টা।
বহু সেলিব্রেটিও সোশ্যাল মিডিয়ায় #AllEyesOnRafah লিখে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
'অল আইজ অন রাফাহ' লেখা ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি করা ভাইরাল 'অ্যাক্টিভিস্ট আইকনোগ্রাফির' প্রথম ছবিগুলোর মধ্যে একটি বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
'মিসইনফরমেশন' নিয়ে পড়াশোনা করা কাতারের হামাদ বিন খলিফা ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সহযোগী অধ্যাপক মার্ক ওয়েন জোন্স বলেছেন, দেখে মনে হচ্ছে ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি করা।
রাফায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৪৫
এদিকে রবিবার স্থানীয় সময় রাতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার রাফায় একটি শরণার্থী শিবিরে শিশুসহ অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) থেকে ইসরায়েলকে রাফায় অভিযান বন্ধের নির্দেশের মাত্র কয়েকদিন পর এ হামলা হলো।
গত সপ্তাহে রাফায় অভিযান না চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। নির্দেশে বলা হয়েছিল, ইসরায়েলকে অবিলম্বে রাফায় সামরিক অভিযান এবং অন্য সব ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।
তেল আবিবকে লক্ষ্য করে হামাসের রকেট হামলার কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েল এ হামলা চালায়। অবশ্য হামাসের ছোঁড়া বেশিরভাগ রকেটই ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে দখলদার রাষ্ট্রটি।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান চালিয়ে রাফাহ ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এর আগ পর্যন্ত এ সীমান্তটিই ছিল গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর প্রধান প্রবেশদ্বার।
রাফায় অভিযানের কারণে ১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে পালাতে বাধ্য হন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই এর আগেই গাজা যুদ্ধের কারণে ঘরবাড়ি হারিয়ে রাফায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ফিলিস্তিনিরা বলছেন, গাজার একটি জায়গাও নিরাপদ নয়। সবখানেই ইসরায়েলি হামলার ঝুঁকি রয়েছে। গত কয়েকটি মাস ধরে তারা কেবল গাজা উপত্যকার এদিক থেকে ওদিকেই ছুটে বেড়াচ্ছেন।
গাজার মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণের শহর খান ইউনিসে অভিযানের আগে যখন ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলে থাকা ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে সরে যেতে বলেছিল, তখন কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি রাফায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাফায় বিমান হামলার কারণে এখন মাত্র একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু রয়েছে।
ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর প্রধান পথটি বন্ধ করে দেওয়ায় মানবিক সহায়তা বিষয়ক গোষ্ঠীগুলো গাজায় ভয়াবহ মানবিক সঙ্কটের বিষয়ে সতর্ক করেছে।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা রাফায় হামাসের একটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছেন। এতে হামাসের দুই জ্যেষ্ঠ নেতা ইয়াসিন রাবিয়া ও খালেদ নাগার নিহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ১৭০ জন নিহত হন। জবাবে নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এ হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৯৬ জন নিহত হয়েছেন।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক