প্রচারে খরচ মাত্র ২৭ হাজার টাকা, জেলে বসে ওমর আবদুল্লাহকে হারানো কে এই রশিদ
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুল্লা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছিলেন জে অ্যান্ড কে ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ। ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে তাকে প্রায় চার লাখ ভোটে হারিয়েছেন শেখ আবদুল রশিদ। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার
তবে শেখ রশিদের নির্বাচনের গল্পটা অন্যরকম। আর দশজন প্রার্থীর মতো তিনি ভোটের মাঠে সশরীরে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে পারেননি। কারণ তিনি জেলে বন্দী।
২০১৯ সালের ৯ আগস্ট থেকে তিহাড় জেলে বন্দী রয়েছেন শেখ রশিদ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রশিদ। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের খরচ জোগানোর অভিযোগ রয়েছে।
আরও অবাক করা বিষয় হলো, শেখ রশিদের নির্বাচনী প্রচারে খরচ হয়েছে মাত্র ২৭ হাজার টাকা। যেখানে কি না প্রার্থীরা লাখ লাখ টাকা খরচ করে থাকেন।
শেখ রশিদের ছেলে আবরার জানিয়েছেন, তার গাড়িতে তেল ভরার জন্যই এ খরচ হয়েছে। গাড়ি চেপে তিনি বারামুল্লা কেন্দ্র প্রায় চষে ফেলেছেন।
বাবার বিজয়ের প্রসঙ্গে আবরার বলেছেন, 'এই জনাদেশ মানুষের জয়।'
তিনি জানান, তার বাবার জয়ী হওয়া এটাই প্রমাণ করে যে তিনি নিরপরাধ। তাকে দ্রুত জেল থেকে মুক্তি দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
আবরার জানান, যখন তার বাবা নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তখন পাশে কেউ ছিল না। ধীরে ধীরে বহু মানুষ এগিয়ে এসেছেন, পাশে দাঁড়িয়েছেন। হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রচারে অনুদান দিয়েছেন।
এদিকে ভোটের পর ওমর জানান, ভোটাররা নিজেদের মতামত দিয়েছেন। গণতন্ত্রে এটাই সবকিছু। তিনি বিপক্ষকে অভিনন্দনও জানান।
এক এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে ওমর লিখেছেন, 'আমি বিশ্বাস করি না যে এই জয়ের ফলে তাড়াতাড়ি জেল থেকে মুক্তি পাবেন ইঞ্জিনিয়ার রশিদ। উত্তর কাশ্মীরের মানুষের জনপ্রতিনিধি পাওয়ার যে অধিকার রয়েছে, তা-ও পূরণ হবে না। তবে ভোটাররা মত দিয়েছেন, গণতন্ত্রে সেটাই আসল কথা।'
জম্মু এবং কাশ্মীর আওয়ামি ইত্তেহাদ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা শেখ রশিদ। ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের লাঙ্গাটে বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন। ২০১৯ সালেও লোকসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন। তবে হেরেছিলেন। ওই তিন নির্বাচনেও স্বতন্ত্র হয়েই লড়েছিলেন তিনি।
পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন রশিদ। ২০০৮ সালে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন তিনি। সে কারণেই নাম হয় ইঞ্জিনিয়ার রশিদ। এর পর শুরু করেন বিধানসভা ভোটের প্রচার। মাত্র ১৭ দিন প্রচার করে জিতেছিলেন ভোটে।
২০১৯ সালে এনআইএ-র হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। সেই থেকে তিনি জেলে। দুই ছেলে আব্রার এবং আসরারই সামলেছেন প্রচার।
তবে প্রশ্ন উঠছে রশিদ কি সংসদে শপথগ্রহণ করতে পারবেন? যদিও শপথগ্রহণ করা তার সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু যেহেতু তিনি বন্দী, তাই বাধাও রয়েছে।
শপথগ্রহণের জন্য রশিদকে আগে জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি চেয়ে চিঠি দিতে হবে। কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে সংসদে গিয়ে শপথ নিতে পারবেন তিনি। তবে তার পর আবার জেলে ফিরতে হবে তাকে।
নিয়ম অনুযায়ী, শেখ রশিদ যদি দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাকে দুবছর বা তার বেশি সময় জেলে থাকতে হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তার লোকসভার সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে।