ভিয়েতনামে পুতিন: যে বন্ধুত্বের মৃত্যু নেই
ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে একটি বৈঠকে ভিয়েতনাম ও রাশিয়ার নেতারা দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট তো লাম রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসা করে সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।
পুতিন জবাবে বলেছেন, ভিয়েতনামের সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বাড়ানো রাশিয়ার অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার।
উত্তর কোরিয়ায় জমকালো সফরের পর পুতিনের ভিয়েতনাম সফরকে এই অঞ্চলে রাশিয়া যে কূটনৈতিক সমর্থন উপভোগ করছে তার একটি নিদর্শন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পুতিনের ভিয়েতনাম সফরের সমালোচনা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইউক্রেনে পুতিন যে আগ্রাসন চালাচ্ছে তার প্রতি সমর্থন যোগাতে চলমান সফর একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।
ভিয়েতনাম রাশিয়ার সাথে দেশটির ঐতিহাসিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দিলেও, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
হ্যানয়ের বা দিন পার্কে সোভিয়েত ইউনিয়নের উপহার দেওয়া লেনিনের একটি পাঁচ মিটার উঁচু মূর্তি রয়েছে। প্রতি বছর লেনিনের জন্মদিনে ভিয়েতনামের নির্দিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা মূর্তিটিতে ফুল দেয়।
১৯৫০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন উত্তর ভিয়েতনামকে সামরিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিকভাবে সমর্থন করেছিল। ১৯৭৮ সালে ভিয়েতনাম কম্বোডিয়া আক্রমণ করার পর এটি নিষেধাজ্ঞার কারণে সোভিয়েত সাহায্যের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল ছিল।
ভিয়েতনামের অর্থনীতি আজ বিশ্বব্যাপী সমৃদ্ধ এবং রাশিয়াও আর দেশটির শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার নয়। কিন্তু ভিয়েতনাম এখনও রুশ সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে এবং দক্ষিণ চীন সাগরে তেল উত্তোলনের জন্য রুশ তেল কোম্পানিগুলোর ওপর নির্ভরশীল।
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ কররা পর সেটি ভিয়েতনামের জন্য একটি কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। ভিয়েতনাম রাশিয়ার প্রতি নিন্দা জানানোর ব্যাপারে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাব থেকে নিজেকে বিরত রাখলেও ইউক্রেনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং কিয়েভে কিছু সাহায্য পাঠিয়েছে। ভিয়েতনাম এমন এক কুটনৈতিক কৌশল ব্যবহার করছে যেখানে দেশটি সবার সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কোন পক্ষ নিচ্ছে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুতিনের ভিয়েতনাম সফরের সমালোচনা করে বলেছে, এটি পুতিনকে বিচ্ছিন্ন করার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভিয়েতনামের জনগণের মধ্যে কিছুটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ পুতিনের প্রশংসা করছেন, আবার কেউ কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রতি সংশয় দেখাচ্ছেন।
ভিয়েতনামে অনেকেই একজন শক্তিশালী নেতা হিসেবে পুতিনকে সমর্থন করেন যেহেতু তিনি পশ্চিমা আধিপত্যকে অস্বীকার করেন। অন্যান্য এশিয়ান দেশগুলোতেও রাশিয়ার প্রতি সমর্থন জানানো নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ বিদ্যমান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঐতিহাসিক জোট থাকা সত্ত্বেও থাইল্যান্ড রাশিয়ার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে যেহেতু তারা রুশ পর্যটন ব্যবস্থা থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা পায়।
পুতিনের সঙ্গে ভিয়েতনামের সম্পর্ক কতদিন ভালো থাকবে তা এখনো অনিশ্চিত। নতুন সামরিক সাহায্যকারীর সন্ধান করলেও রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাতে ভিয়েতনামের এখনো সময় লাগবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চ-পর্যায়ের নেতাদের পদত্যাগ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত দিলেও দেশটির সবার সাথে বন্ধুত্ব এবং কারও সাথে শত্রুতা নয়— এই নীতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়