‘কয়েক মাসের মধ্যে’ ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় যেতে বাধ্য হতে পারে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি ইউক্রেনকে রাশিয়ার গভীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছেন এবং কিয়েভকে বিতর্কিত অ্যান্টি-পার্সনেল মাইন সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করছে– রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের অংশগ্রহণ, যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের ব্যাপক ক্ষতি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ইউক্রেনের পরিস্থিতি সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে পৌঁছেছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা এখন স্বীকার করতে শুরু করেছেন, ইউক্রেনকে হয়ত রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত তারা এমন অঞ্চল ত্যাগ করতে পারে, যা তারা নিজেদের বলে মনে করে। ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) এই তথ্য জানানো হয়, যা অজ্ঞাত সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার এবং ইউক্রেনের বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায়, বিশেষ করে রাশিয়া কুরস্ক অঞ্চলের অধিকৃত এলাকা পুনরুদ্ধার করায় ইউক্রেন সম্ভবত তার "সর্বোচ্চ দুর্বল অবস্থানে পৌঁছেছে"।
হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই বিশ্বাস করছেন, "কয়েক মাসের মধ্যে ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে বাধ্য করা হতে পারে" এবং তারা "অঞ্চল ছাড়তে বাধ্য হতে পারে।" এমন "নীরব স্বীকৃতি" ইউক্রেনের ইউরোপীয় সমর্থকদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি ইউক্রেনকে রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরবরাহ করা এটাকমস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে ইউক্রেনকে "যতটা শক্তিশালী রাখা সম্ভব", তা নিশ্চিত করতে। আগামী জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে আসলে রাশিয়ার সঙ্গে কোনও আলোচনায় যেতে হলে ইউক্রেন যেন প্রস্তুত থাকে, তা নিশ্চিত করতেই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার কাছে কোনও ধরনের অঞ্চল ছাড়ার প্রস্তাব সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে, বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, "ট্রাম্প সম্ভবত ইউক্রেনকে আর কোনও সহায়তা" প্রদান করবেন না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের অনেক ইউরোপীয় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করতে দেরি করায় হতাশ হয়েছে। তাদের মতে, ইউক্রেনের সামরিক পরিস্থিতি যখন "অধিক শক্তিশালী" ছিল, তখনই এই অস্ত্র সরবরাহ করা উচিত ছিল।
তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাইডেনের সিদ্ধান্তগুলো "যুদ্ধক্ষেত্রের পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির" ফলে প্রভাবিত। কিয়েভের চাপ সত্ত্বেও, তিনি পরিস্থিতি বিবেচনায় দেরীতেই কিছু নির্দিষ্ট অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন।
ওয়াশিংটন বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন কারণ ইউক্রেন তার বাহিনী রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে স্থানান্তর করার পরেই পূর্বাঞ্চলে দ্রুত পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত এটাকমস ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানোর পর গত সপ্তাহে নিজেদের নতুন ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দেন পুতিন। হাইপারসনিক ওরেশনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক ওয়ারহ্যাড বহনে সক্ষম।
এটি ব্যবহার করে ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের দনিপ্রোপেট্রোভস্কের একটি সামরিক শিল্প কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।