প্রযুক্তি দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কেন ট্রাম্পকে সমর্থন দিচ্ছেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ব্যবসাজগতের অনেকের কাছে ব্রাত্য হয়ে পড়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন সেই ট্রাম্পকেই সমর্থন দিচ্ছেন প্রযুক্তিজগতের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। খবর বিবিসির।
সাবেক এই প্রেসিডেন্টের সমর্থকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় নামটি হলো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক। ট্রাম্পের জন্য তহবিল তোলার কাজেও নেমেছেন মাস্ক।
সাবেক ডেমোক্রেটিক দাতা অ্যালিসন হুইন, বিনিয়োগকারী মার্ক অ্যান্ডরেসেন ও বেন হরোউইটজ, ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট, প্রযুক্তি নেতা, ক্রিপ্টো দুনিয়ার বড় বড় নাম জড়ো হচ্ছেন ট্রাম্পের পেছনে।
অথচ ২০২১ সালে ক্যাপিটলে হামলার ঘটনার পর তার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছিল প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো।
সিলিকন ভ্যালিতে কোনো রিপাবলিকান প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া ঝুঁকির কাজ। এই যেমন, সমকামী বিয়ে নিষিদ্ধ করাকে সমর্থন দেওয়ায় সেখানে একজন নির্বাহী চাকরি খুইয়েছিলেন। সেই সিলিকন ভ্যালিতেই এমন পরিবর্তন বিস্ময়কর।
সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ফরচুনা ইনভেস্টরস-এর কর্মকর্তা নিকোলাস লঙ্গো বলেন, ২০২০ সালে ট্রাম্পকে নীরবে সমর্থন দিতে হয়েছে তাকে।
রাজনৈতিক হাওয়া বদলের প্রমাণ স্পষ্ট হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এসব মাধ্যমে মাস্ক ও বিনিয়োগকারী ডেভিড স্যাকস নিয়মিত বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমালোচনায় মুখর হন।
তবে এই প্রযুক্তি নেতাদের ট্রাম্পকে তহবিল দেওয়ায় ঘটনাটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এতে নির্বাচনে বড় প্রভাব পড়তে পারে।
এসব সহায়তা ট্রাম্পকে তহবিলের দিক থেকে বাইডেনের সঙ্গে পার্থক্য কমিয়ে আনতে সাহায্য করছে।
ওপেনসিক্রেটস-এর গবেষণা পরিচালক সারাহ ব্রিনার বলেন, গত আট সপ্তাহে ট্রাম্পের প্রচারণার হাওয়া পুরোপুরি বদলে গেছে। প্রযুক্তি নেতারা ট্রাম্পকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিতে শুরু করার পর থেকেই স্পষ্ট হয় যে ট্রাম্প জিততে পারেন।
ওপেনসিক্রেটসের তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্র্যাটদের তহবিলের অধিকাংশই এসেছে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টদের কাছ থেকে। এখন বাইডেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় অর্থদাতারা আগ্রহী হতে পারেন।
তবে ট্রাম্পের নতুন বন্ধুরা তার সঙ্গ ছাড়েননি।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্যমতে, ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার জন্য মাস্ক মাসে ৪৫ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মাস্ক অবশ্য বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের জন্য তহবিল সংগ্রহে সহায়তা করছেন। তবে তিনি ৪৫ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা শিকার করেননি, আরও অনেক কম টাকা দেবেন বলে জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রযুক্তি জগতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সমর্থন পাওয়ার অর্থ হচ্ছে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
রিপাবলিকান পরামর্শদাতা স্যাল রুশো বলেন, 'তিনি [ট্রাম্প] রিপাবলিকানদের বোঝাতে পেরেছেন যে তারা যতটা বলে, তিনি ততটা খারাপ নন।'
প্রযুক্তি নেতারা বলেছেন, ক্রিপ্টো দুনিয়ার ওপর সাঁড়াশি আক্রমণ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রতি সন্দিগ্ধ আচরণের কারণে তারা বাইডেন প্রশাসনকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। যেমন, সম্প্রতি নিয়ম করা হয়েছে যে এআই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের এআই নিরাপত্তা মানদণ্ড মেনে চলতে হবে।
একসময় রাজনৈতিক অনুদান দেওয়া এড়িয়ে চলতে ইলন মাস্ক। সেই তিনিই এখন ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ২০১৭ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে জলবায়ু নীতি নিয়ে মতবিরোধের জেরে হোয়াইট হাউস বিজনেস কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করা প্রথম সদস্যদের একজন ছিলেন তিনি।
ট্রাম্প তার কোম্পানি টেসলার সমালোচনা করেছেন বারবার।
তবে হোয়াইট হাউসে ব্যবসায়ী বৈঠকে আমন্ত্রণ না পাওয়ার পর থেকে গত দুই বছরে বাইডেনের প্রতি বিরূপ হয়ে উঠেছেন মাস্ক।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোভিড লকডাউন, ইউক্রেন যুদ্ধ, চীন নীতি ও ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে বারবার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তিনি।
এছাড়া মাস্কের রকেট সংস্থা স্পেসএক্স সরকারের সঙ্গে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে। তাই ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে তার প্রশাসনের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো রাখার বিষয়টি মাথায় রাখতে হচ্ছে তাকে।
এছাড়া নিজস্ব স্বার্থেও প্রযুক্তি জগতের সমর্থনের ধরন বদলে গেছে বলে দাবি করছেন ডেমোক্র্যাটরা। মাল্টি-মিলিয়নিয়ার ও ক্যাপিটাল গেইনের ওপর বাইডেন নতুন কর আরোপের প্রস্তাব করায় তার প্রতি বৈরী হয়ে উঠেছে প্রযুক্তি দুনিয়ার আচরণ।
এসবের বাইরেও ডানপন্থার দিকে ঝুঁকেছেন অনেকে। প্রযুক্তি দুনিয়াও এই ঢেউয়ের বাইরে থাকেনি।
এছাড়া অনেকেই ধারণা করছেন, ক্রিপ্টো ও এআইয়ের প্রতি ট্রাম্প তুলনামূলক উদার হবেন।
প্রেসিডেন্ট থাকাকালে কর কমিয়ে, নিয়মনীতি শিথিল করে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন ট্রাম্প। এছাড়া টিকটককে নিষিদ্ধ করা ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর ব্যাপারে সময়ের সঙ্গে আরও নমনীয় অবস্থান নিয়েছেন।
বিশ্লেষক জেনিফার হাডলসন বলেন, ট্রাম্প যেহেতু এখন নিজেই একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মের মালিক, তাই কিছু প্রযুক্তি ইস্যুতে তিনি আগের কড়া অবস্থান থেকে সরে আসতে পারেন।