মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: বিজয়ীর নাম কখন জানা যাবে?
মার্কিন ভোটাররা তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য আজ (৫ নভেম্বর) ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছেন। সাধারণত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘোষণা করা হয়। তবে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুবই তীব্র হওয়ায় ফলাফল জানতে কিছুটা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল কখন ঘোষণা করা হবে?
কিছু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ীর নাম নির্বাচনের রাতেই বা পরের দিনের সকালেই ঘোষণা করা হয়। তবে এবার অনেক অঙ্গরাজ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে গণমাধ্যমগুলো বিজয়ীর নাম ঘোষণা করতে কিছুটা সময় নিতে পারে।
বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রায় সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে নির্বাচনে লড়াই করছেন।
অল্প ব্যবধানে কোনো একজন জয়ী হলে পুনরায় ভোট গণনার সম্ভাবনাও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গুরুত্বপূর্ণ সুইং স্টেট বা অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ায় বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান অর্ধ শতাংশের কম হলে, পুরো রাজ্যে পুনরায় ভোট গণনা করতে হবে। ২০২০ সালে পেনসিলভানিয়ায় ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র ১.১ শতাংশের একটু বেশি।
এছাড়া, কোনো প্রকার আইনি জটিলতার ফলেও ফলাফল প্রকাশ করতে দেরি হতে পারে। ইতোমধ্যেই রিপাবলিকানরা নির্বাচনের আগেই ১০০টিরও বেশি মামলার আবেদন করেছে। আবেদনে, ভোটারের ভোট দেওয়ার যোগ্যতা এবং ভোটার তালিকা ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
ভোটকেন্দ্রে কোনো প্রকার অস্থিরতা বা অনিয়ম দেখা গেলেও ভোটের ফলাফল প্রকাশ করতে দেরি হতে পারে।
পূর্ববর্তী নির্বাচনের ফলাফল কখন ঘোষণা করা হয়েছে?
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হলেও, জো বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল ৭ নভেম্বর। মূলত, পেনসিলভানিয়া রাজ্যের ভোটের ফলাফল পরিষ্কার হওয়ার পরেই বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। আগের নির্বাচনে অপেক্ষার সময় অনেক কম ছিল।
২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নির্বাচনের পরদিন স্থানীয় সময় রাত ৩টার কিছু আগে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ২০১২ সালে বারাক ওবামা দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হলে, ভোট গ্রহণের দিন মধ্যরাতের আগেই তার বিজয় নিশ্চিত হয়।
তবে ২০০০ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং আল গোরের মধ্যে নির্বাচনটি একটি বড় ব্যতিক্রম ছিল। ৭ নভেম্বর ভোট হলেও ফ্লোরিডায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে এটি ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত ছিল। শেষ পর্যন্ত মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ফ্লোরিডার পুনর্গণনা প্রক্রিয়া বন্ধ করার নির্দেশ দিলে বুশ বিজয়ী হন।
নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য কোনগুলো?
নির্বাচনে প্রথম ভোটকেন্দ্রগুলো মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় বন্ধ হবে। সর্বশেষ ভোটকেন্দ্রগুলো বুধবার স্থানীয় সময় রাত ১টায় বন্ধ হবে।
তবে এই নির্বাচনের ফলাফল মূলত সাতটি সুইং স্টেট বা অঙ্গরাজ্যের ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে। এগুলো হলো– অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিন।
সুইং স্টেট বা অঙ্গরাজ্যগুলোতে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা প্রার্থী নিয়মিতভাবে জয়লাভ করেন না। এগুলোতে প্রতি নির্বাচনে ভিন্ন ভিন্ন দল জয়লাভ করতে পারে কারণ এখানকার ভোটাররা সাধারণত একপক্ষের প্রতি আনুগত্য রাখেন না। এ কারণে সুইং স্টেটগুলোতে ভোটের ফলাফল অনিশ্চিত থাকে এবং নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলের ওপর বড় প্রভাব ফেলে।
বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভোটকেন্দ্র বন্ধ হয়। কিছু অঙ্গরাজ্যের নির্দিষ্ট নিয়মের কারণে গণনা দীর্ঘায়িত হতে পারে। আবার কিছু অঙ্গরাজ্যে শেষ ব্যক্তিগত ভোট দেওয়ার পরপরই আংশিক ফলাফল ঘোষণা হতে পারে।
এছাড়া অনুপস্থিত এবং ডাকযোগে পাঠানো ব্যালট, যার মধ্যে সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং বিদেশে বসবাসকারী আমেরিকানদের ভোট অন্তর্ভুক্ত, সাধারণত সবার শেষে গণনা করা হয়।
কীভাবে ভোট গণনা করা হয়?
সাধারণত, নির্বাচনের দিনে দেওয়া ভোটগুলো প্রথমে গণনা করা হয়। এরপর আগাম এবং ডাকযোগে পাঠানো ব্যালট, চ্যালেঞ্জকৃত ভোট এবং শেষে প্রবাসী এবং সামরিক সদস্যদের ভোট গণনা করা হয়।
স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তারা [যারা কখনও নিয়োগপ্রাপ্ত, আবার কখনও নির্বাচিত হন] 'ক্যানভাসিং' প্রক্রিয়া ব্যবহার করে ভোট গণনা করেন। এই প্রক্রিয়ায় ভোটারদের ব্যালটগুলো যাচাই ও প্রক্রিয়াকরণ এবং ইলেকট্রনিক স্ক্যানারে গণনা করা হয়।
যাচাই প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা সক্রিয় ভোটারের তালিকার সঙ্গে তুলনা করা হয়। প্রতিটি ব্যালটের ত্রুটি বা ক্ষতি পরীক্ষা করা হয়। কোনো অসংগতি থাকলে তা তদন্ত করা হয়। সাধারণত ব্যালটগুলোকে ইলেকট্রনিক স্ক্যানারে ঢুকিয়ে গণনা করা হলেও, কিছু ক্ষেত্রে ম্যানুয়াল গণনা বা ডাবল চেকিংও প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতিটি রাজ্য এবং স্থানীয় এলাকায় ক্যানভাসিং প্রক্রিয়ায় কারা অংশগ্রহণ করতে পারবে তা নিয়ে কঠোর নিয়ম রয়েছে।
এছাড়াও, ভোট প্রক্রিয়াকরণের ক্রম, প্রক্রিয়ায় জনসাধারণের প্রবেশাধিকার এবং দলীয় পর্যবেক্ষকরা গণনার সময় কীভাবে পর্যবেক্ষণ ও হস্তক্ষেপ করতে পারবেন, তা নিয়েও কঠোর নিয়ম রয়েছে।
নির্বাচনের ফলাফল চ্যালেঞ্জ করা হলে কী ঘটবে?
যখন সকল বৈধ ভোট গণনা শেষ হয়, তখন ইলেকটোরাল কলেজ প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রতিটি রাজ্যে ভিন্ন সংখ্যা বিশিষ্ট ইলেকটোরাল ভোট থাকে, যা চূড়ান্তভাবে প্রেসিডেন্ট পদ নির্ধারণ করে।
সাধারণত, রাজ্যগুলো সকল ইলেকটোরাল ভোট তাকে দেওয়া হয় যিনি জনপ্রিয় ভোটে বিজয়ী হন। ১৭ ডিসেম্বরের বৈঠকের পর এটি নিশ্চিত করা হয়।
নতুন মার্কিন কংগ্রেস ৬ জানুয়ারি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট গণনা করে নতুন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে।
২০২০ সালের নির্বাচনের পর ট্রাম্প হার মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। বাইডেনের বিজয় সার্টিফাই করার সময় তার সমর্থকদের ক্যাপিটলে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন।
ট্রাম্প ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করতে চাপ দেন। কিন্তু পেন্স তা করতে অস্বীকৃতি জানান।
ক্যাপিটলে বিশৃঙ্খলার পর ১৪৭ জন রিপাবলিকান ট্রাম্পের ফলাফল বদলানোর জন্য ভোট দেন। কিন্তু এই প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কারগুলো মার্কিন আইনপ্রণেতাদের জন্য নিশ্চিত ফলাফলের প্রতি আপত্তি জানানো কঠিন করে দিয়েছে। এতে স্পষ্ট হয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট একপাক্ষিকভাবে ইলেকটোরাল ভোট প্রত্যাখ্যান করতে পারেন না।
এই সংস্কারগুলোর পরেও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা আশা করেন, ২০২৪ সালের ভোটের সার্টিফিকেশন বিলম্বিত করার প্রচেষ্টা স্থানীয় এবং রাজ্য পর্যায়ে ঘটতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার রানিং মেট জেডি ভ্যান্স এবং শীর্ষ রিপাবলিকান নেতারা ফলাফল তাদের পক্ষে না গেলে সেটি গ্রহণ করবেন কি-না, তা একবারও স্পষ্ট করেননি।
প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান কবে?
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল কমপ্লেক্সের মাটিতে দাঁড়িয়ে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে তার কার্যকাল শুরু করবেন।
এটি মার্কিন ইতিহাসে ৬০তম প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান হবে।
এই অনুষ্ঠানে নতুন প্রেসিডেন্ট সংবিধান রক্ষা করার শপথ নেবেন এবং পরে তার উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়