সান্তা ক্লজ কেন লাল-সাদা পোশাক পরেন?
লাল ভেলভেটের স্যুট, সাদা ফার (পশম), উঁচু কালো বুট, আর পম-পম টুপি–হ এটাই সান্তা ক্লজের পরিচিত পোশাক। এর কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে, যেমন "দ্য সান্তা ক্লজ" সিনেমায় টিম অ্যালেনের পোশাক বা "মিন গার্লস" সিনেমায় ব্যবহৃত স্প্যাগেটি-স্ট্র্যাপ পোশাক। তবে সান্তা ক্লজের পোশাক বিশ্বব্যাপী খুব পরিচিত এবং অনেক পুরোনো।
সান্তা বাস্তবে না থাকলেও, মার্কিন শপিং মলের সান্তাদের পোশাকের কিছু নিয়ম আছে। যেমন, ব্লুমিংডেলসে এক সান্তা যদি সবুজ স্যুট পরেন, সেটা খবরের শিরোনাম হয়ে যায়। এক মা বলেছিলেন, "সবকিছুই পরিবর্তন করতে হবে না... সবুজ সান্তা পাগলামি। এটা ঠিক না।"
কিন্তু সান্তা সবসময় লাল পোশাক পরতেন না। আসলে, পোশাক, চেহারা এবং উচ্চতা মিলিয়ে আজকের যে পরিচিত সান্তাকে আমরা চিনি, সেটি তৈরি হতে প্রায় এক শতক সময় লেগেছে।
তার পূর্বপুরুষদের মধ্যে ছিলেন খ্রিষ্টান পুরোহিত সেন্ট নিকোলাস এবং তার ডাচ সমকক্ষ সেন্টারক্লাউস; ফরাসি পিতামহ পের নোয়েল এবং জার্মান উপহার দেওয়া শিশু যিশু, ক্রিস্টকিন্ডলসহ (যেটি, আমেরিকায়, ভুল উচ্চারণে 'ক্রিস ক্রিঙ্গল' নামে পরিচিত) আরো অনেকেই।
তবে আমেরিকান সান্তা প্রথমবারে ১৮২০-এর দশকে তৈরি হতে শুরু করে এবং কবিতা, সম্পাদকীয় ইলাস্ট্রেশন এবং বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এটি বিকশিত হতে থাকে।
সান্তার মূল বৈশিষ্ট্য– দাঁড়ি এবং পশম পরা এক ব্যক্তি, যাকে রেইনডিয়ারের টানা স্লেজে বসানো হয়, ১৮২৩ সালের ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুরের কবিতা "অ্যা ভিজিট ফ্রম সেন্ট নিকোলাস" (যা "'টওয়াজ দ্য নাইট বিফোর ক্রিসমাস" নামেও পরিচিত) এবং ১৮২১ সালের একটি কম পরিচিত অজ্ঞাত কবিতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে তাকে "সান্তেক্লজ" বলা হয়েছিল। তবে তিনি (সান্তা) যা পরতেন, তা ছিল ব্যাখ্যা করার বিষয়।
"সান্তা ক্লজ: আ বায়োগ্রাফি" বইয়ের লেখক ইতিহাসবিদ গেরি বাওলার বলেন, "১৯ শতক ছিল সেই সময়, যখন সান্তা দেখতে কেমন এবং কী পরিধান করা উচিত, এ নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল।" তিনি এক ফোন সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, "আমেরিকান শিল্পীদের সান্তার পোশাক নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রায় ৮০ বছর লেগেছিল। ওই সময়ের আগে সান্তাকে যে কোনো রঙের পোশাক এবং নানা ধরনের আলখেল্লায় দেখা যেত।"
সান্তার বিভিন্ন রূপ
মুরের লেখায় সান্তাকে কখনো ছোট, চতুর এলফের মতো দেখানো হয়েছে, যে চিমনি দিয়ে ঢুকতে পারে। ১৮৬৪ সালে একটি ছবিতে সেন্ট নিকোলাসকে হলুদ স্যুট ও পশমের টুপি পরা অবস্থায় দেখানো হয়েছে।
১৮৩৭ সালের একটি তৈল চিত্রে তাকে লাল পশমি ম্যান্টলে [একপ্রকার চাদর] দেখা যায়। ১৮৫০ সালের একটি বিজ্ঞাপনে সান্তাকে বিপ্লবী যুদ্ধের একজন ব্যক্তির মতো দাড়িহীন দেখানো হয়। ১৯০২ সালে এল. ফ্রাঙ্ক বমের বইয়ের প্রচ্ছদে তাকে পশমি ট্রিম ও লাল বুট পরা পোশাকে দেখা যায়।
হার্পারস উইকলির কার্টুনিস্ট থমাস ন্যাস্টডেমোক্র্যাটদের জন্য গাধা এবং রিপাবলিকানদের জন্য হাতি আঁকেন। তিনি ১৮৬৩ সালে সিভিল ওয়ারের (গৃহযুদ্ধ) সময় সান্তাকে প্রথম আঁকেন, যেখানে তিনি সেনাদের উপহার দিচ্ছিলেন।
তবে, ১৮৮১ সালে তার আঁকা সান্তার চিত্রই সবচেয়ে জনপ্রিয়। ওই সময় সান্তা লাল স্যুট পরেছিলেন, যা আজকের সান্তার মতো। এরপর নরম্যান রকওয়েল এবং জে. সি. লেইন্ডেকার সান্তাকে তার পরিচিত লাল স্যুটে আঁকেন।
গেরি বাওলার বলেন, "যখন আপনি সান্তাকে লাল এবং সাদা ফার ট্রিমসহ বড় বড় ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে দেখেন, তখন সেটা অনেকটাই যথার্থ হয়ে যায়।"
এই শিল্পীদের প্রথম আঁকা ছবিগুলো প্রায়ই কোকা-কোলা'র দীর্ঘ প্রচারের কারণে অস্বীকার করা হয়। হ্যাডন সানডব্লম ১৯৩১ সালে যে ক্যাম্পেইন শুরু করেন, তা সান্তার চেহারা পরিচিত করে তোলে। সানডব্লমের সান্তা, যাকে প্রথমে এক বিক্রয়কর্মীকে দেখে আঁকা হয়েছিল, খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং এখনও জনপ্রিয়।
বাওলার বলেন, "আমার মনে হয় বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন, কোকা-কোলা থেকে সান্তার লাল-সাদা পোশাক এসেছে...আপনি এটা ইন্টারনেটে খুব দেখতে পাবেন। কিন্তু এটা সঠিক নয়। সান্তার আইকনিক পোশাক অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত হয়েছিল।"
তিনি আরও বলেন, কোকা-কোলা সান্তার পোশাকে প্রচার করা প্রথম সফট ড্রিংক ছিল না। প্রথমে হোয়াইট রক বেভারেজেস বিশ্বযুদ্ধের সময়, কোকা-কোলার প্রথম (সানডব্লমের আগে) প্রচারণার কয়েক বছর আগে, সান্তাকে তার পোশাকে প্রচার করেছিল।
"নিশ্চিতভাবে কোকা-কোলার বিজ্ঞাপনগুলো খুব জনপ্রিয় ছিল। অনেক বছর ধরে বেশি করে চলেছিল। তাই এর কোনো পরিবর্তন মানুষকে খুবই হতাশ করে," বাওলার বলেন।
পুরানো স্মৃতি
ইতিহাসবিদ এবং লেখক স্টিফেন নিসেনবম দামি করেন, সান্তার প্রথম ধারণায় তাকে লাল স্যুট পরানো ছিল না। কিন্তু তার চরিত্রকে স্মৃতিমাখানো ভাবেই তৈরি করা হয়েছিল।
স্টিফেনের ১৯৮৮ সালের বিখ্যাত বই "দ্য ব্যাটল ফর ক্রিসমাস"-এ তিনি সান্তার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং সেন্ট নিকোলাস, সেন্টারক্লাউস নেদারল্যান্ডস থেকে আসার ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন।
তিনি এর বদলে একটি গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করেছেন, যারা ১৮২০-এর দশকে ডাচ চরিত্রটিকে নতুনভাবে তৈরি করে বড়দিনকে একটি পারিবারিক বন্ধনের উৎসব হিসেবে রূপান্তরিত করেছিল। এই গোষ্ঠীতে ছিলেন– নিউ ইয়র্কের ইতিহাসবিদ জন পিনটার্ড, লেখক ওয়াশিংটন আর্ভিং এবং কবি ক্লোম কুপার মূর।
নিসেনবম বলেন, নিউ ইংল্যান্ডে প্রথাগতভাবে পুরোনো সময়ে এক মাসব্যাপী মাতাল, বিশৃঙ্খল এবং অশালীন বড়দিন উদযাপন চলত। কিছু দরিদ্র লোককে ধনী বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হতো, যেখানে তাদের জন্য সেরা খাবার ও পানীয় দেওয়া হতো।
মূরের সময়, ক্রিসমাসে এককভাবে কোনো প্রথা ছিল না। পিউরিটানরা [বিশুদ্ধবাদী] এটিকে দমন করতে চেয়েছিল। আর ইভাঞ্জেলিকরা [খ্রিষ্টান ধর্মের তাত্ত্বিক প্রচারক] এটিকে একটি ধর্মীয় দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।
নিসেনবম লেখেন, "এই সব উদযাপন ক্রিসমাসের সেই রূপের সাথে কোনো সম্পর্কই রাখত না, যা আমরা জানি। এখানে পরিবারসহ ছোটগল্প, উপহার দেওয়া, ক্রিসমাস গাছ, রেইনডিয়ার বা সান্তা ক্লজ ছিল না।"
এই নতুন রূপে, শিশুদের ছিল নতুন ভূমিকা। তারা ছিল দানশীলতার পাত্র, আর মূরের সেন্ট নিকোলাস ছিল এক অনুগ্রহশীল অতিথি, যারা উপহার দেয়, কোনো দাবি তোলে না।
সান্তার পোশাকের পরিবর্তনের সাথে তার এলফের বৈশিষ্ট্যও ম্লান হয়ে যায়। তিনি এখন লম্বা, হাস্যোজ্জ্বল এবং একেবারে দয়ালু একজন অতিথি।
বাওলার বলেন, "এটি একটি অতি সোজাসাপটা পোশাক, কিন্তু এটি অদ্ভুত। তিনি কল্পনা এবং কল্পনাশক্তির সৃষ্টি, এবং এমন পোশাক পরেন যা অন্য কেউ পরেন না। কিন্তু সময়ের সাথে এটি পরিচিত হয়ে ওঠে।"
বাওলার মনে করেন, সান্তার বেশিরভাগ জনপ্রিয় বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল বাস্তবিক সিদ্ধান্ত। যেমন– তিনি আর্কটিক থেকে আসছেন, তখন পশম পরা স্বাভাবিক; লাল রং তার সাদা দাড়ি এবং সাদা তুষারের সাথে সুন্দরভাবে মানায়।
তবে সান্তার পোশাকের স্টাইলের উৎস খুঁজে পাওয়া জটিল, কারণ তার অনেক অনুরূপ চরিত্র রয়েছে বিশ্বজুড়ে, যারা একত্রিত হয়ে আজকের সান্তার চেহারায় পরিণত হয়েছে। তার টুপি একসময় প্রাচীন ফ্রিজিয়ান ক্যাপ, ফেল্ট পাইলিয়াস এবং পোপের পোশাকসহ অনেক কিছু থেকে এসেছে। তবে এখন এটি তার একান্ত বৈশিষ্ট্য।
এতকিছুর পরেও সান্তার পোশাকের ইতিহাস খুব বিস্তৃত ছিল। ভবিষ্যতে হয়ত তার পোশাক আবার একটু বিস্তৃত হতে পারে। তবে বড়দিনের ঐতিহ্যবাদীরা তাতে খুব বেশি বিরক্ত হবেন না।