ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/13/pete-hegseth.jpg)
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য 'অত্যধিক' অর্থায়নের দায়িত্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর নেওয়া উচিত। তার এ মন্তব্য ওয়াশিংটনের অবস্থানে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। খবর বিবিসির।
ব্রাসেলসে একটি প্রতিরক্ষা সম্মেলনে বক্তৃতাকালে হেগসেথ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের সঙ্গে 'অসম সম্পর্ক' আর সহ্য করবে না এবং ন্যাটো সদস্যদের প্রতিরক্ষা ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের জন্য ২০১৪ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়া বাস্তবসম্মত নয় এবং দেশটির ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনাও খুব কম।
এই মন্তব্যের আগে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি "দীর্ঘ" ফোনালাপ করেন, যেখানে তারা যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার সূচনা করতে সম্মত হন।
হেগসেথের বক্তব্য ট্রাম্প প্রশাসনের ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে অবস্থানের স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। তার এই অবস্থান ইউক্রেনের জন্য হতাশার কারণ হতে পারে, কারণ দেশটি ন্যাটো সদস্যপদের জন্য লড়াই করছে এবং কোনো ভূখণ্ড ছাড়তে রাজি নয়। তবে, রাশিয়া এটি ইতিবাচকভাবে নেবে।
ইউরোপীয় দেশগুলোতেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তা কমিয়ে আনতে পারে, যার ফলে ইউরোপকে এখন বড় অংশ বহন করতে হবে।
হেগসেথ বলেন, আমরা চাই ইউক্রেন একটি স্বাধীন ও সমৃদ্ধ দেশ হোক। তবে, ২০১৪ সালের আগের সীমান্ত ফিরে পাওয়ার লক্ষ্য বাস্তবসম্মত নয়। এটি কেবল যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করবে।
২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে এবং এরপর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তা দেয়। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে।
হেগসেথ বলেন, শান্তির জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা দরকার, যাতে যুদ্ধ আবার শুরু না হয়। তবে, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে না যে ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হবে।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য ইউরোপ ও অন্যান্য দেশের সেনাদের দিয়ে একটি শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠন করা যেতে পারে, তবে এটি ন্যাটোর মিশন হবে না। ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ সামরিক ও মানবিক সহায়তার প্রধান অংশ ইউরোপীয় দেশগুলোকে দিতে হবে বলেই সরাসরি জানিয়েছেন হেগসেথ।
তিনি বলেন, ইউরোপের নিরাপত্তার দায়িত্ব ইউরোপকেই নিতে হবে। ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক ও বেসামরিক সহায়তার প্রধান অংশ ইউরোপীয় দেশগুলোর দেওয়া উচিত।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তাকারী। তবে, ট্রাম্প বরাবরই ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন এবং দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ করার পক্ষে।
হেগসেথ আরও বলেন, ন্যাটো দেশগুলোকে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে হবে, যেখানে বর্তমান লক্ষ্য ২ শতাংশ।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তার জিডিপির ৩ দশমিক ৪ শতাংশ প্রতিরক্ষায় ব্যয় করে, যুক্তরাজ্য ব্যয় করে ২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোর ব্যয় প্রায় ৪ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমলে ইউক্রেনের পক্ষে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়া কঠিন হবে। যদিও রাশিয়া যুদ্ধে অনেক সৈন্য হারাচ্ছে, দেশটি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে দুর্বল করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এক সামরিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া এখন এককভাবে ইউরোপের সমগ্র সামরিক ব্যয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করছে প্রতিরক্ষায়।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি শান্তি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত, তবে ইউক্রেনকে অবশ্যই শক্ত অবস্থান থেকে আলোচনায় যেতে হবে।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যদি ট্রাম্প রাশিয়া ও ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারেন, তাহলে ইউক্রেন রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের কিছু অংশ বিনিময় চুক্তির অংশ করতে পারে।
এছাড়া, তিনি মার্কিন কোম্পানিগুলোকে ইউক্রেন পুনর্গঠনের জন্য লাভজনক চুক্তির প্রস্তাব দিতে চান, যা ট্রাম্পের সমর্থন পাওয়ার একটি কৌশল হতে পারে।
তবে, ট্রাম্পের বিরোধীরা তাকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে অভিযোগ করেছেন এবং বলছেন, তার নীতিগুলো ইউক্রেনের জন্য আত্মসমর্পণের শামিল, যা সমগ্র ইউরোপের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।