‘যুদ্ধের জন্য আরও ব্যয় সংকোচ করুন’: ১৯৪৫ সাল এবং এই সময়!
প্রথমে মহামারি, তারপর যুদ্ধ। মহামারির আঘাত কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তখনই ফের ধাক্কা খেয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার অর্থনীতিতে। তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে বাকি বিশ্বেও।
দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বগামী, দেখা দিয়েছে মন্দার আশঙ্কা। মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় নাকাল সাধারণ মানুষ।
এ পরিস্থিতিতে অনেক দেশের সরকারই নাগরিকদের ব্যয় কমানোর পরামর্শ দিচ্ছে। বাতলে দিচ্ছে খরচ কমানোর নানা পদ্ধতিও। এসব নিয়ে হচ্ছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
তবে এবারই প্রথম নয়, আগেও মন্দার সময় এরকম ব্যয় কমানোর নির্দেশনা ও উপায় বাতলে দিয়েছে সরকার। রীতিমতো বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে খরচ বাঁচানোর রাস্তা দেখানো হয়েছে সরকারিভাবে।
পৌনে এক শতাব্দী আগের ব্যয় সংকোচনের উপদেশ-সংবলিত বিজ্ঞাপন
খরচ কমানোর তেমনই একটা বিজ্ঞাপন দেখা যায় 'দেশ' পত্রিকায়, ১৯৪৫ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশ ভারত সরকার এ বিজ্ঞাপন প্রচার করে।
'আরও ব্যয় সংকোচ করুন' শিরোনামে দেশ পত্রিকায় ছাপা হয় ওই বিজ্ঞাপন। শিরোনামের ঠিক নিচেই লেখা: '—যুদ্ধের জন্য!', '—শান্তির জন্য!'
তার নিচে বলা হচ্ছে, 'মিতব্যয়ী হয়ে অভাব দূর করুন'।
তারপর লেখা: 'আজকাল অনেক জিনিসপত্রই দুষ্প্রাপ্য। আমদানি খুব কম। আপনার চাহিদা না কমালে গরিবরা তাদের নেহাত প্রয়োজনীয় জিনিসও পায় না। প্রত্যেক জিনিসই কম করে ব্যবহার করাই এখন স্বাদেশিকতা। মিতব্যয়িতা সব দিক দিয়ে ভালো—আর্থিক ব্যাপারে তো বটেই। দৈনন্দিন ছোটোখাটো সঞ্চয়ই মাসের শেষে মোটা হয়ে দাঁড়ায়। যুদ্ধের পরে জিনিসপত্রের দাম কমলে তখন বেশি টাকা খরচ করার সুযোগ হবে।'
'দেশ' পত্রিকার ওই বিজ্ঞাপনে আরও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, ব্যবহারের পর সাবান শুকনো রাখুন; বেশি দিন চলবে। পাশাপাশি ছোট উনুনে রান্না করে কয়লা, অর্থাৎ জ্বালানি বাঁচানোর পরামর্শও দেয়া হচ্ছে।
যুদ্ধকালে পেট্রোল বাঁচানোর জন্য ভারত সরকারের দেয়া ওই বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে—'গাড়ি গ্যারাজে রেখে দিন, যুদ্ধের জন্য পেট্রোল দরকার।'
এছাড়া আরও বলা হচ্ছে, শান্তি না আসা, অর্থাৎ যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত যেন নতুন আসবাবপত্র কেনা থেকে বিরত থাকেন।
বিয়ের খরচ কমিয়ে, বিয়েতে উপহার না দিয়ে নগদ টাকা কমানোর পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে বিজ্ঞাপনে।
আরও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে—'চাকর কম রেখে চালিয়ে নিন', 'চিঠিতে কাজ চললে টেলিগ্রাম করবেন না'।
বর্তমান সংকটে ব্যয় কমানোর পদক্ষেপ, পরামর্শ
পৌনে এক শতাব্দী পর আরেক অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি সারা বিশ্ব। জ্বালানি সংকটে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে লোডশেডিং বেড়েছে, কমে গেছে শিল্পকারখানার উৎপাদন। এ পরিস্থিতিতে ব্যয় কমানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে অনেক দেশের সরকার।
যেমন কিছুদিন আগেই বিদ্যুৎ-জ্বালানি সাশ্রয় করতে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে টাই না পরার আহ্বান জানিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ।
সানচেজ বলেন, এই পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে যে গরমেও মানুষ শীতল থাকবে। এবং গরম কমাতে জ্বালানি খরচ কমবে। কারণ এয়ার কন্ডিশনার কম ব্যবহার করা হবে।
এছাড়া বাংলাদেশেও গ্যাস, তেলের মতো জ্বালানি সাশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। যেমন এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে গত মাস থেকে। এছাড়া প্রয়োজন ছাড়া এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করতেও মানা করা হয়েছে।
তাছাড়া দেশে দেখা দিয়েছে তীব্র ডলার-সংকট। আজ (১০ আগস্ট) খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম উঠে গেছে ১১৯ টাকায়, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এ পরিস্থিতিতে কিছুদিন আগেই খরচ কমাতে গমের রুটি না খেয়ে চালের রুটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। তিনি বলেন, গমের রুটি না খেলে গম আমদানি করতে হবে না। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
ফরিদুল ইসলাম বলেছিলেন, 'আমরা সবাই যেন গমের আটার রুটি খাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে গেছি। আমরা তিন মাস গমের রুটি না খাই। দেখি না কী হয়? আমরা চালের আটার রুটি খাব। অসুবিধা কোথায়?'
এছাড়া বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে বিপণিবিতান, দোকানপাট। পাশাপাশি এলাকাভেদে কলকারখানায় একেক দিন করে সাপ্তাহিক ছুটি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।