কৈশোরে গর্ভাধারণ ও মাতৃত্বের হার বেড়েছে শহরাঞ্চলে: সমীক্ষা
১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে শহরাঞ্চলে কিশোরী বয়সে মা হওয়ার হার বেড়েছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পপুলেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (নিপোর্ট)-এর আরবান হেলথ সার্ভে ২০২১ অনুযায়ী, স্লাম এরিয়া অর্থাৎ বস্তি এলাকায় ১৯ বছরের কম বয়সী নারীদের মধ্যে ২২.১ শতাংশই ইতোমধ্যে গর্ভধারণ শুরু করেছে। অন্যদিকে, নন-স্লাম এরিয়ায় অর্থাৎ বস্তি নয় এমন এলাকায় ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী নারীদের এক-পঞ্চমাংশ এবং অন্যান্য শহুরে এলাকার ১০.৯ শতাংশ নারীর অবস্থা একই।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, দক্ষ পরিচারিকাদের দ্বারা জন্মদানের মতো মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার হার সবচেয়ে বেশি (৭০.৩ শতাংশ) ছিল নন-স্লাম এরিয়াতে এবং এই হার সবচেয়ে কম ছিল (৫৩.৭ শতাংশ) স্লাম বা বস্তি এলাকাগুলোতে।
একই সময়ে, কম বয়সে গর্ভধারণের হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বুকের দুধ খাওয়ানোর হার কমেছে।
আরবান হেলথ সার্ভে ২০২১ অনুসারে, স্লাম (৩১ শতাংশ), নন-স্লাম (৫৫ শতাংশ) এবং বাকি শহুরে এলাকায় (৫১ শতাংশ) নারীদের মধ্যে সি-সেকশন বা সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেওয়ার হার ছিল অনেক বেশি।
সুবিধাজনক এই প্রসবের প্রায় ৭৭ শতাংশ নন-স্লাম এরিয়ায়, ৭৫ শতাংশ বাকি শহরাঞ্চলে এবং সেই তুলনায় বস্তিতে এই হার ছিল ৫৮ শতাংশ।
২০২১ সালে গর্ভনিরোধকব্যবস্থা গ্রহণের হার শহরাঞ্চলের বস্তিতে সর্বোচ্চ (৭২ শতাংশ) এবং বাকি শহরাঞ্চলে ছিল সবচেয়ে কম (৬৮ শতাংশ)।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বস্তিতে ও বাকি শহর এলাকায় বসবাসকারী নারীদের মধ্যে মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার হার ১৭ শতাংশ পয়েন্ট এবং নন-স্লাম এলাকায় ১২ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও নন-স্লাম এরিয়ার মতো স্লাম বা বস্তি এলাকাতেও পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের হার বেড়েছে, তবে উভয় এলাকাতেই দীর্ঘ মেয়াদী এবং স্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহারের হার কম।
এদিকে, ২০১৩ সালের তুলনায় ৫ বছরের কম বয়সী অপুষ্ট শিশুদের পুষ্টির অবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে তিন এলাকাতেই।
তবে, স্লাম ও নন-স্লাম এলাকায় ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ২০১৩ সালের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে।
২০২১ সালে সিটি কর্পোরেশনগুলোর বস্তিতে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ছিল ৫৪ শতাংশ, যা ২০১৩ সালে ছিল ৫৯ শতাংশ।
অন্যদিকে, নন-স্লাম এলাকায় স্তন্যপানের হার ২০১৩ সালের ৫৮ শতাংশ থেকে কমে ২০২১ সালে ৪৯ শতাংশে এসে দাঁড়ায়।
জরিপে আরও দেখা গেছে, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিত্সার হার বস্তিতে সাড়ে ৬২ শতাংশ, যা বস্তি নয় এমন এলাকার ৫২ শতাংশের তুলনায় অন্তত ১০ শতাংশ বেশি।
সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, বস্তি, বস্তি নয় এমন এবং অন্যান্য শহুরে এলাকায় দুই কিলোমিটারের মধ্যে ৯০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর হাতের নাগালেই রয়েছে স্বাস্থ্য সুবিধা।
স্বাস্থ্য সচিব ডাঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের তুলনায় শহরের স্বাস্থ্যসেবা ভালো নয়; সে কারণে শহরের বস্তিতে স্কিলড বার্থ অ্যাটেনটেন্সের হার কম, নরমাল ডেলিভারির হারও কম।
"আমরা পঞ্চম সেক্টরাল প্ল্যানে আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার অন্তর্ভুক্ত করছি। একটি আলাদা অপারেশনের পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। এখন আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সমস্যার সমাধান হবে," যোগ করেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ইনস্টিটিউশনাল ডেলিভারির হার এখনও খুবই কম; শিশু ও মাতৃমৃত্যু কমাতে এটি বাড়াতে হবে।
"বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ সি-সেকশনের হার স্বাভাবিক। তবে, আমাদের সরকারি হাসপাতালে এই হার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে, বেসরকারি হাসপাতালে এই হার ৭০ শতাংশের বেশি। উপরন্তু, আর্থিক কারণে বেসরকারি হাসপাতালে অপ্রয়োজনে সি-সেকশনের হার বেশি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে সেবাদানের হার বাড়ানো গেলে মানুষ সেখানে বিনামূল্যে ডেলিভারি (সন্তান জন্মদান) করতে পারবে। এছাড়া জরিপেও বলা হয়েছে, গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসনের হার কমছে, যা একটি ভাল লক্ষণ," বলেন মন্ত্রী।
দেশব্যাপী তৃতীয় বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভে (বিইউএইচএস) ২০২১-এর ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ ভবনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশে আরবান হেলথ সার্ভে প্রথম হয়েছিল ২০০৬ সালে, এরপর ২০১৩ এবং সবশেষ তৃতীয়টি প্রকাশ হল ২০২১ সালের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে।
তিনটি মূল এলাকা থেকে সংগৃহীত নমুনা ও তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে এবারের প্রতিবেদন। ১১টি সিটি কর্পোরেশনের বস্তি ও বস্তি নয় এমন এলাকা, জেলা পৌরসভার অবশিষ্ট শহরাঞ্চল, এবং বড় শহরে বসবাসকারী ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষের ওপর চালানো হয়েছে এ জরিপ। ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে ১০ জুন মধ্যে তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়।