লাহোর থেকে মিরপুর, ১৮ বছরে মালিক ৫০০ নট আউট
প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট 'এ' ম্যাচে অভিষেকের কয়েক বছর হয়ে গেছে ততোদিনে। ২৩ বছর বয়সে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামেন শোয়েব মালিক। এরপর ১৮ বছরের দুর্দান্ত সফর। জাতীয় দল থেকে শুরু করে ঘরোয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ, বিশ্বের নানা প্রান্তে দাঁপিয়ে বেরিয়েছেন পাকিস্তানের তারকা এই ক্রিকেটার। সিয়ালকট স্ট্যালিয়ন্সের হয়ে লাহোর ইগলসের বিপক্ষে ম্যাচের পর মিরপুরে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ঢাকা ডমিনেটর্সের ম্যাচ; ১৮ বছরের যাত্রায় ৫০০ টি-টোয়েন্টি খেলার মাইলফলকে পৌঁছে গেলেন মালিক।
গত ১ ফেব্রুয়ারি ৪১ বছরে পা দিয়েছেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার, কিন্তু ফিটনেসে তিনি এখনও তরুণ। যেন ২৫ বছরের টগবগে যুবক। অথচ মালিকের পেশাদার ক্যারিয়ারই ২৫ বছরের (২৬ বছর) বেশি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যাত্রা কয়েক বছর পর শুরু হওয়ায় এই ফরম্যাটে তার ক্যারিয়ার ১৮ বছরের।
মালিক তৃতীয় ক্রিকেটার, যিনি টি-টোয়েন্টিতে ৫০০ ম্যাচ খেললেন। সবার আগে এ কীর্তি গড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার কাইরন পোলার্ড। ৫০০ টি-টোয়েন্টি খেলার মাইলফলক স্পর্শ করা দ্বিতীয় ক্রিকেটারও ওয়েস্ট ইন্ডিজের, তিনি আরেক অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্রাভো। পোলার্ড সবচেয়ে বেশি ৬১৪টি ম্যাচ খেলেছেন, ব্রাভো খেলেছেন ৫৫৬টি ম্যাচ।
পাকিস্তান জাতীয় দলেও লম্বা টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার মালিকের। ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচ খেলা অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার ১৭ বছরে ১২৪ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। একটি ম্যাচ আইসিসি একাদশের হয়ে খেলেছেন মালিক, বাকি ১২৩ ম্যাচ পাকিস্তানের হয়ে। যা পাকিস্তানের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্বে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার তালিকায় তিনি দুই নম্বরে। তার চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছেন কেবল ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা, ১৪৮টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে খেলা মালিক ২৭টি ভিন্ন ভিন্ন দলের হয়ে খেলেছেন। জাতীয় দলের বাইরে সবচেয়ে বেশি ৬৪টি ম্যাচ খেলেছেন সিয়ালকট স্ট্যালিয়ন্সের হয়ে। সব মিলিয়ে ৪৯৯ ম্যাচে (বিপিএলের সর্বশেষ ম্যাচ বাদে) ১২ হাজার ২৮০ রান করেছেন মালিক, যা টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক ক্রিস গেইল। সংক্ষিপ্ততম এই ফরম্যাটের ফেরিওয়ালা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে পছন্দ করা ক্যারিবীয় এই ব্যাটিং ঝড় ১৪ হাজার ৫৬২ রান করেছেন।
টি-টোয়েন্টিতে ৭৫টি হাফ সেঞ্চুরি বা পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস আছে মালিকের, যা ক্রিকেট বিশ্বে সপ্তম সর্বোচ্চ। হাজার হাজার রান, কতো না কীর্তি বসেছে মালিকের নামের পাশে। এর মাঝেও আছে আক্ষেপ। লম্বা ক্যারিয়ারে কোনো সেঞ্চুরি করতে পারেননি তিনি, ডানহাতি এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ৯৫। ওই ম্যাচে ওপেনিংয়ে নেমে ৯৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
বেশিরভাগ সময়ে ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে অবদান রাখা মালিক দারুণ বোলারও। ডানহাতি অফ স্পিনে ১৬২টি উইকেট নিয়েছেন তিনি, ৫ উইকেট নিয়েছেন দুবার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মালিকের উইকেট ২৮টি। টি-টোয়েন্টিতে মালিক ম্যাচসেরা হয়েছেন ৪১ বার, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। সবচেয়ে বেশি ৬০ বার ম্যাচসেরা হয়েছেন ক্রিস গেইল, দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স হয়েছেন ৪২ বার।
আরেকটি কীর্তিতে মালিক অনন্য। ২০০৫ সালে টি-টোয়েন্টি অভিষেকের পর টানা ৮৯ ম্যাচে কোনো রান না করে আউট হননি তিনি। অর্থাৎ, ৮৯ ম্যাচে শূন্যের স্বাদ নিতে হয়নি তাকে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত এটা বিশ্ব রেকর্ড ছিল। তার এই রেকর্ড ভাঙেন উস্টারশায়ারের বেন কক্স। ৯৬তম ম্যাচে গিয়ে প্রথমবারের মতো শূন্য রানে আউট হন তিনি।
২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো বিপিএল খেলা মালিক আজ ৫১তম ম্যাচ খেললেন। এদিন মাঠে নামার সময় রংপুর রাইডার্স তাকে গার্ড অব অনার দেয়, উপহার পান সতীর্থদের স্বাক্ষর সম্বলিত জার্সিও। আট বছরের বিপিএল ক্যারিয়ারে চিটাগং ভাইকিংস, রাজশাহী রয়্যালস ও রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলেছেন পাকিস্তানের এই ক্রিকেটার। ৮ হাফ সেঞ্চুরিতে বিপিএলে মালিকের রান ১ হাজার ২৭৬। যা বিপিএলে বিদেশিদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৭২৩ রান ক্রিস গেইলের।