তিনমাসে ব্যাংকিং খাতে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৩,৪২৬টি
দেশে ব্যাংকিং খাতে ১ কোটি টাকার বেশি অ্যাকাউন্ট হিসেবদারীর সংখ্যা গত ২০২২ এর ডিসেম্বর প্রান্তিকে বেড়েছে ৩,৪২৬টি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের 'শিডিউলড ব্যাংকস স্ট্যাটিস্টিকস' রিপোর্টে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, বিশ্ববাজারের ন্যয় দেশের বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার ফলে অধিকাংশ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক মুনাফা করেছে যার ফলে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট বেড়েছে।
রিপোর্টে দেখা গেছে, ডিসেম্বর শেষে কোটিপতি অ্যাকউন্ট হোল্ডার ১ লাখ ৯৯৪৬ জন। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৫২০।
কোভিডের পর থেকে কোটিপতি হিসেবে পরিমাণ বাড়ছিল। কিন্তু ২০২২ এর সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট কমেছে প্রায় দুই হাজারটি ।
ব্যাংকাররা বলেন, কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব আর কোটিপতির সংখ্যা কখনই এক নয়। এসব ব্যাংক হিসাবের গ্রাহকদের মধ্যে ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি। দেশে আসল কোটিপতি এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আলী টিবিএসকে বলেন, "দেশে ওভারঅল মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণে ডিপোজিটের পরিমাণ কমছে। তবে কোটিপতি অ্যাকউন্ট এর পরিমাণ বাড়ছে। এর ফলে দেখা যাচ্ছে ইনইকোয়ালিটি বাড়ছে।"
"মূলত বিশ্ববাজারে গত এপ্রিল থেকে পণ্যের দাম ব্যাপক বাড়ছে। অনেক ব্যবসায়ীদের আগে ক্যাপিটাল মেশিনারিজসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আমদানিকৃত পণ্য মজুত ছিল। যার কারণে বিশ্ববাজারের ন্যয় ওইসকল পণ্যের দাম দেশের বাজারে ব্যাপক বাড়ায় অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ব্যাপক লাভ করেছে।"
তিনি আরও বলেন, "গত বছরের শুরু থেকে ডলারের দাম বাড়ছে। রপ্তানিকারকরা যখন পণ্য রপ্তানি করেছে তখন ডলারের দাম কম ছিল। রপ্তানি আয় যখন দেশে এসেছে তখন ডলারের দাম অনেক বাড়তি ছিল। এর ফলেও রপ্তানিকারকদের আয় অনেক বেড়েছে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২২ এর ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোয় জমাকৃত আমানতের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। মোট ১৩ কোটি ৬২ লাখ ব্যাংক হিসাবে এ আমানত জমা হয়েছে। এরমধ্যে কোটিপতিদের যে আমানত রয়েছে তা মোট ব্যাংকিং খাতের আমানতের ৪২.৬৩%।
কোটি টাকার স্থিতি থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিলেও সে হিসাবগুলোর মধ্যে ব্যক্তির সংখ্যা কত, সে পরিসংখ্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও নেই।
দেশের কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে কথা বলে জানা যায়, এ ব্যাংকগুলোর কোটি টাকার বেশি হিসাবের মাত্র ৫-৭ শতাংশ ব্যক্তির। বাকি হিসাবগুলো সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি খাতের প্রতিষ্ঠানের। এরমধ্যে করপোরেট প্রতিষ্ঠান যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "দেশের কোটিপতির সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারণ কোটিপতিরা একাধিক অ্যাকাউন্টে টাকা রাখে যার কারণে তাদের মোট টাকার অঙ্কটা পরিসংখ্যানে আসে না।"
তিন মাসে এনবিএফআইগুলোতে কোটিপতি একাউন্ট বেড়েছে ৪৩৪টি
মুদ্রাস্ফীতির কারণে দেশের ব্যাংক ও নন-ব্যাংক চ্যানেলে ডিপোজিটের গ্রোথ কমলেও এনবিএফআই এ অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোটি টাকার বেশি জমা থাকা হিসাব বেড়েছে ৪৩৪টি।
একইসময়ে এসব একাউন্টে জমা টাকার পরিমাণও ১৩৩৭ কোটি টাকা বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিসেম্বরের তথ্য বলছে, ডিসেম্বর শেষে এনবিএফআই সেক্টরে কোটি টাকার বেশি জমা থাকা ৫৩২৬টি একাউন্টে মোট জমার পরিমাণ ২৪,৮৩৭ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে এই সেক্টরে ৪৮৯২টি কোটিপতি একাউন্ট ছিল। এসব একাউন্টে জমা ছিল ২৩,৫০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. কায়সার হামিদ টিবিএসকে বলেন, "কোটি টাকার বেশি ডিপোজিট থাকা একাউন্টগুলোর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্টই বেশি। এছাড়া কিছু ব্যক্তিগত একাউন্টও আছে। তবে সামগ্রিকভাবে দেখলে ডিপোজিট কিছুটা বেড়েছে।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ডিসেম্বর শেষে এনবিএফআই এর ৫.২২ লাখ একাউন্টে জমা ছিল ৪৩,৭৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, কোটিপতি একাউন্টগুলোতেই আছে মোট জমার ৫৭%।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকটি এনবিএফআইএর এমডি জানান, "আগের বেশ কয়েকটি কোয়ার্টারে পিপলস লিজিং এর হিসাব যোগ করা হয়নি। ডিসেম্বর কোয়ার্টারে সেটি যুক্ত হয়েছে।"
"নানা অনিয়মের কারণে খারাপ অবস্থায় থাকা এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০০০ কোটি টাকা ডিপোজিট আছে। একারণেই ডিপোজিটের গ্রোথ দেখাচ্ছে। মূলত অল্প কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিগুলোতে ডিপোজিট সেভাবে বাড়েনি," বলেন তিনি।