এবার প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা
বুধবার মধ্যরাতে দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
মামলায় প্রথম আলোর সাভার প্রতিনিধি শামসুজ্জামান শামসকেও আসামি করা হয়েছে; এছাড়াও আসামিদের মধ্যে 'সহযোগী ক্যামেরাম্যান'সহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা রয়েছেন বলে জানা গেছে।
রাত ১১টা ১০ মিনিটের দিকে আইনজীবী আবদুল মালেক ওরফে মশিউর মালেক বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলাটি করেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ (২), ৩১ ও ৩৫ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ নং ধারাটি 'আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ, ইত্যাদি' সম্পর্কিত। এখানে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করার বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর বা সে উদ্দেশ্যে অপপ্রচার বা কোনো তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ বা প্রচার করতে কিংবা সহায়তা করেন, তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
২৫ (২) উপ-ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে– উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংগঠন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৩ বৎসর কারাদণ্ডে, অনধিক ৩ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দন্ডিত হইবেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩১ ধারা 'আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ইত্যাদির অপরাধ ও দণ্ড' সম্পর্কিত। 'অপরাধ সংঘটনে সহায়তা ও উহার দণ্ড' সম্পর্কে বলা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩৫ ধারায়। ৩৫ (২) উপ-ধারায় রয়েছে যে, অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করিবার ক্ষেত্রে, মূল অপরাধটির জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রহিয়াছে, কোনো ব্যক্তি সেই দণ্ডেই দণ্ডিত হইবেন।
বাদী প্রথম আলো সম্পাদক ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে প্রিন্ট, অনলাইন এবং ইলেকট্রিক মিডিয়া ব্যবহার করে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগ আনেন।
পরে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে মামলার বাদী আবদুল মালেকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, 'মামলাটার আমি এজাহার দায়ের করেছি, হয়েছে (মামলা) কি না, জানি না। হয়েছে কি না, ওরা (পুলিশ) যোগাযোগ করেছে কোথায় কোথায়, পুলিশের ব্যাপার তো, বোঝেন না।'
প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রমনা থানার পরিদর্শক আবু আনছারকে।
তবে মামলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি।
মামলার এজাহারে একাত্তর টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক ফারজানা রূপার তদন্তের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, শামস তার প্রতিবেদনে ছবি ব্যবহারের জন্য ৭ বছরের এক শিশুকে ১০ টাকা দিয়েছিলেন। পরে একই সংবাদে একটি উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয় যা আসলে শিশুটির ছিল না।
আবদুল মালেক এজাহারে বলেন, প্রথম আলো তাদের অনলাইন ভার্সনে অসৎ উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে একটি মিথ্যা ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এতে আরও বলা হয়, প্রথম আলোর প্রতিবেদক এবং সম্পাদক দেশের মহান স্বাধীনতা সম্পর্কে জনমনে বীতশ্রদ্ধা সৃষ্টির মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করাসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার হীন উদ্দেশ্যে অনলাইন মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়েছেন।
একদিন আগেই বুধবারে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে একই আইনে অভিযোগ দায়ের করেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম কিবরিয়া।
তেজগাঁও থানায় দায়ের করা মামলাটির বিবরণীতে বলা হয়, শামস তার প্রতিবেদনের জন্য একটি শিশুকে ১০ টাকা দেন এবং তার বানোয়াট উদ্ধৃতি দেন।
বিবরণীতে আরও বলা হয়, এটি প্রমাণ করে যে গত ২৬ মার্চ দৈনিক প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন বিশ্বব্যাপী সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য একটি মহলের প্ররোচনায় করা হয়েছে।
কিবরিয়া তার বিবরণীতে বলেন, স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে তার অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে।
বুধবার গোলাম কিবরিয়ার মামলা দায়েরের ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ভোর ৪টার দিকে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন আমবাগান এলাকা থেকে সিআইডি পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকের লোকজন শামসুজ্জামানকে তুলে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেদিন তিনটি গাড়িতে করে প্রায় ১৬ জন শামসুজ্জামানের বাসার সামনে যান। তুলে নেওয়ার পর শামসুজ্জামানকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন এবং একজন নিরাপত্তা প্রহরীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি খাবারের দোকানে যান তারা। সেখানে সাহরি খান।
ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তারা শামসুজ্জামানের বাসায় ফিরে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিনটি গাড়ির মধ্যে একটিতে নম্বর প্লেট ছিল না।