চট্টগ্রামে ১৫টির মধ্যে ১৩টি অক্সিজেন প্ল্যান্টই ঝুঁকিপূর্ণ: ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদন
চট্টগ্রামে বিদ্যমান ১৫টি অক্সিজেন প্ল্যান্টের মধ্যে ১৩টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। এরমধ্যে ১১টি প্ল্যান্টে নেই ফায়ার সেফটি প্ল্যান।
এছাড়াও, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া বিভিন্ন পণ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যবহৃত ২৪টি কনটেইনার ডিপোর (অফডক) ২১টিই ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়ন করেনি।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল হালিম।
তিনি বলেন, "সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনার পর চট্টগ্রামে বিদ্যমান অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলোতে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নিয়ে তদন্ত করে ফায়ার সার্ভিস।"
প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনতিবিলম্বে ফায়ার সেফটি প্ল্যান গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান মো. আব্দুল হালিম।
গত ৪ মার্চ সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় সাতজন নিহত এবং ২৫ জন আহত হন।
ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস গঠিত তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে ফায়ার সেফটি প্ল্যান আছে মাত্র চারটি কারখানার; ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার সংখ্যা ১৩টি। এর মধ্যে ফায়ার সেফটি প্ল্যান থাকার পরেও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে দুটি অক্সিজেন কারখানা।
ফায়ার সেফটি প্ল্যান নেই এমন প্রতিষ্ঠান গুলো হলো- লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড, কবির অক্সিজেন লিমিটেড, আবুল খায়ের স্টীল মেল্ডিং লিমিটেড, অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন লিমিটেড, গোল্ডেন অক্সিজেন লিমিটেড, মাস্টার স্টীল এন্ড অক্সিজেন, ব্রাদার্স অক্সিজেন লিমিটেড, শীতলপুর অক্সিজেন, রিগ্যাল অক্সিজেন, মানতি স্টিল এন্ড অক্সিজেন লিমিটেড ও অক্সিকো লিমিটেড।
ঝুঁকিমুক্ত অক্সিজেন কারখানাগুলো হলো- জিপিএইচ অক্সিজেন লিমিটেড ও বিএসআরএম অক্সিজেন রিজার্ভার।
তদন্ত দলের সমন্বয়ক চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, "পরিদর্শনের পরপরই এই রিপোর্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরবরাহ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেফটি প্ল্যান নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় জেলা প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।"
ফায়ার সেফটি প্ল্যান না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল খায়ের স্টিল মিলের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ইমরুল কাদের ভূঁইয়া বলেন, "আমাদের অক্সিজেন কারখানায় ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য আবেদন করেছি। আশা করছি তা শিগগিরই পাব। তবে ফায়ার সেফটি প্ল্যান না থাকলেও আমদের কারখানায় জলাধার, ফায়ার হাইড্রেন্ট সিস্টেম ও উন্নতমানের ফায়ার সেফটি ইকুইপমেন্ট রয়েছে।"
শীতলপুর অক্সিজেন প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম উদ্দিন বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে জাহাজ আমদানি বন্ধ থাকায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারখানা বন্ধ রয়েছে। তাই সেফটি প্ল্যান নবায়ন করা যায়নি।
এদিকে অক্সিজেন কারখানার পাশাপাশি চট্টগ্রামের ২৪টি কনটেইনার ডিপো (অফডক) পরিদর্শন করে পৃথক রিপোর্ট দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৪টি কনটেইনার ডিপোর মধ্যে ফায়ার সেফটি প্ল্যান আছে ১৪টির। কিন্তু প্ল্যান বাস্তবায়ন করেছে মাত্র তিনটি কনটেইনার ডিপো। এছাড়া ৯টি কনটেইনার ডিপোর ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
ফায়ার সেফটি প্ল্যান একেবারে বাস্তবায়ন করেনি এমন কনটেইনার ডিপো ১১টি। এর মধ্যে চারটি অফডককে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো হলো- নেমসান কন্টেইনার লিমিটেড, এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, চট্টগ্রাম কন্টেইনার ট্রান্সপোর্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (ইউনিট-১) ও চট্টগ্রাম কন্টেইনার ট্রান্সপোর্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (ইউনিট-২)।
২০২২ সালের ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে আগুন থেকে বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের ১৩ কর্মীসহ ৫১ জন নিহত হন। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সদস্যসহ দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
সেইসঙ্গে অগ্নিকাণ্ডে ডিপোর একাংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এবং পুড়ে যায় পণ্যবাহী অন্তত ১০০ কনটেইনার। সর্বশেষ গত ১১ মার্চ নেমসন কনটেইনার ডিপোর কাছে ইউনিটেক্স স্পিনিং মিল লিমিটেডের গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২ হাজার ৭০০ টন আমদানিকৃত তুলা ভস্মিভূত হয়।
কনটেইনার ডিপোর নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপো সমিতির সভাপতি নুরূল কাইয়ূম খান বলেন, "অনেকগুলো কমপ্লায়েন্সের শর্ত মেনে ডিপোগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে। এরপরও যে ঘাটতি নেই তা নয়। এখন ফায়ার সার্ভিসের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী ডিপোগুলো চলবে বলে আসা রাখি।"
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্সের সকল শর্ত পুরণ না করলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।