এ বছর বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ অর্থনীতির দেশ যেগুলো
২০২৩ সালে জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ভিত্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র।
আর বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির তালিকায় দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম স্থানে আছে যথাক্রমে চীন, জাপান, জার্মানি ও ভারত। গত বছরও এ পাঁচটি দেশই বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির তালিকায় প্রথম পাঁচটি অবস্থানে ছিল।
বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির তালিকায় থাকা ছয় থেকে দশ নম্বর দেশগুলো হচ্ছে: যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা ও ব্রাজিল।
ফোর্বস বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর এই তালিকা তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য বিশ্লেষণ করে। এ তালিকা প্রস্তুত করার জন্য মূল মানদণ্ড ধরা হয়েছে জিডিপি। প্রথাগত পদ্ধতিতে একটি দেশের অভ্যন্তরে এক বছরে চূড়ান্তভাবে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবার বাজারে সামষ্টিক মূল্যকেই জিডিপি বলা হয়। এছাড়া একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি দেশের অভ্যন্তরে ভোক্তা ব্যয়, সরকারি ব্যয়, ব্যবসায়িক ব্যয় বা নতুন বিনিয়োগ এবং নিট রপ্তানি মূল্য যোগ করেও জিডিপি নির্ধারণ করা হয়।
২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০ অর্থনীতি
বিশ্বের বৃহত্তম পাঁচ অর্থনীতি হচ্ছে: যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, জার্মানি ও ভারত।
এবার একনজরে দেখে নেওয়া যাক আইএমএফের তথ্য অনুসারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ অর্থনীতির দেশ কোনগুলো:
অবস্থান ও দেশ | জিডিপি (বিলিয়ন ডলারে) | মাথাপিছু জিডিপি (হাজার ডলারে) |
১. যুক্তরাষ্ট্র | ২৬,৮৫৪ | ৮০.০৩ |
২. চীন | ১৯,৩৭৪ | ১৩.৭২ |
৩. জাপান | ৪,৪১০ | ৩৫.৩৯ |
৪. জার্মানি | ৪,৩০৯ | ৫১.৩৮ |
৫. ভারত | ৩,৭৫০ | ২.৬ |
৬. যুক্তরাজ্য | ৩,১৫৯ | ৪৬.৩১ |
৭. ফ্রান্স | ২,৯২৪ | ৪৪.৪১ |
৮. ইতালি | ২,১৭০ | ৩৬.৮১ |
৯. কানাডা | ২,০৯০ | ৫২.৭২ |
১০. ব্রাজিল | ২,০৮০ | ৯.৬৭ |
১. যুক্তরাষ্ট্র
বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার: ১.৬%
১৯৬০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দৃঢ়ভাবে শীর্ষ অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে জিডিপির আকারের দিক থেকে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। বৈচিত্র্যমূলক অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দেশটির অন্যতম উল্লেখযোগ্য খাত হচ্ছে: সেবা, উৎপাদন, আর্থিক ও প্রযুক্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাবাজারের আকারও খুব বড়। এদেশে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা মনোভাবকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়। এছাড়া দেশটির অবকাঠামো অত্যন্ত মজবুত। পাশাপাশি এখানকার পরিবেশও ব্যবসার জন্য অনুকূল।
২. চীন
বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার: ৫.২%
অর্থনীতিতে চীনের উল্লেখযোগ্য উত্থান ঘটেছে। ১৯৬০ সালে জিডিপির আকারে দেশটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ছিল, ২০২৩ সালে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে।
চীনা অর্থনীতি মূলত উৎপাদন, রপ্তানি ও বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল। দেশটির বিশাল জনশক্তি, জোরালো সরকারি সমর্থন, অবকাঠামোগত অগ্রগতি ও দ্রুত বর্ধনশীল ভোক্তাবাজার রয়েছে।
৩. জাপান
বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার: ১.৩%
উন্নত প্রযুক্তি, উৎপাদন দক্ষতা ও সেবা শিল্পের ওপর ভর করে জাপানের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। দেশটির উল্লেখযোগ্য খাতের মধ্যে রয়েছে: অটোমোটিভ, ইলেকট্রনিক, যন্ত্রপাতি ও আর্থিক খাত।
কাজের নৈতিকতা, প্রযুক্তগত উৎকর্ষ ও সর্বোৎকৃষ্ট মানের পণ্য রপ্তানির অনন্যসাধারণ বৈশিষ্ট্যের জন্য জাপান খ্যাতি কুড়িয়েছে।
৪. জার্মানি
বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার: –০.১%
জার্মানির অর্থনীতি ব্যাপকভাবে রপ্তানিনির্ভর। প্রকৌশল, অটোমোটিভ, রাসায়নিক ও ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের জন্য দেশটি সুনাম কুড়িয়েছে।
এছাড়া দেশটি দক্ষ শ্রমশক্তি, শক্তিশালী গবেষণা ও উন্নয়ন উদ্যোগ এবং উদ্ভাবনের প্রতিশ্রুতির সুবিধা পায়।
৫. ভারত
বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার: ৫.৯%
ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। দেশটির অর্থনীতি মূলত তথ্যপ্রযুক্তি, সেবা, কৃষি ও উৎপাদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর ওপর নির্ভরশীল।
এছাড়া ভারতের আছে বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, তরুণ ও প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ শ্রমশক্তি এবং বিকাশমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি।
৬. যুক্তরাজ্য
বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার: –০৩%
যুক্তরাজ্যের (ইউকে) অর্থনীতি মূলত সেবা, উৎপাদন, আর্থিক ও সৃজনশীল খাতের মিশ্রণ নিয়ে গঠিত। লন্ডন আন্তর্জাতিক আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। তাই এখানে অনেক দেশি বিনিয়োগ আসে।
৭. ফ্রান্স
বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার: ০.৭%
ফ্রান্সের অর্থনীতি বৈচিত্র্যময়। এরোস্পেস, পর্যটন, বিলাসদ্রব্য ও কৃষির মতো শিল্পের ওপর মূলত দেশটির অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে। ফ্রান্স তার শক্তিশালী সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থা, উন্নত অবকাঠামো এবং গবেষণা ও উন্নয়নে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের জন্য সুবিদিত।
৮. ইতালি
বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার: ০.৭%
ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হলো ইতালি। দেশটির বাজার অত্যন্ত উন্নত। প্রভাবশালী ব্যবসায়িক খাত এবং পরিশ্রমী ও প্রতিযোগিতামূলক কৃষি শিল্পের দেশটি সুপরিচিত।
৯. কানাডা
বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার: ১.৫%
কানাডার অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে তেল, গ্যাস, খনিজ পদার্থ ও কাঠের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর। এছাড়া দেশটির সেবা খাত অত্যন্ত সমৃদ্ধ। পাশাপাশি উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত উন্নতিতে দেশটি বেশ উৎসাহ দেয়।
১০. ব্রাজিল
বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার: ০.৯%
ব্রাজিলের অর্থনীতি কৃষি, খনি, উৎপাদন ও সেবা খাতগুলোর ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কৃষি উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য দেশটি আন্তর্জাতিক হাব। দ্রব্যমূল্য, অভ্যন্তরীণ ভোগ ও অবকাঠামোর অগ্রগতিসহ বেশ কয়েকটি জিনিসের ওপর ভর করে ব্রাজিলের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।