রামপুরা-ডেমরা এক্সপ্রেসওয়ে: ৭৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন সম্পন্ন হলেও চূড়ান্ত হয়নি নকশা
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ব্যবস্থাপনায় প্রস্তাবিত রামপুরা-আমুলিয়া-ডেমরা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য ৭৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)।
বেসরকারি অংশীদারের সঙ্গে মঙ্গলবার সংস্থাটির ঋণ চুক্তি সই হতে যাচ্ছে। আর এই চুক্তির পরপরই ১৩.৫ কিলোমিটার সড়কের চার লেনের কাজ শুরুর তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে সরকারের পিপিপি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
বিনিয়োগ চূড়ান্ত হয়ে আসলেও এলাইনমেন্টে বিভিন্ন সংস্থার আপত্তি থাকায় ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বিকল্প যোগাযোগ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটির মূল নকশা চূড়ান্ত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
২,৯০৪ কোটি টাকার চুক্তির আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চীনের একটি কনসোর্টিয়াম। এর বাইরে ভূমি অধিগ্রহণ, ইউটিলিটি স্থানান্তর ও পিপিপি প্রকল্পে বিভিন্ন সহায়তা দিতে ১২০৯.৬০ কোটি টাকায় পৃথক সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
অবকাঠামোটি নির্মাণের কাজ শেষ হলে রাজধানীর উত্তর ও পূর্বাঞ্চল থেকে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ এবং দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন সহজ হবে বলে প্রকল্পের ডকুমেন্টে দাবি করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সড়কটির এলাইনমেন্ট নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের আপত্তি রয়েছে। আপত্তি নিরসনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে।
এর বাইরে উত্তর সিটি করপোরেশন, রাজউক ও সড়ক বিভাগের অংশগ্রহণে আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, রামপুরা খালের পাড় ঘেঁষে এক্সপ্রেসওয়ের বেশ কয়েকটি পিলার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ফলে খালের পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করে সিটি করপোরেশন।
তাছাড়া এক্সপ্রেসওয়ের একটি র্যাম্প হাতিরঝিলে নামার প্রস্তাবনার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি হাতিরঝিল প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও আপত্তি জানিয়েছে।
দুই সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রগতি সরণি প্রধান সড়কের রামপুরা টিভি স্টেশনের সামনে একটি ইউলুপ রয়েছে যা হাতিরঝিল প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় সমীক্ষার মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে।
এক্সপ্রেসওয়ের আরও একটি র্যাম্প নির্মাণ করা হলে হাতিরঝিলের ট্রাফিক সার্কুলেশন পরিকল্পনাটি ব্যাহত হতে পারে বলেও ধারণা দুই সংস্থার। এই র্যাম্পের কারণে নিজেদের ভবন ও স্থাপনার ক্ষতি হবে বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ টেলিভিশন।
সম্প্রতি সওজে অনুষ্ঠিত সাপোর্ট প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) কমিটির সভায় বলা হয়েছে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে কয়েক দফায় অনাপত্তি চাওয়া হলেও বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা পেতে বিলম্ব হচ্ছে। এর ফলে প্রকল্পের নকশাও চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে পিপিপি অফিসের মহাপরিচালক (প্রোগ্রামিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন) মোঃ আবুল বাশার বলেন, "পিপিপি প্রকল্পটির বিনিয়োগকারী চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ায় অফিসিয়ালি কাজ শুরুর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তবে এলাইনমেন্ট নিয়ে সরকারের একাধিক সংস্থার আপত্তির কারণে চূড়ান্ত নকশার কাজ শেষ হয়নি।"
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের আপত্তির বিষয়টি ইতোমধ্যেই সুরাহা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের সঙ্গেও নিবিড়ভাবে কাজ চলছে। সব সমস্যার সমাধান করে দ্রুতই প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সূত্র জানায়, গত বছরের শুরুতে চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এবং এর সিস্টার কনসার্ন চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশন-এর সঙ্গে সড়কটি উন্নয়নে ২,০৯৪ কোটি টাকার চুক্তি করে সরকার।
২৫ বছরের চুক্তির আওতায় চার বছরে নির্মাণকাজ শেষ করে আরও ২১ বছর সড়কটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে এই কনসোর্টিয়াম। এ সময়ে তারা টোল সংগ্রহ করে সরকারের তহবিলে জমা দেবে।
প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডির দায়িত্বে ছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে চালু হলে প্রতিদিন ৩২ হাজার যানবাহন সড়কটি ব্যবহার করবে। আর ২০৩৫ সালে এই সংখ্যা ৫৫ হাজার আর ২০৫০ সালে ৮৫ হাজারে উঠবে।
তবে বিনিয়োগকারীপক্ষ যানবাহনের এই সংখ্যার কোন ঝুঁকি নিচ্ছে না। তারা প্রতি ছয়মাস পরপর ১০৭.৭০ কোটি টাকা হিসেবে ৪২ কিস্তিতে সরকারের কাছ থেকে মোট ৪,৫২৩ কোটি টাকা আদায় করবে। এ হিসেবে কনসোর্টিয়ামের লাভ থাকবে ২,৪২৯ কোটি টাকা।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৩৮.৭৫ একর জমি অধিগ্রহণে ১,০৫১ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৯৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সহায়তা প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে ১২.২২%।