তলিয়ে যাওয়ার আগে টাইটানিকে পরিবেশিত হয়েছিল যেসব খাবার
বিশ্ব ইতিহাসে বৃহৎ এক জায়গা দখল করে আছে টাইটানিক জাহাজ। সে সময়ে এটিই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও বিলাসবহুল জাহাজ। কিন্তু এর শেষ পরিণতি ছিল সত্যিই করুণ। প্রথম যাত্রায়ই বিশাল আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে গিয়েছিল জাহাজটি।
সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এই জাহাজে পরিবেশিত একটি খাদ্যতালিকার ছবি প্রকাশ করেছে। জাহাজটি তলিয়ে যাওয়ার আগে এটিই পরিবেশিত সর্বশেষ খাবার তালিকা ছিল কি-না সেটি অবশ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তালিকায় পরিবেশিত এই খাবার ৭০ হাজার ইউরো মূল্যে বিক্রির আশা করা হয়েছিল। খাবারের তালিকাটি দেখে অনেকের বেশ কৌতূহলও তৈরি হয়েছে। প্রথমত, অনেকেই ভাবছেন, জাহাজটি তলিয়ে যাওয়ার সময় যখন এর যাত্রীরা লাইফবোটে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি করছিলেন, সে মুহূর্তে কে এই তালিকাটি নিয়েছিলেন? দ্বিতীয়ত; তালিকায় লেখা ভিক্টোরিয়া পুডিংই বা কি?
যদিও দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর খুব সহজ। এটি হলো মিষ্টান্নের সঙ্গে পরিবেশিত এপ্রিকট (এক ধরনের ফল) ও ফরাসী আইসক্রিমের সংমিশ্রণে তৈরি খাবার; যা জাহাজটি যাত্রার পর ভাত, আলু ও পার্সনিপ পিউরি (এক জাতীয় খাবার), ঝিনুক, স্যামন মাছ, গরুর মাংস, কবুতরের মাংস, মুরগীর মাংস এই খাবারগুলোর পরে পরিবেশন করা হয়েছিল।
আয়ারল্যান্ডের কুইন্সটাউন বন্দর ছাড়ার দিনে জাহাজটিতে কী কী খাবার পরিবেশন করা হয়েছিল সেটি এ তালিকা থেকে জানা যায়।
১৯৬০ এর দশকে কানাডার নোভা স্কটিয়া অঙ্গরাজ্যের ইতিহাসবিদ লেন স্টিফেনসনের একটি ছবির অ্যালবাম থেকে তালিকাটি খুঁজে পাওয়া যায়।
একটি নিলামকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক অ্যান্ড্রু অলড্রিজের বিশ্বাস, জাহাজের প্রথম শ্রেণির নাগরিকদের জন্য এমন আরো কয়েকটি তালিকা হয়ত থাকতে পারে। সেজন্য তিনি অনেক খোঁজাখুঁজিও করেছেন।
তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বের আরো কয়েকটি জাদুঘরের সঙ্গে কথা বলেছি, টাইটানিক নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কোথাও এমন তালিকা দ্বিতীয়টি পাইনি।'
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে বহু স্মৃতিচিহ্ন পাওয়া গেছে। এগুলোর কিছু কিছু সরাসরি ধ্বংসাবশেষ থেকে সংগ্রহ করা, কিছু দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া।
প্লাইমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক ইতিহাস বিষয়ক সহযোগী অধ্যাপক হ্যারি বেনেট নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, এসব জিনিস দুর্ঘটনার পর উদ্ধার নিহতদের পরনের জামা-কাপড়ের পকেট থেকে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। এখানে নৈতিকতার প্রশ্ন থাকলেও এগুলো কারো ব্যক্তি মালিকানায় থাকার চেয়ে জাদুঘরে থাকাটাই শ্রেয়। কারণ এগুলো জাহাজডুবির ঘটনার একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করে, যেখান থেকে অনেক কিছু জানা যায়।
উল্লেখ্য, ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল সমুদ্রে যাত্রা করে টাইটানিক। ১৫ এপ্রিল জাহাজটি বরফের চাঁইয়ে ধাক্কা লেগে ডুবে যায়। এতে ৮৩২ যাত্রী ও ৬৮৫ জন ক্রুসহ দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারান। জাহাজটিতে সব মিলিয়ে দুই হাজার দুইশরও বেশি মানুষ ছিলেন।